মুদ্রাস্ফীতির কারণে কিস্তিতে বই কেনার সুবিধা পাচ্ছেন মিশরীয় পাঠকেরা
মিশরীয়রা সাধারণত গাড়ি বা ওয়াশিং মেশিনের মত ব্যয়বহুল সামগ্রী কিস্তিতে কিনে অভ্যস্ত। কিন্তু বর্তমানে দেশটিতে চলমান মুদ্রাস্ফীতি যেন সব সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে। সংস্কৃতি ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ এই দেশটির পাঠকেরা সম্প্রতি কিস্তিতে বইও কেনার সুযোগ পাচ্ছেন, খবর বিবিসির।
আমদানি নির্ভর দেশ মিশরে বর্তমানে মুদ্রার মানের ব্যাপক পতন হয়েছে; যার ফলে বর্তমানে দেশটিতে মুদ্রার মান এক বছর আগের তুলনায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় খাদ্যসামগ্রীর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর সাথে সাথে প্রকাশনা শিল্পেও লেগেছে বড় এক ধাক্কা।
কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলায় গত বছরও প্রায় ২০ মিলিয়ন লোক সমাবেত হয়েছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ বছরের অবস্থা ভিন্ন। চলতি বছর কায়রো বই মেলায় আগত পাঠকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। মেলায় অংশ নেওয়া সেফসাফা পাবলিশিং হাউজের মোহাম্মদ এল বালি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে মিশরে বইকে একটি বিলাস পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এটি খাবারের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নয় এবং এ কারণেই মানুষ বই কেনার মতো 'বিলাসিতা' থেকে সরে এসে সঞ্চয় করছে।"
এছাড়াও, অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে বইয়ের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক লেখক বাধ্য হয়ে বইয়ের চরিত্র ও বর্ণনা কমিয়ে বইয়ের আকার ছোট করে আনছেন। এ বিষয়ে মোহাম্মদ এল বালি বলেন, "কাগজ ও কালির দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক টন কাগজের দাম বছরের শুরুর তুলনায় প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।"
এ অবস্থায় বইয়ের বিক্রি বাড়াতে এই অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে দেশটিতে পাঠকেরা ৯ মাসের কিস্তিতে ১.৫ শতাংশ হারে কিস্তিতে বই কিনতে পারবেন বলে জানিয়েছে মিশরীয় পাবলিশার্স এসোসিয়েশন। দেশটির জনপ্রিয় লেখক দিনা আফিফি আশা করেন, কিস্তিতে বই কেনার মতো পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বইয়ের বাজারের স্থবিরতা কমে আসবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি নিজের বইয়ের লেখার ধরনেও পরিবর্তন এনেছেন বলে জানান।
শিশুদের জন্য ফিকশন ঘরানার বই লেখেন দিনা। তিনি বিবিসিকে বলেন, "আমার বই প্রকাশে আমি খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছি। ফারাওদের নিয়ে আমার লেখা প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার বইটিকে সংক্ষিপ্ত করে ৬০ পৃষ্ঠায় নামিয়ে আনতে হয়েছে। আরও জানা যায়, বর্তমান পাঠকেরা মাত্র ৫০ থেকে ১০০ মিশরীয় পাউন্ডে বইয়ের নকল কপি কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
মিশরের একজন কবি বিবিসিকে বলেন, "এবছর সাধারণ জনগণ বই কেনার চাইতে নিজেদের খাবার জোটানো নিয়ে বেশি চিন্তিত। অথচ বই কিনতে পারলে তাদের মন পরিশীলিত হত।"
অর্থনৈতিক সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক নানা পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে অভিহিত করেছে মিশরের সরকার। একইসাথে এ অবস্থা পরিবর্তনে সরকার নিজেদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছে।