ফের পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান! জনি ডেপ কি ফিরছেন?
বিখ্যাত হলিউড সিনেমা 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান'-এর প্রযোজক জেরি ব্রুকহেইমার সম্প্রতি কমিকবুক.কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার বর্তমান পরিকল্পনা হলো এই প্রিয় ডিজনি অ্যাডভেঞ্চার ফ্র্যাঞ্চাইজটি 'রিবুট' (পুনরায় চালু করা) করা।
এর আগে এই ফ্র্যাঞ্চাইজের পাঁচটি চলচ্চিত্র ৪.৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল।
নিজের হিট ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা প্রশ্ন করা হয় ব্রুকহেইমারকে। যার মধ্যে টম ক্রুজ অভিনীত 'টপ গান সিরিজটি অন্যতম।
এর জবাবে তিনি বলেন, এটা বলা কঠিন। তবে আমরা 'পাইরেটস' পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছি। এটি শুরু করা অপেক্ষাকৃত সহজ, কারণ একাজে নির্দিষ্ট অভিনেতাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
ব্রুকহেইমারের এই মন্তব্যের ফলে ধারণা করা হচ্ছে পরবর্তী 'পাইরেটস' চলচ্চিত্রে হয়ত সম্পূর্ণ নতুন চরিত্রের অবতারণা করা হবে। যার মানে জনি ডেপ ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো হিসেবে নাও ফিরতে পারে।
ডেপ এ পর্যন্ত 'পাইরেটস' ফ্র্যাঞ্চাইজের পাঁচটি সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন।
মাজিন গত বছর লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেছিলেন, 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান ৬'-এর স্ক্রিপ্টটি এতটাই অদ্ভুত যে তিনি অবাক হয়েছেন যে ডিজনি কীভাবে এতে সই করেছে।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম তারা এটি কেনার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এর কাহিনি খুব অদ্ভুত। কিন্তু তারা এটি কিনেছে! এরপরে (আমরা) একটি দুর্দান্ত স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম। কিন্তু এরপরই হলিউডে ধর্মঘট শুরু হয় এবং সবাই কাজে ফেরার অপেক্ষায় ছিল।'
সর্বশেষ 'পাইরেটস' সিনেমা 'ডেড মেন টেল নো টেলস' মুক্তি পায় ২০১৭ সালে।
হলিউড চলচ্চিত্র জগতে অন্যতম বিখ্যাত একটি ফ্র্যাঞ্চাইজ হলো 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান'। ২০০৩ সালে 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: দ্য কার্স অব ব্ল্যাক পার্ল' দিয়ে শুরু, এরপরে একে একে আরও চারটি সিনেমা তৈরি হয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজের। আর প্রতিটি ছবিতেই প্রধান চরিত্র 'ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো'র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জনি ডেপ।
জলদস্যু সেজে কখনো যুদ্ধংদেহি, আবার কখনো হাস্যকর কাণ্ডকারখানা করে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন জনি ডেপ। তাই 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' সিনেমা মানেই ডেপের বিকল্প কিছু ভাবতে পারেন না ভক্তরা। সর্বশেষ ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: ডেড ম্যান টেল নো টেলস' চলচ্চিত্রেও নিজের অভিনয় জাদুতে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন ডেপ।
এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে জনি ডেপের প্রাক্তন স্ত্রী, হলিউড অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের মামলাকে কেন্দ্র করে। ২০১৮ সালে ডেপের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন অ্যাম্বার হার্ড। এ উপসম্পাদকীয় প্রকাশের পর 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' অভিনেতাকে হলিউডের ক্যান্সেল-কালচারের শিকার হতে হয়। তাকে হলিউডের বহু প্রযোজক-পরিচালক বর্জন করেন এবং হাতে থাকা অনেক সিনেমার প্রস্তাব ছুটে যায়।
আর এসব সিনেমার মধ্যে একটি ছিল পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজের ষষ্ঠ সিনেমা।
অ্যাম্বার হার্ডের অভিযোগকে ঘিরে ডিজনি জনি ডেপকে এ ফ্র্যাঞ্চাইজ থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
পরে অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে পালটা ৫০ মিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করেন। গত বছরের এপ্রিলে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় শুনানি শেষে এ মামলায় কার্যত জয়লাভ করেন ডেপ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অ্যাম্বার হার্ড।
এরপর থেকেই সব জায়গায় জনি ডেপের ধন্য ধন্য পড়ে যায়। মামলায় জয়লাভের পর থেকে জনি ডেপের ক্যারিয়ার নতুন মাত্রা নিয়েছে। যারা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তারা আবার নতুন করে ডেপকে কাজে নিতে চাইছেন। আলোচিত এ মামলার পর থেকে ডেপ বেশকিছু সিনেমায় চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন।
মামলার রায় আসার কিছুদিন পরেই ডেপের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' ফ্র্যাঞ্চাইজে ফেরাতে চেয়েছিল ডিজনি। কিন্তু জনি ডেপ সোজা 'না' বলে দিয়েছিলেন। এমনকি মামলার শুনানির সময়ই অভিনেতা বলেছিলেন, ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়েও তিনি ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর ভূমিকায় অভিনয় করবেন না!
এখনও পর্যন্ত নিজের কথায় অনড় রয়েছেন ডেপ। আর সে কারণেই থেমে ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজের ষষ্ঠ ছবির কাজ! এদিকে দর্শকরাও ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো রূপে অন্য কাউকে দেখতে নারাজ। তাই রীতিমতো বিপদেই পরেছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজের প্রযোজক ব্রুকহেইমার।
তাই 'পাইরেটস' ফ্র্যাঞ্চাইজের পরবর্তী সিনেমায় ডেপ থাকবে কি থাকবেন না তা এখনও অমীমাংসিত।
তবে যাই হোক না কেন, ফ্র্যাঞ্চাইজের প্রযোজক ব্রুকহেইমার এবার জানিয়েই দিলেন, তারা এটি পুনরায় শুরু করবেন এবং সিনেমাটি প্রথমে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হবে।
পাঁচটি 'পাইরেটস' চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটি বিশ্বব্যাপী ৬৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছে। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া 'ডেড ম্যানস চেস্ট' এবং ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া 'অন স্ট্রেঞ্জার টাইডস' এই সিনেমা দুটি ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা সিনেমার তালিকায় নাম লিখিয়েছিল।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি