ধীরে ধীরে সেরে উঠছে ওজোন স্তরের ক্ষত, ২০৬৬ সালের মধ্যে সেরে উঠবে আশা জাতিসংঘের
সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে সুরক্ষাদানকারী ওজোন স্তর ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে বাঁচাতে মানুষের নেওয়া নানান পদক্ষেপ আশানুরূপ কাজ করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ওজোন-ক্ষয়কারী নানান পদার্থের ব্যবহার পর্যায়ক্রমিকভাবে বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার, তার ফলস্বরূপ আগামী দুই দশকের মধ্যেই বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে ওজোন স্তরের ক্ষত সম্পূর্ণভাবে সেরে উঠবে বলে আশা করছে সংস্থাটি।
বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওজোন স্তরের ক্ষতি করে এমন সব রাসায়নিক নিষিদ্ধে ১৯৮৭ সালে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, তা অবশেষে সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।
ওজোন স্তর হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি পাতলা আবরণ, যা সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মির অধিকাংশই শোষণ করে নিয়ে পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখে।
এই স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, সূর্য বিকিরণ (অতিবেগুনি রশ্মি) পৃথিবীতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। ক্ষতিকারক এই রশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে আসা শুরু হলে তা মানুষসহ সকল জীবের সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অতিবেগুনি রশ্মি ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে; এছাড়া এটি সানবার্নসহ (রোদে পোড়া) ত্বকের ক্যান্সারের মতো সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি বাড়ায়।
বিজ্ঞানীদের মতে, '৭০-এর দশক থেকে ওজোন স্তরের ক্ষয় শুরু হয়।
ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য প্রধানত দায়ী ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, যা সিএফসি নামে বেশি পরিচিত। ক্ষতিকারক এই গ্যাস সাধারণত স্প্রে ক্যান, ফ্রিজ, এবং এয়ার কন্ডিশনার থেকে নির্গত হয়।
১৯৮৫ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ওজোন স্তরে একটি ফাটল আবিষ্কার করেন। এর দুই বছরের মাথায় স্বাক্ষরিত হয় মন্ট্রিল প্রোটোকল। চুক্তিতে ৪৬টি দেশ পর্যায়ক্রমে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই চুক্তিই সফল্যের পথে এগোনোর কারণে ওজোন স্তর ধীরে ধীরে সেরে উঠছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সম্প্রতি জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্থাগুলো মিলে গবেষণা চালিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সোমবার (৯ জানুয়ারি) ডেনভারে আমেরিকান মেটিওরোলজিক্যাল সোসাইটি কনভেনশনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মন্ট্রিল প্রোটোকল আশানুরূপ কাজ করছে। তবে এর অগ্রগতি খুবই ধীরগতির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮০ সালের পূর্বে বায়ুমণ্ডলের ১৮ মাইল (৩০ কিলোমিটার) উচ্চতায় ওজোনের অবস্থা যেমন ছিল, তা ২০৪০ সালের আগে ফিরে আসবে না। সেইসঙ্গে আর্কটিকের ওজোন স্তর স্বাভাবিক হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত।
এছাড়া, অ্যান্টার্কটিকার ওপরে ওজোন স্তরে যে বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে, তা ২০৬৬ সালের আগে সম্পূর্ণভাবে সেরে উঠবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সৌর বিকিরণের বা অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে ওজোন স্তরের ক্ষয় জীবমণ্ডলের জন্য বড় সমস্যা হলেও, এটি পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ নয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরপরেও ওজোন স্তর সংরক্ষণে উদ্যোগী হতে হবে, কারণ এতে গ্রিনহাউস গ্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক কম নির্গত হয় এবং এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।