শীতের আগেই ইউরোপে গ্যাসের ‘স্ক্রু টাইট’! নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন তিনদিন বন্ধ রাখবে রাশিয়া
চলতি মাসের শেষদিকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের প্রধান পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম-১ দিয়ে তিনদিন সরবরাহ বন্ধ রাখবে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রম একথা জানিয়েছে। আসন্ন শীত উপলক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন জ্বালানি পুনঃমজুদের চেষ্টা করছে, তখন বড় ধাক্কা হয়ে এলো মস্কোর এ সিদ্ধান্ত।
বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছে নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন। গ্যাজপ্রম বলেছে, পাইপলাইনের একমাত্র কম্প্রেসার জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করতে হবে। আর সেজন্যই চাই অন্তত তিনদিন সময়।
সাধারণত গ্যাস পাইপলাইনে রক্ষণাবেক্ষণ ও সারাই কাজের সময়সূচি নির্ধারিত সময়ে করা হয়। কিন্তু, এবার গ্যাজপ্রম তা করছে শিডিউলের বাইরে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জ্বালানি নিয়ে মস্কো ও ব্রাসেলসের দ্বন্দ্ব যখন গভীরতর হচ্ছে–তাতে নতুন মাত্রা যোগ করলো গ্যাজপ্রমের ঘোষণা। এরমধ্যেই জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে ইউরোপে তরতর করে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি– এই বাস্তবতায় জ্বালানি রেশনিং করা এবং অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকিও উঁকি দিচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে মস্কো অন্যান্য পাইপলাইনের মাধ্যমেও ইউরোপে গ্যাস প্রবাহ কমিয়েছে।
এতে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি–জার্মানিতে জ্বালানি সরবরাহ আরও বেশি ব্যাহত হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে মস্কো থেকে আমদানি করা গ্যাসের ওপর বিপুল নির্ভরশীলতা রয়েছে বার্লিনের।
ইতোমধ্যেই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিযোগ করছে যে, জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ক্রেমলিন। মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞাই এজন্য দায়ী।
জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, 'ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সির সাথে আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি'।
জার্মানির ঘনিষ্ঠ মিত্র- আমেরিকা ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে। তাই ইউরোপের সংকট নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের মতামত জানতে যোগাযোগ করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তবে বাইডেন প্রশাসন এতে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
এর আগে গত জুলাইয়েও মেরামতির কথা বলে ১০ দিন নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনে গ্যাস প্রবাহ বন্ধ রাখে রাশিয়া। এরপরই চলতি মাসের ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর– এই তিনদিন বন্ধ রাখার ঘোষণা এলো। জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহও কমিয়েছে মস্কো।
এতে করে, চলতি চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে জার্মানির মতো সুবৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আর বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, শীতকালের জন্য জ্বালানি মজুদ গড়ার চেষ্টা।
ইউক্রেন এবং পোল্যান্ড হয়েও রাশিয়ান গ্যাস পাইপলাইন ইউরোপে পৌঁছেছে। দেশদুটির পাইপলাইন পরিচালক সংস্থা জানিয়েছে, এই পাইপলাইনে আসা রাশিয়ান গ্যাস তারা ইউরোপের অন্য দেশকে দিতে পারবে, এতে নর্ড স্ট্রিমের ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা যাবে।
জার্মানির সবচেয়ে বড় রাশিয়ান গ্যাস আমদানিকারক কোম্পানি- ইউনিপার। মস্কো সরবরাহ কমালে অন্য উৎস থেকে বেশি দামে গ্যাসের চালান কিনতে হয় কোম্পানিটিকে। এতে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটে পড়ে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিকে সংকট থেকে উত্তরণে ১৫ বিলিয়ন ইউরো দিতে হয়েছে বার্লিনকে। এপর্যন্ত ইউনিপার-ই ইউরোপের গ্যাস সংকটের সবচেয়ে বড় 'কর্পোরেট ভিকটিম'।
সার্বিকভাবে জার্মান অর্থনীতির অন্যান্য খাতের ওপরও প্রভাব পড়েছে সুদূরপ্রসারী। গত শুক্রবার প্রকাশিত জুলাই মাসের উৎপাদক পর্যায়ের মূল্য তালিকায় তার প্রতিফলন দেখা গেছে। জুলাইয়ে উৎপাদক পর্যায়ে মূল্য বছরওয়ারি ও মাসওয়ারি দুই হিসাবেই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। জ্বালানির আকাশ ছোঁয়া দামই ছিল তার নেপথ্যে।
- সূত্র: রয়টার্স