ট্রাম্প পরবর্তী বিভাজিত যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ঢাকা অনিশ্চয়তার কালো মেঘে
মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে আর এক নতুন অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। ১৭৭৬ সালে মার্কিনিরা যখন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তার আগে তাদের আহ্বান ছিল ব্রিটিশ রাজাকে আটলান্টিকের ওপারে যেতে হবে। এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আটলান্টিকের ওপারে স্থানান্তরিত করতে হবে।
তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজকের মতো এত শক্তিধর ছিল না। অল্প কিছু এলাকা নিয়ে ছিল তখনকার আমেরিকা। সেখানকার ব্রিটিশ বংশধারার মানুষেরাই ওই দাবি তুলেছিল। ওই দাবির গর্ভ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ইতিহাস উঠে আশে। সেই ১৭৭৬ সালে ঘোষিত স্বাধীনতার পরে আজকে ২০২১ সালে মার্কিন কংগ্রেসে ঘটতে চলছে এক নতুন নাটক।
দ্বিতীয়বারের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইম্পিচ করার ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আজকের রাত (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার) শেষে মার্কিন কংগ্রেসের ইমপিচমেন্ট পর্ব শেষ হবে। এতে রিপাবলিকান দলের আরও পাঁচজন প্রতিনিধি অভিশংসন প্রক্রিয়ায় ডেমোক্রেটদের সঙ্গে ভোট দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
ডেমোক্রেট দল ইমপিচমেন্টের জন্য পূরো প্রস্তুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয়বারের জন্য ইমপিচমেন্ট হতে যাচ্ছে। সময়ের বিবেচনায় মার্কিন সিনেট এই স্বল্প-সময়ে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল করতে পারবে কিনা- তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
ইতিহাস অনুসারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার পরেও, সিনেটে ইমপিচমেন্ট করার ব্যবস্থা আছে। যদি ইমপিচমেন্ট করা হয়, তাহলে আর কোনোদিন কোনো নির্বাচনের কোনো পর্যায়েই ট্রাম্প অংশ নিতে পারবেন না। সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাগ্যে তাই আছে । সেই কৌশলই নিয়েছে জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং তাতে কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার সায় আছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বিভক্তির জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখান থেকে ফিরে আসার রাস্তা কঠিন। আজকের ইমপিচমেন্টের পরে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর ফলাফলের পর কী ঘটতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। আবারো কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে কিনা বলা যায় না।
যদিও মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে ২০শে' জানুয়ারি আসতে আর মাত্র ৬ দিন বাকি। তখন নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ নেওয়ার কথা।
ট্রাম্প ঘোষণা করে দিয়েছেন, তিনি সেখানে থাকবেন না। ওয়াশিংটন ডিসিতে এই মুহূর্তে জরুরি অবস্থা জারি করা আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শপথ অনুষ্ঠান একটি জাতীয় উৎসব। লক্ষ মানুষ সেখানে সমবেত হয়। এই মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে না জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে কি ধরনের সমাগম হবে অথবা আদৌ সমাগমের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা?
ছয় দিন পরে সেই শপথ অনুষ্ঠানে আর কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটবে কিনা- এই মুহূর্তে তার কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। কংগ্রেস ভবনে ঘটে যাওয়া গত সপ্তাহের সন্ত্রাসী হামলার সময় সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা যে সঠিক ভূমিকা পালন করেছে তাও বলা যাবে না। ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে তাদের নিষ্ক্রিয়তা। ক্ষেত্রবিশেষে সন্ত্রাসীদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তার দৃশ্যও ধরা পড়েছে।
সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ, ন্যাশনাল গার্ড এবং অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর অবস্থান কী- তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। রাজনীতির মারাত্মক বিভাজন; সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বা অন্যদের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলেছে তা বোঝা যাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি স্বাভাবিক ব্যবস্থায় ফিরে আসে, আর অন্যদিকে এই কংগ্রেস আক্রমণকারীদের যদি বিচারের মুখোমুখি করতে পারে এবং তাদের সঠিক বিচার হয়; তাহলেই কেবলমাত্র বোঝা যাবে যে মার্কিন গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভিত্তি দুর্বল হয়নি।