‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বাংলাদেশের নিজেরই সমাধান করা দরকার’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারি থেকে জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে 'মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনে' জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
এ ছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
পৃথক এক ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ
আমার মনে হয় না এটি খুব বড় কোনো প্রভাব ফেলবে। আমেরিকা মাঝেমধ্যেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড খুবই খারাপ, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তার চেয়ে বেশি হয় আমেরিকাতেই। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়াতেও একাধিক দেশ আছে, যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। পাকিস্তানেও হয়। কিন্তু সেসব দেশের বিরুদ্ধে তো আমরা এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখি না।
সেই জায়গা থেকে প্রশ্ন থেকে যায়, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কোন ধরনের তথ্য পেয়েছে, কিসের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনটা হতে পারে যে তারা গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করতে চাইছে, সেটা দেখানোর জন্য কয়েকটি দেশকে বাছাই করেছে। কিন্তু বড় আকারে এর কোনো প্রভাব ফেলার কথা না। আর আমার মনে হয় না এতে করে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কেরও অবনতি ঘটবে।
তবে যেটা বললাম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়, তাই বাংলাদেশের নিজেদেরই এই সমস্যাটির সমাধান করা দরকার। নিজেদের স্বার্থেই যেকোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের ঘটনাকেই ভালোভাবেই তদন্ত করে দেখতে হবে।
সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই হয়তো না, কিছু ব্যতিক্রম আছে, তবে অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই মাদক চোরাচালানের সম্পর্ক আছে। এবং এটা তো আমেরিকার জানা প্রয়োজন যে মাদকের ব্যাপারে অনেক দেশই একেবারে 'জিরো-টলারেন্স' নীতি নেয়। তো, আমরা কি মাদককে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে দেব, না সেটার ব্যাপারে একটা কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে? সেটা যদি সবসময় আইনের আওতায় থেকে করা যেত, তাহলে তো অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব হয় না।
তাছাড়া যেটা বললাম, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও তো নিয়মিতই অনেক চোরাকারবারি মারা যাচ্ছে, এবং তারা প্রায় সকলেই নিরস্ত্র। অথচ সেসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আমেরিকা কখনো কোনো পদক্ষেপ নেয় না অথবা ভারতকে কিছু বলে না।
তো এই কথাটাই আমি আবারো বলব, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়, যার নিজস্ব সমাধান করা দরকার। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ, এদেশের জনসংখ্যা বিশাল। তবে আমি যদি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের হিসাবই দেখি, বাংলাদেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আমেরিকার চেয়ে অনেক কম। তাহলে যে সমস্যায় একটি দেশ নিজেরাই জর্জরিত, তারা যদি আগে নিজেদের সমস্যার সমাধান না করে অন্য দেশের সমস্যার সমাধান করতে চায়, তাহলে তো সমাধান হবে না। এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু হয়েই থেকে যাবে।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক।