মাত্র একদিন স্কুলে যান লতা! বর্ণমালা শিখেছিলেন বাড়ির পরিচারকের কাছ থেকে
ঠিক এক সপ্তাহ আগে রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতের নাইটিঙ্গেল খ্যাত লতা মঙ্গেশকর। সেদিন সন্ধ্যায় পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় এই 'ভারতরত্নে'র।
ভারতের সংগীতশিল্পে বিগত সাত দশক ধরে রাজত্ব করেছেন প্রয়াত কিংবদন্তি গায়িকা। অথচ তিনি নাকি মাত্র একদিনের জন্য স্কুলে গিয়েছিলেন!
ছোট বোন আশা ভোঁসলেকে সাথে নিয়ে প্রথম দিন স্কুলে যান লতা। তখন আশার বয়স ছিল মাত্র দশ মাস। স্কুলের শিক্ষক এতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এরপরই আর রাগ করে স্কুলমুখো হননি সুর সম্রাজ্ঞী।
বাড়ির পরিচারকের কাছ থেকে মারাঠি বর্ণমালা শিখেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। তিনিই লতাকে প্রাথমিক বিষয়গুলো পড়তে এবং লিখতে শিখিয়েছিলেন। পরিচালক-লেখক নাসরীন মুন্নী কবিকে এসব জানিয়েছিলেন খোদ লতা।
পরবর্তীকালে সেগুলো লতা মঙ্গেশকরের আত্মজীবনী 'লতা মঙ্গেশকর: ইন হার ঔন ভয়েস'-এ লিখেছিলেন নাসরীন মুন্নী কবি।
সুর-সম্রাজ্ঞী বলেছিলেন, "আমার বয়স তখন তিন-চার বছর হবে, আমাদের পরিচারক বিঠাল তখন কিশোর। সে-ই আমাকে মারাঠি বর্ণমালা লিখতে এবং পড়তে শিখিয়েছিল। বাড়িতেই মারাঠি শিখেছিলাম।"
লতা অবশ্য এর আগে কিছু নার্সারি ক্লাসে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন, "শিক্ষক শ্রী গণেশজি ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতেন এবং আমি নিখুঁতভাবে কপি করতাম। আমি ১০-এর মধ্যে ১০ পাই।"
সেই সময়ে, গায়িকার মামাতো বোন বাসন্তী মহারাষ্ট্রের সাংলিতে তাদের বাড়ির ঠিক বিপরীতে একটি মারাঠি-মাধ্যম স্কুলে পড়তেন। কখনও কখনও তিনি তার তুতো বোনের সঙ্গে পড়াশোনা করতেন পাশে বসে। বাসন্তীর গানের ক্লাসের সময়ও লতা তার তুতো বোনের শিক্ষকের গান মন দিয়ে শুনতেন।
ভারতীয় নিয়োগী বুকস প্রকাশনার বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, একদিন ওই শিক্ষিকা লতাকে দেখে তার তুতো বোনকে প্রশ্ন করেন, "ও কে?" সেই সময় নাকি গায়িকা লাফিয়ে উঠে উত্তর দেন, "আমি মাস্টার দীননাথের মেয়ে!" তিনি বলেন: "উনি একজন দুর্দান্ত গায়ক। তুমি কি গাইতে পার?"
গায়িকা জানিয়েছিলেন, তিনি মালকাউন, হিন্দোলের মতো অনেক রাগ গাইতে পারেন।
"আমাকে সোজা স্টাফ রুমে নিয়ে গেলেন যেখানে সমস্ত শিক্ষক বসে ছিলেন এবং আমাকে গান গাইতে বললেন। তাই হিন্দোলের ওপর ভিত্তি করে একটা ক্লাসিক্যাল গান গেয়েছিলাম। আমার বয়স তখন চার কি পাঁচ।"
একই দিনে লতার একই স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল, আশার বয়স তখন প্রায় ১০ মাস। স্মৃতির সরণি হেঁটে গায়িকা জানিয়েছিলেন, "আমি ওকে কোলে করে আমার স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। ক্লাসে ঢুকে আশাকে কোলে নিয়ে বসলাম। শিক্ষক দৃঢ়ভাবে বললেন: 'এখানে শিশুদের প্রবেশ নিষেধ।' খুব রাগ করে উঠে পড়েছিলাম। আশাকে কোলে নিয়ে চলে এসেছিলাম, আর ফিরে যাইনি।"
তিনি তুতো বোন ইন্দিরার কাছ থেকে এবং পরে লেখরাজ শর্মা নামে মুম্বাইতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে হিন্দি শিখেছিলেন। এরপর উর্দু, বাংলা এবং কিছুটা পাঞ্জাবিও শিখেছিলেন। লতা তামিলও শেখার চেষ্টা করেছিলেন এবং সংস্কৃতও বুঝতে পারতেন।