ব্রিটিশদের লুট করা শতাধিক বেনিন ব্রোঞ্জ নাইজেরিয়াকে ফিরিয়ে দেবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
ব্রিটিশ সৈন্যদের লুট করা শতাধিক বেনিন ব্রোঞ্জ শিল্পকর্ম নাইজেরিয়াকে ফেরত দেবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৯৭ সালে ব্রিটিশরা বেনিন সাম্রাজ্য আক্রমণ করার সময় এসব শিল্পকর্ম লুট করা হয়। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাদুঘরে শিল্পকর্মগুলো সংরক্ষণ করা হয়, যার কিছু সংগ্রহ রয়েছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেনিন থেকে লুট হওয়া শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে প্রায় ১১৬ টি বেনিন ব্রোঞ্জ নাইজেরিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে; খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র জানান, "বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই নাইজেরিয়ার মিউজিয়াম ও মনুমেন্ট সম্পর্কিত জাতীয় কমিশনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ নাইজেরিয়ার সংশ্লিষ্ট কমিশনের সাথে ব্রোঞ্জগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিতে সমন্বয় করছে। প্রয়োজনে সামনে যোগাযোগের পরিসর আরও বৃদ্ধি করা হবে।"
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বেনিন সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন ওবা। ১৮৯২ সালের দিকে ব্রিটিশরা ওবাকে অনেকটা বাধ্য করে বেনিন সাম্রাজ্য ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে নিয়ে আসে। এই ঘটনার পর ওবা বুঝতে পেরেছিলেন যে খুব শীঘ্রই ব্রিটিশরা বেনিন সাম্রাজ্য দখল করে নেবে। তাই পাল্টা আক্রমণ হিসেবে ১৮৯৭ সালে ওবার সৈন্যদল ইংরেজ অফিসারদের এক ক্যারাভানে আক্রমণ করে বসে। আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে ইংরেজরা তাদের বাহিনী পাঠায় বেনিন দখল করার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, "কিছু কিছু শিল্পকর্ম আপাতত ধার হিসেবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে দেওয়া হবে। এই শিল্পকর্মগুলো শিক্ষার্থীদের পশ্চিম আফ্রিকার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে কাজে লাগানো হবে। আর যে বেনিন ব্রোঞ্জগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হবে সেগুলো নাইজেরিয়ার মিউজিয়াম ও মনুমেন্ট সম্পর্কিত জাতীয় কমিশনের মাধ্যমেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কেননা দেশ হিসেবে নাইজেরিইয়াই শিল্পকর্মগুলো বৈধ মালিক।"
১৮৯৭ সালে বেনিনে ব্রিটিশরা আক্রমণ করলে ওবা আর তার অনুসারীরা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যান। আর তখনই বেনিনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করে ব্রিটিশরা। তবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর আগে ব্রিটিশ সৈন্যরা লুটপাট করে নেয় বেনিনের অমূল্য সব শিল্পকর্ম। আর পরবর্তীতে লুটপাট করা এসব ঐতিহাসিক শিল্পকর্মগুলো সৈন্যদলেরা নিজেদের অভিযানের খরচ মেটাতে ইউরোপ ও আমেরিকায় নানা জাদুঘর ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়।
লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বেনিন শিল্পকর্মের সর্বোচ্চ সংখ্যক সংগ্রহ রয়েছে, যা ফেরতের কোনো প্রতিশ্রুতি এখনো দেয়নি লন্ডন মিউজিয়াম। নাইজেরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী লাই মোহাম্মদ চলতি বছরের অক্টোবরে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কাছে থাকা নাইজেরিয়ায় শিল্পকর্মগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
লাই মোহাম্মদ বলেন, "ব্রিটিশ মিউজিয়ামে থাকা আমাদের শিল্পকর্মগুলো তাদেরকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। কেননা ধীরে ধীরে আমাদের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। অন্য জাদুঘরগুলো যখন একে একে আমাদের শিল্পকর্মগুলো ফিরিয়ে দেবে তখন তারাও ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। প্রশ্নটা তারা ফিরিয়ে দেবে না-কি সেটা নয়। বরং প্রশ্নটা হচ্ছে, তারা কবে ফিরিয়ে দেবে সেটা।"
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কাছে থাকা লুটকৃত সম্পদ বৈধ মালিকানার দেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি উঠেছে। উল্লেখ্য যে, নাইজেরিয়াকে লুট হওয়া শিল্পকর্ম ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। বরং চলতি বছরের জুলাইয়ে জার্মানি দুটি ব্রোঞ্জ নাইজেরিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছে এবং প্রায় হাজারের মোট লুটকৃত শিল্পকর্ম নিজেদের জাদুঘর থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও গত বছরের অক্টোবরে নাইজেরিয়া থেকে ব্রিটিশ সেনাদের লুট করে আনা বেনিন ব্রোঞ্জের একটি মোরগমূর্তী ফেরত দিয়েছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন জেসাস কলেজ।