ব্রাজিলের বিতর্কিত বলসোনারোকে সরিয়ে আবার ক্ষমতায় আসবেন লুলা?
ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক সপ্তাহেরও কম সময় বাকি। এরইমধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর চেয়ে জনপ্রিয়তায় অনেক বেশি এগিয়ে আছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। বুধবার প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, লুলার চেয়ে অন্তত ১৩ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছেন বলসোনারো।
সাম্প্রতিক জরিপগুলো ইঙ্গিত দেয়, চরম ডানপন্থী বলসোনারোকে নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডেই পরাজিত করতে চলেছেন লুলা দা সিলভা।
জরিপে আগামী ২ অক্টোবর নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডের ভোটে লুলার পক্ষে রয়েছে ৪৬ শতাংশ সমর্থন; যেখানে বলসোনারোর পক্ষে রয়েছে ৩৩ শতাংশ। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও লুলার পক্ষে সমর্থন ছিল ৪৪ শতাংশ এবং বলসোনারোর পক্ষে ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বলসোনারোর বিপরীতে লুলার জনসমর্থন বেড়েই চলেছে।
২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ইনাসিও লুলা দা সিলভা। আসন্ন নির্বাচনে লুলা এবং বলসোনারো ছাড়াও আরও নয়জন প্রতিযোগী রয়েছেন। তবে জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, তাদের কারও নির্বাচিত হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।
শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা লুলা ২০১৭ সালে মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং এতে প্রায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। আর এই সুযোগেই ৪ বছর আগে বলসোনারো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন।
পরবর্তীতে, ২০১৯ সালে অবশ্য লুলাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ২০২১ সালে দেশটির শীর্ষ আদালত তার ওপর আনা অভিযোগ বাতিল করেন। এরপরে আবারও রাজনীতিতে ফেরেন লুলা। নতুন করে তার উত্থান ঘটে ব্রাজিলের রাজনীতিতে।
৭৬ বছর বয়সী ক্যান্সারজয়ী লুলা দা সিলভা নিজের শাসনামলে ব্রাজিলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তার দুই মেয়াদে দেশের লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।
অন্যদিকে, ৬৭ বছর বয়সী বিতর্কিত জাইর বলসোনারো সেনাবাহিনীর একজন সাবেক ক্যাপ্টেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ছুরি হামলার শিকার হন। সেই হামলার ফলে বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তার বিরোধীরা তাকে একজন অতি-ডানপন্থী স্বৈরশাসক হিসেবেই চিহ্নিত করেন। নিজের বিতর্কিত বক্তব্য এবং নীতির জন্য তিনি দেশে-বিদেশে সেক্সিস্ট (লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যকারী), হোমোফোবিক (সমকামী বিরোধী), পরিবেশবাদী অন্দোলন বিরোধী এবং বর্ণবাদী হিসেবে পরিচিত।
মূলত এসব কারণেই বলসোনারোর জনপ্রিয়তা ও সমর্থন লুলার চেয়ে কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডের পর অক্টোবরের ৩০ তারিখেই সম্ভাব্য দ্বিতীয় দফা বা রানঅফ নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ব্রাজিলের সংবিধান অনুযায়ী, যদি কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের ওপরে ভোট পান, তাহলে আর রানঅফ নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। প্রার্থীদের সবাই ৫০ শতাংশের নিচে ভোট পেলেই কেবল অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে লুলার সমর্থন ১০ থেকে বেড়ে ১৪ পয়েন্ট হয়েছে।
জেনিয়াল/কোয়েস্ট জরিপের তথ্যানুযায়ী, বলসোনারো সরকারের পক্ষে নেতিবাচক জনমত গত সপ্তাহের ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে। সেইসঙ্গে, এই সরকারকে পক্ষে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশের।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবার বলসোনারো এবং লুলার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। তবে জরিপের ফলাফলকে সমর্থন দিয়ে অধিকাংশ মত দিয়েছেন, শাসন ক্ষমতায় এবার লুলা দা সিলভার বসার সম্ভাবনাই বেশি। প্রবীণ এই নেতা আবারও ক্ষমতায় আসলে তা ব্রাজিলের রাজনীতিতে এক বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তনের উদাহরণ হয়ে থাকবে।
- সূত্র: রয়টার্স, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট