বন্যপ্রাণী রক্ষায় প্রাকৃতিক বন রক্ষার বিকল্প নেই
জাহাঙ্গীরনগর প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এবং সাপ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন-এর উদ্যেগে গত ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ড. এ আর মল্লিক লেকচার হলে আয়োজন করা হয়'বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর ভবিষ্যৎ' বিষয়ক এক বিশেষ সেমিনার।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা ফিরোজ (উপ উপাচার্য (শিক্ষা) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।) প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোঃ আলী রেজা খান (প্রধান বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ; দুবাই সাফারি পার্ক, দুবাই।) এবং বিশেষ বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান (সভাপতি-প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)।
অনুষ্ঠানে ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, বাংলাদেশে বণ্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ এবং সংরক্ষণে ডঃ আলী রেজা অন্যতম পথিকৃত। কয়েক দশক ধরে দেশের প্রায় সব প্রাণিপ্রেমী তার কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত। আমরা আশা করব তিনি তার মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন। দেশের মিশ্র সবুজ বন, শালবন, পার্বত্য অঞ্চলের বনাঞ্চল অতি দ্রুত ধ্বংস হয়ে গেছে। বন্যপ্রাণীর আবাস কমে আসছে। প্রকৃতি রক্ষা করতে বন্যপ্রাণীদের আবাসঞ্চল বৃদ্ধি এবং সেগুলো প্রকৃত অর্থেই রক্ষা করতে না পারলে প্রাণিদের ভবিষ্যৎ সংকটাপূর্ণ। সরকারিভাবে যথাযথ পরিকল্পনা, পদক্ষেপ এবং সাধারণ জনগণকে বন্যপ্রাণীর উপকারিতা, পরিবেশে তাদের ভূমিকার ব্যাপারে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বন বিভাগ এবং বন্যপ্রাণী বিভাগ আলাদা করে দ্বায়িত্ব পরিচালনা করে সেটার প্রচেষ্টা করতে হবে।
ড. মো. আলী রেজা খান বলেন, দেশ থেকে ইতিমধ্যে ঘড়িয়াল, মিঠা পানির কুমির, বালি হাস ইত্যাদির প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে এসব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পঞ্চাশের দশকেও শালবনে ছিল বাঘ, অতীতে সেখানে হাতি, চিতা, এমনকি গণ্ডারের রেকর্ডও রয়েছে। বর্তমানে গোটা দেশেই ভাল্লুক-চিতা এসব দূর্লভ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শৃলঙ্কায় প্রাকৃতিক বন রক্ষা করা এবং বনায়ন বৃদ্ধি করা হচ্ছে ফলে বন্যপ্রাণীরা টিকতে পারছে। এদিকে আমাদের এমনকি গ্রামাঞ্চলেও আজকাল বট-শিমুল-হিজল এসব উঁচু গাছ এখন কমে আসছে, ফলে পাখির আবাসও কমছে। আমাদের অন্তত মাথায় রাখতে হবে যাতে বর্তমানে যেসব বন্যপ্রাণী আছে সেসব যেন কমে না যায়। বন-ও প্রাণী রক্ষার সমস্ত সংস্থার দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম গ্রহনের মাধ্যমে তা করা যেতে পারে। বনায়নে দেশিয় ফলজ গাছ রোপণের অভ্যাস করতে হবে। প্রাকৃতিক বন রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাকৃতিক বনের প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র কখনওই কৃত্তিম বনায়নে সম্ভব নয়।
প্রধান অতিথি ড. মো. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ১৯৭৪ সালে প্রথম বন্যপ্রাণী আইন প্রণয়ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দূর্ভাগ্যক্রমে পরবর্তী দুই দশকে এই আইন তেমন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপন ও পরিকল্পিত বনায়ন রক্ষায় পাখির প্রজাতি ও আবাস বৃদ্ধি করতে পেরেছি। দেশের বন ও প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমেই বন্যপ্রাণীদের আবাস রক্ষা করতে পারলেই বন্যপ্রাণীদের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে আমরা আশাবাদী হতে পারব।
সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রাণী এবং বন রক্ষা করতে না পারলে দেশের সার্বিক প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে না। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে সরকারি কার্যক্রম এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহনের বিকল্প নেই।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রাণিপ্রেমী, প্রাণী গবেষক, বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রিশিল্পী-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থী এবং গবেষকবৃন্দ।