মূল্যস্ফীতির চাপে দ্বিতীয় চাকরি নেওয়ার কথা ভাবছে অর্ধেকের বেশি আমেরিকান
সেপ্টেম্বরেও চড়া ছিল মূল্যস্ফীতি, যার জেরে কমে গেছে মানুষের প্রকৃত আয়। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে একাধিক চাকরি করার কথা ভাবছেন অর্ধেকের বেশি মার্কিন কর্মজীবী। খবর ব্লুমবার্গের।
অভিজ্ঞতা ব্যবস্থাপনা সংস্থা কোয়ালট্রিকস ইন্টারন্যাশনাল ইনক-এর তৈরি করা সফটওয়্যার ব্যবহার করে ১৬ হাজার প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি কোয়ালট্রিকস যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজারের বেশি পূর্ণকালীন চাকরিজীবীর ওপর একটি জরিপ চালায়।
কোয়ালট্রিকসের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৩৮ শতাংশ কর্মী ইতিমধ্যে দ্বিতীয় চাকরি খুঁজছেন। আর ১৪ শতাংশ কর্মী দ্বিতীয় চাকরি খোঁজার পরিকল্পনা করছেন।
এছাড়া ১৮ শতাংশ কর্মজীবী প্রাপ্তবয়স্করা বলেছেন, ব্যয় কমানোর জন্য তারা এমন এলাকায় চলে গেছেন যেখানে জীবনযাত্রার খরচ কম। আরও ১৩ শতাংশ কর্মজীবী এমন এলাকায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় আছেন কর্মজীবী বাবা-মায়েরা। ৭০ শতাংশ কর্মজীবী বাবা-মা জানিয়েছেন, তাদের বর্তমান বেতন দিয়ে ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না।
গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুসারে, যেভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে তাতে একটি শিশুকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত লালনপালন করতে ৩ লাখ ডলারের বেশি ব্যয় হবে। মূল্যস্ফীতি শুরু হওয়ার আগে একটি শিশুকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত লালনপালন করতে এরচেয়ে ২৬ হাজার ডলার কম ব্যয় হতো।
প্রায় অর্ধেক কর্মজীবী বাবা-মা দ্বিতীয় চাকরি খুঁজছেন এবং তাদের কম ব্যয়ের শহরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা সন্তানহীন কর্মচারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
চাপে আছেন কর্মজীবীরা
কোয়ালট্রিকসের চিফ ওয়ার্কপ্লেস সাইকোলজিস্ট বেঞ্জামিন গ্রেঞ্জার বলেছেন, বাজেট কমে আসায় কর্মীরা নতুন চাকরি খোঁজাসহ জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটানোর উপায় খুঁজছেন। অন্যদিকে কোন কর্মচারীর চাকরি ছাড়ার সম্ভাবনা আছে এবং কেন, তা বোঝা কোম্পানিগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুই বা ততোধিক চাকরি করা নতুন নয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের যেসব কর্মী মৌলিক জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খান, তারা প্রায়ই একাধিক চাকরি করেন। তবে অনেক ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম ব্যবস্থা অনেক অফিসকর্মীর সামনে অতিরিক্ত উপার্জনের অভিনব সুযোগ খুলে দিয়েছে।
প্রযুক্তি সংস্থা জ্যাপিয়ার-এর মে মাসের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ৪০ শতাংশ আমেরিকান দ্বিতীয় চাকরি করেন, যা মহামারিপূর্বকালের চেয়ে বেশি। মহামারির আগে একাধিক চাকরি করতেন প্রায় ৩৩ শতাংশ মার্কিন।
তবে সব নিয়োগদাতা কর্মীদের দ্বিতীয় চাকরি সমর্থন করেন না। বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে দ্বিতীয় পূর্ণকালীন চাকরি করার জন্য ইকুইফ্যাক্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান দুই ডজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে।
এছাড়া সম্প্রতিক অনেক নিয়োগদাতা কর্মীদের সশরীরে অফিসের কাজে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে কর্মীদের যাতায়াত, দুপুরের খাবার, চাইল্ড কেয়ার প্রভৃতি খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। হোম অফিস করার সময় এসব খরচ বেঁচে যেত।
স্যান অ্যান্টোনিও নামক প্রতিষ্ঠানে ৯টা-৫টার চাকরি করেন ২৮ বছর বয়সি জর্ডান পার্কার। তুলনামূলক ভালো বেতনই পান এই মার্কেটিং কর্মী। কিন্তু তা দিয়েও জীবন চালাতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। ফলে জর্ডান এখন তার ডিজিটাল-মিডিয়া সেবা বাজারজাত করার জন্য নিজের ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন।
তিনি বলেন, পূর্ণকালীন চাকরির বেতন দিয়েও আমি কুলাতে পারছি না। কোনো সঞ্চয়ও করতে পারছি না।
তাই এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোম্পানি তার বেতন না বাড়ালে জর্ডান হতাশ হবেন বলে জানান।