ঠোঁটে চোট, বমি, হোটেলের রুমে পড়ে যান- ময়নাতদন্ত হবে কেকে’র মরদেহের
'হাম রাহে ইয়া না রাহে কাল, কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পাল'… প্রজন্মের পর প্রজন্ম বুঁদ থেকেছে তার গানে। গান ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান, আর গান গাইতে গাইতেই চলে গেলেন তিনি। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বলিউডের তারকা গায়ক কৃষ্ণকুমার কুনাথ, যাকে সকলে চেনে কেকে নামে।
কলকাতায় গেছিলেন দুটি কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে! মঙ্গলবার গুরুদাস কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুল মঞ্চে পারফর্ম করেন কেকে। এদিন সন্ধ্যায় গায়ক নজরুল মঞ্চে প্রবেশ করেন সন্ধ্যা ৬.৪৫ নাগাদ। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে, এমনকি লাঠিচার্জ করা হয়, ফায়ার স্টিংগুইশার দিয়ে গ্যাস স্প্রে করা হয় বলেও দর্শকদের একাংশের অভিযোগ।
পরবর্তী সময়ে নজরুল মঞ্চের অডিটোরিয়ামের সব গেট খুলে দেওয়া হলেও উপস্থিত দর্শকদের একাংশের অভিযোগ হলের ভিতরের এসি সঠিকভাবে কাজ করছিল না এবং সেই অস্বস্তিকর পরিবেশেই গায়ক অসুস্থবোধ করছিলেন বলে তাদের ধারণা।
মঞ্চে যে কেকে অস্বস্তিবোধ করছিলেন, তা স্পষ্ট তার শেষ স্টেজ শোয়ের ভিডিওতেও। কখনও তাকে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে দেখা যায়, কখনও আবার ইশারায় সহযোগীদের স্পটলাইট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি, এমনকি পারফরম্যান্সের মাঝে ব্যাকস্টেজে গিয়ে কিছুক্ষণের ব্রেকও নেন তিনি। তবে তার অসুস্থতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই করতে পারেনি সহযোগীরা। রাত নয়টা নাগাদ মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে হোটেলে পৌঁছান গায়ক। সেখানেই হোটেলকর্মীদের অসুস্থতার কথা জানান।
হোটেল সূত্রে খবর, রুমে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শিল্পী। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ইমার্জেন্সি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে হাসপাতাল সূ্ত্রে জানা গেছে, ঠোঁটে চোট পাওয়া গেছে প্রয়াত গায়কের। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, বমি করেছিলেন গায়ক। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হওয়ায় ময়নাতদন্ত হবে কেকের মরদেহের। তবে মনে করা হচ্ছে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার।
১৯৬৮ সালের ২৩শে আগস্ট দিল্লির এক মালায়ালি পরিবারে জন্ম এই সংগীতশিল্পীর। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন জিঙ্গেল গায়ক হিসাবে। বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর আগে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিজ্ঞাপনী জিঙ্গেল গেয়েছিলেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে বলিউডে কেকের উত্থান। প্রথম ব্রেক সালমান-ঐশ্বরিয়ার 'হাম দিল দে চুকে সনম'-এর 'তাড়াপ তাড়াপ'। যদিও এর আগে 'মাচিস' ছবিতে 'ছোড় আয়ে হাম' গানটির কিছু অংশ গেয়েছেন তিনি।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় কেকের সলো অ্যালবাম 'পাল'। 'আপকি দুয়া', 'ইয়ারি' থেকে টাইটেল ট্র্যাক 'পাল'- প্রত্যেকটি গান কালজয়ী।
নতুন শতাব্দীতে বলিউডকে, বলিউড সংগীতপ্রেমীদেরকে একাধিক মন মাতানো গান উপহার দিয়েছেন তিনি। কিশোর কুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন কেকে। হিন্দি ছাড়াও বাংলা, তামিল, তেলেগু, মালায়ালম, গুজরাটি সহ একাধিক ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। ভারতীয় পপ ও রক মিউজিকে আলাদা করে নিজের পরিচয় তৈরি করেছিলেন কেকে।
'আঁখো মে তেরি', 'যারা সা', 'খুদা জানে', 'তুহি মেরি শব হ্যায়', 'দিল ইবাদাত', 'ক্যায়া মুঝে প্যায়ার হ্যায়'-সহ অজস্র হিট গান দর্শকদের উপহার দিয়েছেন কেকে।
অজস্র ভক্তকে কাঁদিয়ে মঙ্গলবার রাতে চলে গেলেন কেকে। কেকের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা ভারতের সঙ্গীতজগত, শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
- সূত্র-হিন্দুস্তান টাইমস