চার বুয়েট শিক্ষার্থীর মেসেঞ্জার-কেলেঙ্কারি : যেসব ব্যাপারে দৃষ্টিপাত প্রয়োজন
পুরো ফেসবুক এখন বুয়েটময়। কী কারণ, তা নিশ্চয়ই জানতে বাকি নেই কারো। তবু একবার সারমর্মটা ঝালিয়ে নেয়া যাক : বুয়েট সিএসই ১৯ ব্যাচের এক ছাত্র দীর্ঘদিন ধরে মেসেঞ্জারে উত্ত্যক্ত করেছে এক মেয়েকে। মেয়েটিকে সে আপত্তিকর কথাবার্তা, ইমোজি, ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছে, যাকে যৌন হয়রানিই বলতে হয়। এক পর্যায়ে মানসিকভাবে নিপীড়িত ও সংক্ষুব্ধ মেয়েটি বাধ্য হয়েছে গোটা ঘটনা 'এক্সপোজ' বা ফাঁস করে দিতে। পরবর্তীতে দেখা গেছে, পুরো ঘটনার পেছনে ওই ছেলেটি একাই ছিল না। তার সঙ্গে ছিল তারই ব্যাচের আরো তিন সহপাঠী বা 'বন্ধু'। তাদের প্ররোচনাতেই সে এসব কাজ করে গেছে দিনের পর দিন। শেষমেশ ধরা পড়ার পরও তারা ঘটনাটিকে 'হার্মলেস প্র্যাংক', 'চাইল্ডিশ প্র্যাংক' ইত্যাদি দাবি করতে থাকে। কিন্তু তাদের এরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনে সন্তুষ্ট না হয়ে, তাদের ব্যাচের বাকি সহপাঠীরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, এবং গোটা সিএসই ডিপার্টমেন্টই তাদেরকে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন করেছে। তারা ফেসবুকেও গোটা ঘটনাটি যাবতীয় প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছে, সবাইকে আহবান জানিয়েছে অভিযুক্তদেরকে (দোষী সাব্যস্ত) সামাজিকভাবে বয়কট করার। মোদ্দা কথা, বুয়েটের সিএসই ১৯ ব্যাচ ও তাদের ডিপার্টমেন্ট ওই চারটি ছেলেকে 'একঘরে' করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। এই গোটা ঘটনার অনেকগুলো দিক রয়েছে। একে একে সেগুলো তুলে ধরছি।
প্রথমত, বুয়েটের একটি নির্দিষ্ট ব্যাচের চারজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং সেই অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিতও হয়েছে। কিন্তু কেউ যেন কোনোভাবেই মনে না করেন যে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বরং এই ঘটনা সামগ্রিকভাবে আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের একটি বিশাল অংশের মানসিকতা ও আচরণকে প্রতিফলিত করে। তারা যে মানসিকভাবে ঠিক কতটা অসুস্থ, এবং যৌন অবদমিত, সেটিরই প্রতিনিধিত্ব করছে এই নির্দিষ্ট ঘটনাটি। শুধু বুয়েটের সিএসই ১৯ ব্যাচের ঘটনাটি পাদপ্রদীপের আলোয় আসলেও, সবাই নিশ্চিত থাকতে পারেন যে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ব্যাচেই এমন এক বা একাধিক মানসিকভাবে বিকৃত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বিদ্যমান।
তাহলে এবার স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, কেন অন্য কোনো জায়গা থেকে এমন অভিযোগ আসল না? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা বা উত্তর আমরা খুঁজে পাব এই নির্দিষ্ট ঘটনাটির গণপ্রতিক্রিয়া থেকে।
এই ঘটনার আদর্শ প্রতিক্রিয়া কী হতে পারত? ওই চারটি ছেলে, যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদেরকে সামাজিকভাবে বর্জন, তাদেরকে ধিক্কার (অবশ্যই মাত্রাজ্ঞান না হারিয়ে), এসবই তো? অথচ তা কিন্তু হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এখন ট্রল ও মিমের ছড়াছড়ি, যার বেশিরভাগেরই মূল বক্তব্য এই যে, "নাকউঁচু বুয়েটিয়ানরা ধরা খেয়েছে। বুয়েটিয়ানরা সবাই একেকটা পারভার্ট।" অর্থাৎ পুরো ঘটনাকে এমনভাবে সাধারণীকরণ করা হচ্ছে যে এটি আর ওই নির্দিষ্ট চারটি ছেলের অপরাধ না। এটি যেন গোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই অপরাধ, এবং ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি এখন হুমকির মুখে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেই যেন এই ঘটনার পেছনে দায়ী।
