ভারতে লোহমর্ষক হত্যাকাণ্ড, নরবলির শিকার দুই নারী
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় দুই নারীকে নরবলি দিয়ে হত্যার সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) এক মাসের ব্যবধানে খুন হওয়া ওই দুই নারীর দেহাবশেষেরও সন্ধান মেলে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের মধ্যে এক দম্পতিসহ আরেক ব্যক্তিও রয়েছে, নরবলি দেওয়ার আগে তারা ভিকটিমদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা অভিযোগ স্বীকার করেছে এবং এনিয়ে আরও তদন্ত চলছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কেরালার এর্নাকুলামের বাসিন্দা, দুই নারী রোজেলিন ও পদ্মাকে বেশ কয়েকমাস ধরেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা রাস্তার ধারে স্টল দিয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করতেন। গত জুন মাসে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান রোজেলিন। সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন পদ্মাও। তল্লাশি করতে গিয়ে শেষমেশ বেরিয়ে আসে এক ভয়ংকর তথ্য। জানা যায়, দুই মহিলাই নরবলির শিকার হয়েছেন।
সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে, রাতারাতি বড়লোক হতেই নাকি এই দু'জনকে বলি দিয়েছে এক দম্পতি।
প্রথমে দুই মহিলার গলা কেটে খুন করা হয়। তার পর তাদের দেহ একেবারে টুকরো টুকরো করে কেটে বস্তাবন্দি করে দু'টি আলাদা আলাদা জায়গায় পুঁতে দেওয়া হয়।
বিবিসি বলছে, ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল রাজ্য– কেরালায় এমন ভয়াবহ ঘটনায় শিহরিত হয়েছে পুরো দেশের মানুষ। হয়েছে জাতীয় গণমাধ্যমগুলির সংবাদ শিরোনাম।
কোচি সিটি পুলিশ জানিয়েছে, আসামীরা হলো আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ভগবল সিং ও তার স্ত্রী লাইলা। তাদের আরেক সহযোগী ছিল ইদ্দুকি জেলার 'অতিপ্রাকৃত শক্তির চর্চাকারী'- মোহাম্মদ শফি।
আনন্দবাজার পত্রিকা পুলিশের বরাত দিয়ে জানায়, ভিকটিম রোসেলিন ও পদ্মাকে প্রচুর টাকাপয়সারও লোভ দেখানো হয়েছিল। একইসঙ্গে সিং দম্পতিকেও শফি বুঝিয়েছিলেন যে, তারা যদি ধনী হতে চান, তা হলে নরবলি দিতে হবে। আর সেই নরবলির জন্য শিকার ধরে দিতেও প্রস্তুত তিনি। আর তার পরই শুরু হয় শিকার ধরার পালা।
গত জুন মাসে এর্নাকুলাম থেকে টাকাপয়সার লোভ দেখিয়ে প্রথমে রোসেলিনকে অপহরণ করেন শফি। তার পর তাকে সিং দম্পতির বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে আটকে রাখা হয়। সেপ্টেম্বরে পদ্মা নামে আরও এক মহিলাকে ঠিক একই কায়দায় অপহরণ করেন শফি। তাকেও সিং দম্পতির বাড়িতে নিয়ে আসেন।
পুলিশ জানিয়েছে, রোসেলিন এবং পদ্মার হাত-পা বাঁধা হয়। তার পর তাদের গলা টিপে খুন করা হয়। তাদের মধ্যে এক জনের দেহ ৫৬ টুকরো করা হয়েছিল।
আজ বুধবার গ্রেপ্তারকৃতদের কোচি সিটির একটি আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তাদের তিন সপ্তাহ পুলিশি হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেন।
কোচি পুলিশ কমিশনার সিএইচ নাগারাজু বলেছেন, হত্যাকাণ্ড দুটি গত চার মাসের বেশি সময় ধরে সংগঠিত হয়েছে। 'আর্থিক স্বচ্ছলতার' আশায় কোনো তন্ত্রসাধনার অংশ হিসেবেই আসামীরা ভিকটিমদের নরবলি দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পেছনে আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা প্রাথমিকভাবে এ অনুমান করছি। এছাড়া আসামীদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেও তদন্ত করা হচ্ছে। 'ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে, সবরকম প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আমাদের ধারণা অভিযুক্তরা সাইকোপ্যাথ এবং পার্ভার্ট'।
ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলে আজো চর্চা করা হয় 'কালো জাদুর'। জনমনে বিশ্বাস আছে, এর চর্চা আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে ও গর্ভধারণে সহায়তা করে, দুরারোগ্য যেকোনো রোগ সারাতে পারে; এমনকী ঘটাতে পারে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত।
পুলিশ আরও জানায়, পথনামত্থিতা জেলায় সিং দম্পতির বাড়ির কাছে পুঁতে রাখা ভিকটিমদের খন্ডবিখণ্ড দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিকৃত দেহগুলি দেখে নিহতদের শনাক্ত করতে পারেনি তাদের পরিবার। তাই পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের ডিএনএ নমুনা ল্যাবটরিতে পাঠানো হয়েছে।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজয়ান এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, 'এই ঘটনা মানুষের চেতনাকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছে'। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে মানুষকে হত্যার এই ঘটনা 'কেরালার মতো রাজ্যে হওয়া সত্যিই যে কারো চিন্তার বাইরে'।
- সূত্র: বিবিসি, দ্য ওয়াল, আনন্দবাজার পত্রিকা