বারাণসী-ঢাকা-আসাম: চালু হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম নদী ক্রুজ
ভারতে আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করছে নরেদ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। একইসাথে দেশটির একাধিক রাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আগামী ১৩ জানুয়ারি বারাণসী থেকে আসাম পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম নদী ক্রুজের উদ্বোধন করবেন নরেন্দ্র মোদী। খবর হিন্দুস্তান টাইমস-এর।
ক্রুজটি দীর্ঘ চার হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। গোটা যাত্রাপথ সম্পন্ন করতে সময় লাগবে প্রায় ৫০ দিন। ক্রুজটি এই সফরে প্রায় ২৭টি নদী প্রণালির মধ্য দিয়ে যাবে এবং যাত্রাপথে ৫০টিরও বেশি স্টপেজে থামবে। স্টপেজগুলোর মধ্যে সুন্দরবন ডেল্টা, গঙ্গা আরতি, আসামের মায়ংয়ের কালো জাদু এবং কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের মতো পার্ক অন্যতম।
নদী ক্রুজটি ১৩ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে গাজীপুর-বক্সার হয়ে ১৭ জানুয়ারি বিহারের পাটনায় পৌঁছবে। এরপর বৌদ্ধগয়া-নালন্দা-ফারাক্কা-মুর্শিদাবাদ হয়ে ২৯ জুন কলকাতায় পৌঁছবে। একদিন বিরতি নিয়ে পরদিনই ক্রুজটি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের নামখানা-সজনেখালি হয়ে তা সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করবে। পরে সেটি মোংলা বন্দর-বাগেরহাট-মোড়েলগঞ্জ-বরিশাল-সোনারগাঁও হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পৌঁছবে।
এরপর আরিচা-টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ-চিলমারী-আসামের ধুবরি-গোয়ালপাড়া হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি গোয়াহাটিতে পৌঁছবে। পরে তা ২৬ ফেব্রুয়ারি মাজুলি আইল্যান্ড পৌঁছবে এবং ১ মার্চ আসামের ডিব্রুগড়ে গিয়ে তার যাত্রা শেষ করবে।
এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদী বলেন, 'আগে জলপথ ব্যবহার করা হত বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য। সেজন্য নদীর ধারে জনবসতি গড়ে ওঠে। শিল্পও গড়ে ওঠে নদীর ধারে। সেই জলপথকে ব্যবহার করেই পর্যটকদের নতুন "উপহার" দিতে চলেছে কেন্দ্র সরকার।'
গঙ্গা বিলাস নামের এই ক্রুজের দৈর্ঘ্য ৬২.৫ মিটার ও প্রস্থ ১২.৮ মিটার। বিলাসবহুল এই ক্রুজটিতে মোট ৮০ জন যাত্রীর থাকার জন্য ১৮ টি কেবিন রয়েছে। নদীর বুকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ক্রুজটিতে আলাদা স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ক্রুজটিতে এলইডি টিভি, স্মোক ডিটেক্টর, লাইফ জ্যাকেট, ফ্রেঞ্চ ব্যালকনি, স্পা ও ৪০ আসন বিশিষ্ট রেস্তোরাঁর মত সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য গানবাজনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় জাহাজ ও নৌপরিবহন মন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, 'ক্রুজটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশকেই বিশ্বের নদী ক্রুজ মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করবে। ক্রুজ পরিষেবাসহ উপকূলীয় এবং নদী পরিবহনের উন্নয়ন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার এবং দেশের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এই অঞ্চলে এই জাতীয় আরও পরিষেবা চালু করা হবে।'
ক্রুজটি একটি বেসরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হবে। ভ্রমণপথে ক্রুজটি বাংলাদেশ দিয়ে প্রায় ১,১০০ কিলোমিটার পথ পরিভ্রমণ করবে। মোট ৫০ দিনের যাত্রায় ক্রুজটি ১৫ দিন থাকবে বাংলাদেশে। ভারতের কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি প্রায় ১০০টি জাতীয় জলপথ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এ জলপথগুলোতে কার্গো প্রবাহের পাশাপাশি বিশ্বমানের ক্রুজগুলি চালানো হবে।