খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রয়ক্ষমতাও চ্যালেঞ্জ নিতে হবে
খাদ্য নিরাপত্তা যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে তার প্রধান দুটি টুল হলো সহজলভ্যতা ও ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা। করোনার সময় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় ক্রয়ক্ষমতার উপর এক বড় ধাক্কা এসেছে, যা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি বলেই মনে হয়। আবার করোনাতে খাদ্যপণ্যের সহজলভ্যতা থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সরবরাহ চেইনে বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে।
নতুন বছরে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে একেবারে প্রান্তিক মানুষগুলোকে নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের যাতে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় সেদিকেও সমানভাবে কাজ করতে হবে।
কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ২০২২ সালে একটি বড় ঘটনা দেখা গেছে। আমন মৌসুমে খরার কারণে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই সেচ পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করতে হয়েছে। কিন্তু এই পানিটা কিন্তু পর্যাপ্ত রিফিল হয়নি। নতুন বছর যখন শুষ্ক মৌসুমে পুরোপুরি ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করতে যাবো তখন কিন্তু একটা সংকটের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
এ জায়গায় সতর্কভাবে চিন্তাভাবনা করে আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ বোরো হচ্ছে ধানের সবচেয়ে বড় উৎপাদন মৌসুম। এই মৌসুমে যাতে কোনোভাবেই উৎপাদনের উপর আঘাত না অসে তার বন্দোবস্ত করতে হবে।
এছাড়া এখন যেটা হচ্ছে, সরকার ওএমএসএ যে বরাদ্দ দিচ্ছে সেটা খুবই অপ্রতুল। মানুষ তিনদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছে চালের গাড়ির জন্য, ছয় সাত ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে; অনেকে পণ্য না পেয়ে চলে যাচ্ছে। এর কারণ কি? কারণ হলো তাদের সক্ষমতা এতই কমে গেছে যে এখান থেকে একটু সহযোগিতার জন্য তীব্রভাবে অপেক্ষা করছে; যখন কিনা বাজারে সবকিছুর দামই বেশি।
এখানে সরকারের উচিত নিম্নআয়ের মানুষের জন্য যে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেটার সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে।
বিশ্বের সব দেশই নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা ঠিক রাখতে নির্দিষ্ট নীতি বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশেরও আগে থেকেই এ ধরনের নীতিমালা তৈরি করে রাখা উচিত। শেষ মুহুর্তে হুমড়ি খেয়ে বিদেশ থেকে চাল না কিনে আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। আসলে কতটা সংকট হতে পারে, আমাদেরকে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সেটা হিসেব করতে হবে। আবার কোন দেশ থেকে আমরা কেনাকাটা করতে পারবো সেটা আগেভাগেই নিশ্চিত করে রাখতে হবে।
কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর পণ্যগুলোর সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে আমাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এটা পলিকল্পনা করে এবছর ঠিক করতে হবে।
(এম আসাদুজ্জামান বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ)