আপনার নিজের উপর বিশ্বাস আছে তো!
আমাদের সবার লক্ষ্য, জীবনে বড় হওয়া। আমরা সবাই চাই জীবনে সফল হতে, সুখী হতে। আপনি জীবনে অনেক সফলতার মুখ দেখলেন, অনেক ধনী হলেন, কিন্তু আপনি সুখী হলেন না, আপনি আসলে সার্থক মানুষ নন।
আপনি অল্পে যদি নিজেকে সুখী ভাবতে পারেন, তাহলে বরং আপনি খানিকটা সার্থক। এখন এই যে সার্থকতা, সুখ, সমৃদ্ধি, সফলতা, এই সবকিছু আবার এক এক জনের কাছে এক এক ভাবে ধরা দেয়। কারোর কাছে সফলতা হচ্ছে, চাঁদে যাওয়া, কারোর কাছে সফলতা হচ্ছে. ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হওয়া। আবার কারো কাছে সফলতা হচ্ছে যে, একটা চায়ের দোকান যদি দেওয়া যেত!
সফলতা তা যে ক্ষেত্রেই হোক, যেকোনো ধরনের হোক, সবকিছুর জন্য আপনাকে কাজ করতে হবে এবং আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আপনার সফলতা নির্ধারণ করবেন আপনি, অর্জন করবেন আপনি। আপনার সুখ অনুভব করবেন আপনি; কারণ হচ্ছে প্রত্যেকটা সফলতার পিছনে, প্রত্যেকটা জিনিস অর্জনের পেছনে, আপনার ভূমিকা আছে।
এজন্য আমরা যখন কোন কিছু অর্জন করতে পারি তখন খুব খুশি হই। যখন অর্জন করতে পারি না তখন কষ্টে হয়, মন খারাপ হয়, মন ভেঙে যায়, হতাশায় ভুগি এরকম অনেক বিষয় আমাদের মাঝে কাজ করে। আর, যারা হতাশায় ভোগেন, যারা ব্যর্থতায় নিজেদেরকে শূন্য ভাবেন ভেঙে যান তাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়, সেটা হচ্ছে যে, তারা নিজের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলেন। নিজের উপরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।
নিজের উপরে বিশ্বাস হারাবেন না। নিজের উপরে বিশ্বাস রাখুন। তাহলে সবাই আপনাকে বিশ্বাস করবে।
আমি আসলে আরও বলতে চাইছি, আপনি বিশ্বাস করুন যে- কেউ আপনাকে আটকাতে পারবে না। নিজের উপরে বিশ্বাস হারানো পাপ এটাতো আপনি জানেনই।
আপনাকে যে অনন্য করে সৃষ্টিকর্তা তৈরি করেছেন, আপনাকে যে অসম্ভব শক্তিশালী কল্পনা শক্তি দিয়ে তৈরি করেছেন- সেটা বোঝা যাবে কখন আসলে?
সেটা বোঝা যাবে যখন আপনি আপনার ভেতরে যে সক্ষমতা আছে সেই সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারবেন। অনুধাবন করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন।
মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা। কেন আলাদা? কারণ, তার যে ব্রেন আছে সেই ব্রেন এমন ভাবে কাজ করতে পারে যে অন্য কোন প্রাণী তেমনভাবে কাজ করতে পারে না। মানুষই পারে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে, এক জায়গায় বসে সারা বিশ্বের মানুষকে নিয়ে কাজ করতে। অন্য কোন প্রাণী সেটা পারে না।
মানুষের স্বাতন্ত্র্যতা আছে। মানুষ বলতে তো সব মানুষ। কিন্তু আমি আপনি আমাদের মধ্যেও অসম্ভব ক্ষমতা আছে। আমার মতো করে আমার মধ্যে ক্ষমতা ইনবিলট করা হয়েছে। আপনাকে আপনার মতো করে ক্ষমতাগুলো দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনি আপনার ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন, আমি আমার ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো।
দেখেন, সৃষ্টিতে আমরা এতো ক্ষমতা সম্পন্ন, আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু আমরাই ছোট ছোট বিপদ দেখলে ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছি। দেখেন, সৃষ্টির অন্য কোনো প্রাণীর খাবার কোনো সংকট নেই। এদের খাবার দাবার খুব বেশি মজুদ করে রাখারও প্রয়োজন হয় না; অল্প কিছু প্রাণীর হয়। আবার অনেক মানুষ খাবারের অভাবে মারা যায়।
তাহলে, এই যে মানুষের মধ্যে আপনি আমি মানুষ, আমরা আমাদের বেসিক নিডগুলো ফুলফিল করতে পারছি না। আমাদের এই বিশাল মস্তিষ্ক দিয়ে তাহলে কী হলো? আমরা আমাদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে পারছি না। এর সবচাইতে বড় একটা কারণ হচ্ছে, আমরা আমাদেরকে চিনতে পারি না। কিছু কিছু আন্ডার প্রিভিলেজ মানুষ আছে, প্রকৃতিগতভাবে কিছু সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আছে, তাদের কথা ভিন্ন।
কিন্তু, আমি এভারেজ মানুষের কথা বলছি। আমরা নিজেদেরকে চিনতে পারি না এবং চিনতে পারি না বিধায় আমরা আমাদের কাজগুলো আমাদের মতো করে করতে পারি না। আমাদের মধ্যে বিশ্বাসের প্রচণ্ড ঘাটতি থাকে।
কোনো একটা কাজে যখন আপনি ব্যর্থ হবেন বা কোনো একটা কাজ দেখে যখন আপনি ভয় পাবেন তখন আপনি নিজের উপরে হয়ত বিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলবেন। ভাববে যে, না- এটা আমি পারবো না। এটা আমার দ্বারা সম্ভব না। এই বিশ্বাস যখন হারালেন তখন আপনার দ্বারা আর ওইটা আসলেই সম্ভব না।
আপনারা কি জানেন যে, এক মায়ের সামনে তার সন্তানের উপরে গাড়ির চাকা এসে পড়েছিল। সেই ভদ্রমহিলা নিজে ওই গাড়ি উঁচু করে সন্তানকে মুক্ত করেছিল; পরবর্তীতে যদিও তার মেরুদন্ড ভেঙে গিয়েছিল। উনি তখন চিন্তাই করেন নি যে ওনার শরীরের কী হবে? তখন তার বাচ্চা বাঁচাতে হবে এটাই উদ্দেশ্য ছিল
এক মহিলার ভিতরে কীভাবে এত বড় শক্তি আসলো যে, নিজ শক্তি দিয়ে সে গাড়িটাকে উঁচু করে বাচ্চাকে মুক্ত করলো? উনি কিন্তু তখন বিশ্বাস করছিলেন যে, সেটা তিনি পারবেন। প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করেছেন এবং প্রকৃতি তাকে সাহায্য করেছে।
আপনি আমি যখন আমাদের নিজেদের উপরে প্রচণ্ড বিশ্বাস করতে পারবো পৃথিবীর সব শক্তি আমাদেরকে সাহায্য করবে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে। কথায় বলে যে, আপনি যখন মন থেকে কিছু চান তখন পুরো মহাবিশ্ব আপনাকে শক্তি জোগায়, আপনাকে সাহায্য করে মনের আশা পূরণ করার জন্যে।
তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের উপরে আমরা বিশ্বাস কেন হারাচ্ছি? ব্যর্থতা তো একটা লজিক্যাল সিকোয়েন্স। কাজ করতে গেলে আপনি ব্যর্থ হতেই পারেন। সব জিনিস আপনি পাবেন না চেষ্টা করে এটাই নিয়ম। কিন্তু, আমরা তাই চাচ্ছি, আমরা নিজেরা হতাশায় নিজেদেরকে নিমজ্জিত করছি; আমরা নিজেদেরকে দোষারোপ করছি। নিজের সেলফ স্টিম ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করছি, ধূলিসাৎ করে দিচ্ছি। আমরা নিজেদেরকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলে দিচ্ছি যে, তুমি পারবা না। রিজেক্ট করে দিচ্ছি।
এখানেই কিন্তু আমাদের মূল ক্ষতিটা। আমাদের মূল অপরাধটা এখানে। যে নিজের উপরে বিশ্বাসটা হারাচ্ছি। নিজের উপরে বিশ্বাস হারিয়ে আমি নিজের সত্তার সবটাকে চ্যালেঞ্জ করে বসছি। নিজের সব সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে বসছি। আমি যখন বলি যে আমি এটা পারবো না, তখন আমাকে দিয়ে কে এটা করায়?
কাজটা তো আপনি করবেন, কাজটা তো আমি করবো। সুতরাং নিজের উপরে বিশ্বাস হারানো যাবে না। আপনি বিশ্বাস করুন যে আপনি এটা পারবেন। এবার চেষ্টা করুন, বারবার চেষ্টা করুন, আপনি ওটা পারবেন। দুই একটা ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারেন সেটা ভিন্ন কথা। এক্সেপশন ক্যান নট বি অ্যান এক্সাম্পল।
কিন্তু, আমি আমার জীবনে দেখেছি, যেটা আমি চেষ্টা করেছি মন প্রাণ ঢেলে দিয়ে, সেটা আমি পেরেছি। একটা গ্লাস দিয়ে যদি সূর্যের আলোতে আগুন জ্বালানো যায়, তাহলে আপনার মনের শক্তি দিয়েও আপনি আপনার ব্যর্থতাকে জয় করে সফলতার পথকে সুগম করতে পারেন। নিজের উপরে বিশ্বাস রাখুন। ইউ আর সামথিং ডিফারেন্ট, ইউ আর সামথিং ভেরি স্পেশাল। সবাই ভালো থাকুন।
লেখক সাইফুল হোসেন দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট