পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতা ধরে রাখতে মমতার চাই বড় ব্যবধানের বিজয়
পশ্চিম বাংলার তিন-চার মাসের নির্বাচনী যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আগামী ২ মে। এ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বহু হতাহতের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরই মধ্যে এই রাজ্যের ফলাফল হিসাব-নিকাশের অংক নানান ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি অংক এমনভাবে সজ্জিত হচ্ছে, যে ২ মে'র আগ পর্যন্ত পুরোপুরি ভাবে বলা যাবে না পশ্চিম বাংলার রাজ্যের শাসন ভার কাদের হাতে অর্পিত হলো।
রাজ্যটির জনগণ মমতা ব্যানার্জি ও তার ভাইপোর উপর আস্থা রাখতে পারল কি না সেটা তখন বোঝা যাবে। গত অন্তত দু'মাস কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরাসহ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে সফর করেছেন, মানুষকে নানানভাবে আবেগ তাড়িত করেছেন, চূড়ান্ত ফলাফল কতটুকু তাদের অনুকূলে যাবে তখনই বোঝা যাবে ।
একটি কলামে আমি এর আগে বলেছিলাম বিজেপির জন্য পশ্চিম বাংলার ক্ষমতা কেন্দ্রের আগামী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই রাজ্যে যদি বিজেপি ক্ষমতায় না আসতে পারে, তবে আমরা ধারণা করতে পারি আগামী কেন্দ্র নির্বাচনে বিজেপির দুর্দিন অপেক্ষা করছে।
ভারতের পশ্চিম বাংলাসহ অন্য তিনটি রাজ্যে ভোট ফেরত ভোটারদের মতামত সংগ্রহ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং তারা তাদের হিসাব প্রকাশ করছে। সেই হিসাবে পশ্চিম বাংলায় ভোটপ্রার্থী দুই দল; রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অপরদিকে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি দারুণ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়েছে।
মমতা ব্যানার্জির ক্ষমতার কাছে থাকতে খুব পছন্দ করেন, সেকারণে একসময় বিজেপি-কংগ্রেস উভয় দল গঠিত জোটেই তার অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন এ দুই জোটের হয়ে। মজার ব্যাপার হলো; এই বিজেপির মাত্র তিনটি আসন ছিল গত বিধানসভা নির্বাচনে। প্রশ্ন জাগে; পশ্চিমবাংলায় সেই বিজেপি কেন রাজ্যের ক্ষমতা দখলের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে?
একথা নিঃসন্দেহে সবাইকে মানতে হবে যে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি দুই দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় জনগণের প্রত্যাশা মাফিক রাজ্যটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন নাই। উপরন্তু, তার দলের নানান ধরনের দুর্নীতির বিষয়গুলো সামনে এসেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল সারদা-কাণ্ড। যে সারদা কাণ্ডে জড়িত অনেক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দল ছেড়ে নিজেদের রক্ষা করার জন্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একটি সবচেয়ে আলোচিত- মুকুল রায়।
মমতা ব্যানার্জি ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে প্রকারান্তে হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সংকট ঘনীভূত করেছেন। প্রথমবার বিজয়ী হয়ে 'ইমাম ভাতা' চালু করার ভেতর থেকে মুসলিমদের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করেন, যা বিজেপি অন্যতম এক হাতিয়ার হিসেবে এই নির্বাচনে ব্যবহার করেছে । তবে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে ফলাফল যদি ৪৮ শতাংশও বিজেপির অনুকূলে আসে- তাহলে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যাবে।
ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভার এমপি কেনাবেচার ইতিহাস আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ওই ধরনের হাড্ডাহাড্ডি ফলাফলে যদি দফারফা হয় বা খুব অল্প ব্যবধানে তৃণমূল কংগ্রেস বিজয় অর্জন করে- তাহলে পশ্চিমবাংলাতেও সে কেনাবেচা হবে না এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ, নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জয়ী হওয়া মানেই সরকার গঠন নয়।
তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপিকে প্রতিহত করার জন্য ৩৪ বছরের ক্ষমতায় থাকা বাম দলগুলো সেকুলার ফোর্স ফ্রন্ট নামক যে জোট গঠন করেছিল ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেবের নেতৃত্বে তা খুব একটা কাজ করেনি। পীর আব্বাস সিদ্দিকীর জনসভায় লোক হয়েছে কিন্তু ভোটের বাক্সে আসন ছিনিয়ে নিয়ে আসার মতন চাঞ্চল্যকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ভারতের অন্য যে রাজ্যগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যে আছে তামিলনাড়ু, কেরালা, আসাম ও দক্ষিণের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুডুচেরিতে। সব রাজ্যের চূড়ান্ত ফলাফল ২ মে'তেই প্রকাশিত হবে।
- লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক