অভিনেতা থেকে ফুড ভ্লগার হওয়ার গল্প
একসময় ছিলেন দাপুটে অভিনেতা। নাটক-চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সব মাধ্যমেই ছড়িয়েছেন অভিনয়ের আলো। এখন অবশ্য নাটকে কম পাওয়া গেলেও ইউটিউব ফেসবুকে প্রচুর উপস্থিতি তার। বলছি অভিনেতা থেকে ইউটিউবার হয়ে যাওয়া আদনান ফারুক হিল্লোলের কথা। ইউটিউবে নিয়মিত ফুড ভ্লগিং করেন। সারা দুনিয়ার বাঙালি তো বটেই, ভিন্ন ভাষার মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।
বদলে যাওয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে ক'দিন আগে কথা হয় হিল্লোলের সঙ্গে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডান্ডের কাছে তিনি বলেছেন বিস্তারিত।
শুরুতেই জানতে চাই, অভিনয় থেকে হুট করে ফুড ভ্লগার হয়ে যাওয়ার রহস্য কি?
তিনি বলেন, 'একজীবনে আমি অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছি। সেগুলোতে কাজ করে কি হয়েছে? গিয়েছি, অভিনয় করেছি, তারপর কিছু টাকা নিয়ে চলে এসেছি। কিন্তু সেগুলোর ইন্টেলেকচুয়াল রাইটস তো আমার নাই। এই অবস্থায় আমি চিন্তা করলাম এমন কিছু করতে হবে যেটা আমার আইডেন্টটিটি তৈরি করবে এবং সব কাজের রাইটসও আমার থাকবে। পাশাপাশি একটা কনটেন্ট ব্যাংকও তৈরি হবে। এসব কিছু ভেবেই মনে হলো এই ফুড ভ্লগিংটা শুরু করি। নিজে খেতেও পছন্দ করি। এসব চিন্তা থেকেই শুরু করা।'
তবে এলাম-দেখলাম-শুরু করলাম ব্যাপারটা এমন হয়নি। অনলাইন দুনিয়ায় নিজের শুরুর দিকের গল্প মেলে ধরেন হিল্লোল। ঘটনাটা ২০১৭ সালের দিকে। ঘরে একটা পুরনো ডিএসএল আর ক্যামেরা ছিলো। কোনো বুম ছিলো না। ক্যামেরার বডিতে সাউন্ড রেকর্ড করে একসঙ্গে চারটা এপিসোড বানিয়ে ফেলেন 'ডাইন আউট ইউথ হিল্লোল' নামের ইউটিউবের চ্যানেলের জন্য। সেই ভিডিও ওই বছরের বিভিন্ন সময়ে ছাড়েন তিনি। অনলাইনে ছাড়ার পর হিল্লোল খেয়াল করেন, এ বিষয়ে এই দেশে ইউটিউবের মার্কেটটা একেবারে ফাঁকা। বাংলা ভাষায় এই ধরনের কাজ নেই। দেশের বাইরে দু'চারজন করছেন। এসব কারণে ভিডিওতে ভিউ হতে থাকে। আগ্রহ বেড়ে যায় হিল্লোলের। তাই ২০১৮ সালে পুরোদমে শুরু করেন খাবার নিয়ে ইউটিউবিং।
এ প্রসঙ্গে হিল্লোল বলেন, 'ওই সময় দেশের বাইরে গেলেও মানুষ আমাকে চিনছে। কথা বলতে আসছে। এতদিন নাটক করেছি, কিন্তু বাইরে গেলে কেউ সেভাবে চিনত না। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভালোলাগা শুরু হয়েছে। ইউটিউবের কমেন্ট বক্সে তারা নানা কিছু লিখছেন। সেসব আমার কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।'
হিল্লোল বলেন, 'ওই সময় আমি খেয়াল করি ইন্ডিয়াতেও তেমন কেউ ফুড ভ্লগিং শুরু করেনি। তখন আমার মনে হলো আমার ভিউয়াররা যে এলাকায় বেশি সেসব এলাকায় গিয়ে সিলেকটিভ জায়গায় ভিডিও করতে পারি। তাই একাই রওনা দিলাম। সেখানে গিয়ে সোম্য নামের একজন ব্লগারের সাথে পরিচয় হয়। তাকে দিলাম ক্যামেরা ধরতে। দু'জন মিলে প্রায় ২০-২২টা ভিডিও করলাম। তারপর আপ করা শুরু করলে দেখা যায় ওরও সাবস্ক্রাইব বাড়া শুরু হয়েছে আমারও। এখন তো দেশে-বিদেশে সমান তালে ভিডিও করি। সাবস্ক্রাইবারও বাড়ছে।'
হিল্লোল জানান এখন তার চ্যানেলে সাত লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার। একেকটা ভিডিওর ভিউ মিলিয়নের উপরে।
শুরুতে স্পন্সর পাওয়া না গেলেও এখন প্রচুর স্পন্সর আসছে। বছরের শুরুতে স্পন্সর কোম্পানি তাদের সাথে যোগাযোগ করে।
জানতে চাই, অভিনয়শিল্পী থেকে ইউটিউবার বনে গেলেন। আয়ের জায়গাটা কেমন?
তিনি বলেন, 'আয় বেড়েছে এটা সত্যি। তবে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে স্বাধীনতার জায়গাটা। যেমন আমি যখন অভিনয় করতাম তখন আমাকে পরের মাসের জন্য চিন্তা করতে হতো কয়দিন শুটিং করব আর কত টাকা আসবে। কিন্তু এখন আমি জানি কয়টা ভিডিও আমার চ্যানেলে দিলে কত টাকা আসবে। যদি আমার আগামী মাসে বেশি টাকা দরকার হয় তাহলে ভিডিও বাড়িয়ে দিই। আমার নিজের চ্যানেল, নিজের স্বাধীনতা। টাকার জন্য কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না।'
ভিডিও করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান এই তারকা। একবার হায়দ্রাবাদে ঘুরতে গিয়েছেন। দারুণ এক রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছেন। সেখানে গিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। খাওয়া শেষ করে কোনোভাবেই টাকা দিতে পারেননি সেই মালিককে। অবশেষে মালিক তাকে বলেছেন, 'কখনো বাংলাদেশে ঘুরতে গেলে আপনি খাওয়াবেন।'
তবে সেই মালিক না এলেও কিছুদিন আগে হিল্লোলের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ফুড ভ্লগার টিম ফুডকা। যার নেতৃত্বে ছিলেন কলকাতার তারকা উপস্থাপক মীর আফসার আলী। দেশের নানা ধরনের খাবার চেখে দেখেছেন তারা। ঈদের আগে আগে একইভাবে আমন্ত্রিত হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন হিল্লোল। সেখানকার খাবারের ভিডিও করেছেন তিনি। দেশে দেশে ঘুরে ভিডিও করার বিষয়টা খুব উপভোগ করেন তিনি।
অবশ্য অভিনয় বাদ দেননি একেবারে হিল্লোল। কিছুদিন আগেও বিটিভির একটা নাটকে অভিনয় করেছেন। সুযোগ পেলে মাঝেমধ্যেই অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চান হিল্লোল।