পঞ্চাশ লক্ষ গাছ লাগানোর মিশনে সেনেগালের যে ব্যক্তি
দক্ষিণ সেনেগালের এক ব্যক্তি আগামী পাঁচ বছরে ৫০ লক্ষ গাছ লাগানোর উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। খবর বিবিসির।
ইউরোপে কয়েক বছর কাজ করার পর ২০২০ সালে সেনেগালের ক্যাসামান্স অঞ্চলে ফিরে আসার পর এই আকাশচুম্বী প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন অ্যাডামা দিমের মাথায় গেঁথে যায়।
৪৮ বছর বয়সী দিমে হতবাক হয়ে যান যখন তিনি তার গ্রামগুলোতে গিয়ে দেখতে পান তার কৈশোরে যে শত শত বিশালাকার গাছের সমারোহ দেখেছিলেন, তার সামান্য কিছু অংশ রয়েছে। তিনি বিবিসিকে জানান, "কিছু গ্রামে, আপনি একটি গাছও খুঁজে পাবেন না। তারা এগুলো কেবল কেটে ফেলে কিন্তু একবারও লাগানোর কথা ভাবে না।"
সমগ্র আফ্রিকা জুড়ে বন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মরুকরণকে দায়ী করা হলেও ক্যাসামান্স নদীর এই এলাকায় বাড়ি নির্মাণ বা কাঠকয়লা তৈরির মতো নির্মাণ কাজের জন্য গাছ কাটা হয় বেশি।
দিমে এখন ক্যাসাম্যান্সে একটি স্প্যানিশ বেসরকারি সংস্থার প্রকল্প পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন এবং একজন স্বেচ্ছাসেবী কৃষি প্রশিক্ষক হিসেবেও সময় দেন। তিনি এই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ৷
সম্পদের কোন বড় উৎস না থাকায়, তিনি তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। এবং উদ্যোগটি শুরু করতে তিনি এখনো পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে ৫০০০ মার্কিন ডলার খরচ করেছেন৷
নারী শক্তি
দিমে তার লক্ষ্য পূরণের জন্য স্থানীয় গোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন, বিশেষ করে মহিলাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। এই মহিলাদেরকে কাজে লাগিয়ে যে তার লক্ষ্য পূরণ সম্ভব তা তিনি বিশ্বাস করেন।
"আপনি যদি একটি ভাল প্রকল্পের নেতৃত্ব দিতে চান তবে মহিলাদের সাথে শুরু করুন," বলে জানান মি. দিমে।
নারীদেরকে কৃষক হতে সাহায্য করার পর স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার পর তিনি গাছ লাগানোর ব্যাপারে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
"প্রথমে আমরা জানতাম না কীভাবে বীজ রোপণ করতে হয় এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কী করতে হয়। এখন আমাদের বাজারে বিক্রি করার জন্য সব ধরনের শস্য আছে এবং আমরা কারো উপর নির্ভরশীল নই। আমাদের সবার এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে এবং কেউ আমাকে বলতে পারে না আমি কী করতে পারি এবং কী করতে পারি না। এটি দুর্দান্ত," বলে জানান সাফি ইয়েতু নামের একজন নারী।
মিঃ দিমের প্রকল্পটি উনুনোকোলাল নামে পরিচিত, স্থানীয় জোলা ভাষায় যার অর্থ 'আমাদের গাছ'। খেজুর এবং তেঁতুল থেকে শুরু করে কাপোক এবং লেবু গাছ পর্যন্ত ১২ ধরণের গাছ রোপণ করা হয়েছে এখনো পর্যন্ত, কী গাছ রোপণ করা হবে তা নির্ভর করছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাহিদা এবং সেই এলাকার ভূখণ্ডের ওপর নির্ভর করে।
গত তিন বছরে ১ লক্ষ ৪২ হাজারেরও বেশি চারা রোপণ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো মি. দিমেকে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আগামী পাঁচ বছরে অবিশ্বাস্য পরিমাণ চারা রোপণ করতে হবে। তবে তিনি এবং তার সঙ্গী ইয়োলান্ডা পেরেনিগেজ সেটি নিয়ে চিন্তিত নন।
ইয়োলান্ডা পেরেনিগেজ একজন দর্জি হিসাবে কাজ করেন এবং একটি টি-শার্ট ডিজাইন করে সেগুলো ১৫ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে তহবিল গঠনে সাহায্য করেন। তার সহকর্মী রেমন্ড কোলির সাথে তিনি একটি ছোট ওয়ার্কশপে দুটো সেলাই মেশিন দিয়ে স্থানীয় কাপড় থেকে টি-শার্ট তৈরি করেন, যার মাঝখানে একটি বাওবাব গাছের ছবি জুড়ে দেওয়া। বিক্রি করা প্রতিটি টি-শার্ট থেকে ১৫টি গাছের চারার অর্থ পাওয়া যায়।
পেরিনিগেজ বলেন, "আমি বাওবাব বেছে নিয়েছি কারণ এটি একটি আফ্রিকান গাছের প্রতীক। এটা জেনে খুব ভালো লাগছে যে, এই টি-শার্টগুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, এমনকি কানাডা পর্যন্ত, কেবল গাছের প্রকল্পটিতে সাহায্যের জন্য।"