এ ধরনের প্রতিক্রিয়া নেহাত নতুন কিছু নয়। শিক্ষার্থীদের দ্বারা যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে গণমানুষ এভাবেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সার্বিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করে, এবং ভাবমূর্তির মতো হাস্যকর ধারণাকে টেনে নিয়ে আসে। আর এই যে কোনো অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে গোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো ব্যাচ, ডিপার্টমেন্ট প্রভৃতির সম্মান ধূলিসাৎ হয়ে যায়, তাই অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্তের এবং অফিশিয়ালি তাদেরকে শাস্তি প্রদানের দৃষ্টান্ত দেখা যায় খুবই কম। মনে করা হয় যে কোনো একজন ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার লাভের চেয়ে, একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি অনেক বড় ব্যাপার। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে গিয়ে কোনো ব্যক্তিবিশেষের অপরাধকে আড়াল করা হয়, তার দোষ অস্বীকার করা হয়, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিকটিম ব্লেমিং-ও করা হয়। এভাবেই দিনশেষে ন্যায়বিচার লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় ভুক্তভোগী।
তাহলে এখন বুঝতে পারছেন তো, কেন এ ধরনের ঘটনা সচরাচর প্রকাশ্যে আসে না? কিন্তু বুয়েটের সিএসই ১৯ ব্যাচ এখানেই ব্যতিক্রম যে, তারা কেবল তাদের তথাকথিত ভাবমূর্তি নিয়ে ভাবেনি। তারা একটি অভিযোগ পাওয়ার পর সেটির গভীরে গিয়ে সামগ্রিক ঘটনাকে তলিয়ে দেখেছে, এবং প্রকৃত অপরাধী যারা, তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে শাস্তি প্রদান করেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বিরল সাহসিকতার ব্যাপার। তারা অবশ্যই জানত নিজেদের "ঘরের খবর" এমন প্রকাশ্যে আনলে তার ফলাফল কী হতে পারে। তা জেনেও তারা মুখ বুজে থাকেনি, অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেনি। তারা ঠিক তা-ই করেছে, যা তাদের করা উচিত ছিল। এখন যতই হিতে বিপরীত চিত্র দেখা যাক না কেন, সত্যি সত্যিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ পুরো বুয়েটকে নিয়েই নোংরা কাদা ছোড়াছুড়িতে মেতে উঠুক না কেন, তারপরও সিএসই ১৯ ব্যাচ যা করেছে সেজন্য তারা প্রশংসার যোগ্য দাবিদার। তাদের প্রতি রইল টুপিখোলা অভিবাদন।
এবার আসা যাক দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। এই ঘটনা আরো একবার আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা ঠিক কতটা খারাপ, এবং আমাদের তরুণ প্রজন্মের নৈতিক অবস্থান ঠিক কতটা তলানিতে নেমে গিয়েছে। হ্যাঁ, এখানে হয়তো আমি নিজেও খানিকটা সাধারণীকরণ দোষে দুষ্ট হয়ে যাচ্ছি। সে কথা অস্বীকার করছি না। তবে এ কথা তো এখন সকলেই মানতে বাধ্য যে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়লেই কোনো শিক্ষার্থী মানুষ হিসেবে বড় মনের অধিকারী হবে, তেমন নিশ্চয়তা নেই। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পড়ার পরও নৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পায়নি ওই চারজন শিক্ষার্থী।
