শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে হয়েছে বিকট কোনো বোমা বিস্ফোরিত হলো
বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিল পাশের একটি স্কুলের শিক্ষার্থী। ১৭ বছরের ওই কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছে, বন্দুকধারীর ছোঁড়া প্রথম গুলি আবের গায়ে লাগেনি। তারপর সে দ্বিতীয়বার হামলা করে, এসময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ হয়—এরপরই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবে।
জাপানের নারা এলাকার একটি হাইস্কুলে পড়ুয়া কিশোরীটি আরও জানিয়েছে, হামলার সময় সে চারতলায় একটি প্রস্তুতিমূলক স্কুলে ছিল। এসময় নিচে রাস্তায় ভাষণ দিচ্ছিলেন আবে- যা সে স্পষ্ট দেখতে পারছিল। ভাষণ চলাকালে আততায়ী 'বাজুকা'র মতো দেখতে এক ধরনের অস্ত্রহাতে পেছন দিক থেকে আবের কাছে আসে। সে প্রথমবার যখন গুলি চালায় আবে তখনও কথা বলে যাচ্ছিলেন, এরপর ধূসর রঙা ক্যাপ পরিহিত ওই ব্যক্তি কয়েক পা পিছিয়ে এসে আবার গুলি করে। এসময় প্রাণশক্তি হারিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন আবে।
কিশোরীটি আরও জানিয়েছে, গুলি করার পর আততায়ী অস্ত্রটি ফেলে দেয় এবং দ্রুত তাকে কাবু করে হেফাজতে নেয় নিরাপত্তা কর্মীরা। এসময় একজন ব্যক্তিকে অটোমেটেড এক্সটার্নাল ডিফিব্রিলেটর যন্ত্র হাতে ছুটে আসতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হৃদপিণ্ড সচল করতে হাসপাতালে বহুল ব্যবহৃত হয় যন্ত্রটি।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই শিক্ষার্থী আরও জানিয়েছে, হামলার পর কিছু মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে, খুব সম্ভবত প্রচণ্ড মানসিক আঘাত ও ভয়ে তাদের এই অবস্থা হয়।
প্রথমে বিকট শব্দ, তারপর বিস্ফোরণ
২৬ বছরের আরেক তরুণ প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আবে যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন তার থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে নিরাপত্তা বেড়ার (গার্ড রেইল) পেছনে ছিলেন তিনি। এর এক মিনিটের কম সময়ে প্রথমে একটি বিকট আওয়াজ শোনেন, তারপর একটি বিস্ফোরণের তরঙ্গ তাকে আঘাত করে। এসময় তিনি ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, 'ভেবেছিলাম কেউ বুঝি বোমা নিক্ষেপ করেছে'।
ওই শব্দে স্তব্ধ হয়ে পড়ে চারপাশ। সবাই বিস্মিত ও হতচকিত, এরপর আবে মাটিতে লুটিয়ে পড়া মাত্র চিৎকার শুরু করে সমবেত জনতা।
আগামী ১০ জুলাই জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ নির্বাচনের এক প্রার্থীও ছিলেন ঘটনাস্থলে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া আবের দিকে ছুটে আসেন।
আশেপাশের স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলির চিকিৎসক ও নার্সরা সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী এই তরুণ জানান, তার বাড়ি জাপানের মি প্রিফেকচারে। তিনি নারায় বেড়াতে এসেছিলেন। আবে বক্তৃতাদানকালে তিনি ঘটনাক্রমে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
'ভিড়ের মধ্যে অনেক হাইস্কুল শিক্ষার্থী ছিল। আমেরিকায় অনেক গুলিবর্ষণের ঘটনার কথা শুনি। কিন্তু তা জাপানে হবে এমনটা ভাবতেও পারিনি'- যোগ করেন তিনি।
'এখনও বুক ধড়ফড় করছে'
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মধ্য তিরিশের এক ব্যক্তি বলেন, 'আনুমানিক সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমি বোমার মতো দুম করে এক বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। এরপর ঘটনাস্থলে ধোঁয়া উড়তেও দেখেছি। এরপর সেখানে অনেক অ্যাম্বুলেন্স ও দমকলের গাড়ি চলে আসে।'
তিনি বলেন, 'আবে আসছেন জেনে সেখানে অনেক মানুষের ভিড় হয়েছিল। ভাষণ শুরু আগে আগে ভিড় আরও বাড়তে থাকে।'
আবে ভাষণ দেবেন জেনে নারা এলাকায় আসেন ৫৩ বছরের এক বৃদ্ধা। বাস থেকে নেমে সোজা চলে আসেন সমাবেশস্থলে। তিনিও আততায়ীকে দেখেছেন বলে দাবি করেন।
'এক ব্যক্তিকে দেখলাম আবের দিকে এগিয়ে আসতে। তারপর দুই বার গুলির শব্দ, দুম দুম! হামলাকারী চুপ করে ছিল, সে পালানোর চেষ্টাও করেনি বা তাকে গ্রেপ্তারের সময় নিরাপত্তা কর্মীদের বাধা দেয়নি।'
বন্দুকটির গুলির কার্টিজ বেশ লম্বা ছিল এবং গুলি চালাতে হলে বন্দুকটি দুই হাতেই ধরতে হবে- এমন আকারের ছিল বলে জানান এ বৃদ্ধা।
শোক ও বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'খুব ভয় পেয়েছি। এখনও আমার বুক ধড়ফড় করছে।'
পাশেই বাসকারী আরেক ৮১ বছরের বৃদ্ধা ওই সময় তার বারান্দায় কাপড় শুকোতে দিচ্ছিলেন, তিনিও দুইবার গুলির মতো শব্দ শুনেছেন।
এরপর তিনি টেলিভিশন চালু করা মাত্রই জানতে পারেন, শিনজো আবেকে গুলি করা হয়েছে।
- সূত্র: দ্য আসাহি শিম্বুন