অবশ্য, বুয়েটের মতো বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে বলেই তারা নৈতিকভাবে শক্তপোক্ত হবে, সেই আশাই বা আমরা কেন করেছিলাম? আমরা কি জানতাম না আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কেমন দৈন্যদশা? আমরা তো সকলেই জানি যে এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পুঁথিগত বিদ্যা কিংবা পরীক্ষার ফলাফলই সব। কোনো শিক্ষার মানসিক বা আত্মিক উন্নয়ন ঘটছে কি না, সে মানুষের মতো মানুষ অথবা সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠছে কি না, এসব ব্যাপারে তো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ভ্রুক্ষেপ নেই বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও। তাই তো তারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে, অথবা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে, কেবল পুঁথিগত মেধা ও পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অর্থাৎ, দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেবল সে-সব শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়, যারা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় ভালো ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে বিবেচিত। মানুষ হিসেবে তারা কেমন, সে-ব্যাপারে ভর্তি পরীক্ষা বা ভাইভা, কোথাওই খোঁজ নেয়া হয় না।
অথচ ভেবে দেখুন, ভালো ফলাফলের পাশাপাশি যদি নৈতিকতাও আবশ্যক হতো বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির যোগ্যতা লাভের জন্য, তাহলে কি বাবা-মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েকে কেবল পড়াশোনায় ভালো করতে বাধ্য না করে তাদেরকে ভালো মানুষ হয়ে উঠতেও সাহায্য করত না? অবশ্য এক্ষেত্রে দায় কেবল বাবা-মায়েরই বা হবে কেন। বাবা-মা ছেলেমেয়েদের ভিত গড়ে দেবে অবশ্যই, তবে এর পাশাপাশি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায়ও তো ভালো মানুষ হবার মন্ত্রণাগুলোর অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থী যদি সেই প্রাথমিক স্তর থেকেই বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম, সাধারণ জ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষালাভ করে থাকে, তাহলে সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই তাকে নৈতিকতার শিক্ষাও কেন দেয়া হয় না? নীতিনির্ধারকরা হয়তো এমন ভাবেন যে নৈতিকতার শিক্ষা আলাদা করে দরকার নেই, অন্যান্য বিষয়ের মাঝেই নৈতিকতার শিক্ষা নিহিত আছে। কিন্তু এখন তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি, অন্যান্য বিষয়ের মাঝে সন্নিহিত নৈতিকতার বাণী শিক্ষার্থীদের অন্তঃকরণে পৌঁছাচ্ছে না। তাই আলাদা করেও নৈতিকতা শিক্ষার একটি বিষয় থাকা খুব জরুরি, যেন শিক্ষার্থীরা নৈতিকতার প্রকৃত গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে।
এছাড়া ভুলে গেলে চলবে না গণমাধ্যমের ভূমিকার কথাও। গণমাধ্যমের কাজ শুধু মানুষকে বিনোদন দেয়া না। মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়াও তাদের কর্তব্য। আমাদের গণমাধ্যম কি সেই কর্তব্য পালন করছে? মনে তো হয় না। অন্যান্য অনেক দেশের মতো এদেশের গণমাধ্যমে তো শিশু-কিশোর বা তরুণ প্রজন্মের আত্মিক উন্নতির উপযোগী যথেষ্ট সংখ্যক চলচ্চিত্র, নাটক ইত্যাদি দেখা যায় না। ভালো মানের বইপত্রেরও এখন বড়ই অভাব। তাহলে কোথা থেকে এই নতুন প্রজন্ম পাবে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার দীক্ষা, অনুপ্রেরণা? তাই গণমাধ্যমেরও উচিত এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া, নিজেদের নীতিমালার পরিবর্তন ঘটানো, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানসিকভাবে উন্নত করে তোলার তাগিদে কেবল সস্তা-স্থূল রুচির কনটেন্ট তৈরি না করে, ভালো ভালো ও শিক্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করা।
তৃতীয়ত, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যৌনতা নিয়ে কেন এতটা বিকৃত মানসিকতার অধিকারী হয়ে উঠল, সে ব্যাপারেও ভাবনা-চিন্তার সময় এসেছে। এতদিন 'গাই টক' ধারণাটির অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেকে অবগত থাকলেও, এবার চোখের সামনে জ্বাজল্যমান সেই 'গাই টক'-এর কয়েকটি নিদর্শন। আমরা দোষী সাব্যস্ত চার শিক্ষার্থীর গ্রুপ চ্যাটে তাদের কথাবার্তা থেকে দেখেছি, প্রেম, যৌনতা, নারী ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের ধারণা কতটা ভ্রান্ত। তারা বিশ্বাস করে, মেয়েরা নাকি "ডাইরেক্ট অ্যাকশন" পছন্দ করে, পুরুষাঙ্গের ছবি দিয়ে মেয়েদেরকে মুগ্ধ করা যায়, এবং প্রেমের সম্পর্কে শারীরিক অন্তরঙ্গতা বা যৌনতা না থাকলে নাকি সেই সম্পর্ক অর্থহীন।
কীভাবে এসব ধারণার বশবর্তী হলো তারা? আপাতদৃষ্টিতে এগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি নয়। এগুলো হলো পশ্চিমা বিশ্ব থেকে প্রভাবিত বা ধার করা সংস্কৃতি। কিন্তু আরেকবার ভাবুন। আসলেই কি তা-ই? আসলেই কি এগুলো আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতি নয়? আমার তো মনে হয়, এগুলোই বাংলাদেশের প্রকৃত সংস্কৃতি। কেননা এদেশে সঠিক যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। যৌনতাকে এতটাই ট্যাবু বানিয়ে রাখা হয়েছে যে, সঠিক-স্বাভাবিক-সুস্থভাবে যৌনতা সম্পর্কে ধারণা লাভের তেমন কোনো সুযোগই এদেশের বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের নেই। তাদের এ বিষয়ক যাবতীয় ধারণা লাভ করতে হয় চটি বই, পর্ন ভিডিও ইত্যাদি থেকে। এবং বলাই বাহুল্য, চটি বই বা পর্ন ভিডিও থেকে তারা যৌনতা সম্পর্কে প্রকৃত নয়, অতিরঞ্জিত ধারণা লাভ করে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিলই নেই।
এমন ভুলভাবে যে দেশের কিশোর-কিশোরীরা যৌনতা সম্পর্কে জানে ও শেখে, তারা যে তরুণ বয়সে তাদের চিন্তার সাথে বাস্তবতার সামঞ্জস্য খুঁজে না পেয়ে যৌন অবদমন বা হতাশার শিকার হবে, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে? তাই নৈতিকতার শিক্ষার পাশাপাশি এদেশে প্রাথমিক স্তর থেকেই যৌন শিক্ষাও এখন সময়ের দাবি। যদি সেই দাবি মেটানো না হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের দৃষ্টান্ত আরো অনেক দেখা যাবে। সেই সঙ্গে দেখা যাবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সম্মতিহীন, অনিরাপদ যৌনতারও অসংখ্য উদাহরণ, যা ধ্বংস করে দেবে হাজারো জীবন।
সর্বশেষ আরেকটি কথা না বললেই নয়। দেখা যাচ্ছে, দোষী সাব্যস্ত ওই চারটি ছেলে এখন প্রচণ্ড রকমের সাইবার বুলিং এর শিকার হতে হচ্ছে। এটি কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়। ছেলেগুলো যা করেছে, সেজন্য তাদের শাস্তি প্রাপ্য। সামাজিকভাবে তাদেরকে বর্জনও করা প্রয়োজন, অন্তত কিছুদিনের জন্য। কিন্তু যেভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্তার শিকার হচ্ছে, সেটি তাদের প্রাপ্য নয়। তাদের প্রতি অনেকের রাগ, ক্ষোভ থাকতেই পারে, কিন্তু সেই রাগ-ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কোনোভাবেই উচিত না মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া। রাগ-ক্ষোভের উগ্র বহিঃপ্রকাশ ছেলেগুলোকে নতুন করে কোনো ভুল সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যার ফল ভালো হবে না। তারা নিজেরা সাইবার স্পেসের সুবিধা নিয়ে একটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করেছে, আবার এই সাইবার স্পেসই তাদেরকে হেনস্থা করে চলেছে। উভয়ক্ষেত্রেই সাইবার স্পেসের যে অপব্যবহার হচ্ছে, সেদিকে নজর দেয়া দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন, আমরা যেন একটি সুস্থ-সুন্দর সাইবার স্পেসে বিচরণ করতে পারি, নিজেদের মতামত বা ভাবের আদান-প্রদান করতে পারি।
- লেখক : জান্নাতুল নাঈম পিয়াল, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।