বিনিয়োগকারীদের সাথে আদানির সম্পর্কের তদন্ত করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, জানে মোদির দপ্তরও
সম্প্রতি ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি বাতিল করেছে আদানি গ্রুপ। এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া কিছু বিনিয়োগকারীর সাথে শিল্পগোষ্ঠীটির সম্পর্ক তদন্ত করছে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- দ্য সিক্যিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি)। সরাসরি অবহিত দুটি সূত্রের বরাতে একথা জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ইতঃপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শর্টসেলার– হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের শর্ট পজিশন প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বাজারমূল্যে ধস নামে। হিন্ডেনবার্গের আনীত অভিযোগগুলোর কারণে দেশটির প্রথম সারির শিল্পগ্রুপের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লির নীতিনির্ধারক মহলও। খবর রয়টার্সের
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতের পুঁজিবাজার বিধিমালা বা শেয়ার বিক্রয়ের প্রক্রিয়ায় অন্য কোনো আইনভঙ্গ হয়েছে কিনা– তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে সেবি।
২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার ব্রিক্রি স্থগিতের আগে কিছু বড় বিনিয়োগকারী সেগুলো বুক করেছিল। কিন্তু, পরে বাজারে শেয়ারের দাম আরও পড়ে গেলে এই বিক্রয় বাতিল করা হয়। মরিশাসের দুটি প্রতিষ্ঠান- গ্রেট ইন্টারন্যাশনাল টাস্কার ফান্ড এবং আয়ুশমাত লিমিটেড– অ্যাংকর ইনেভস্টর হিসেবে অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে শেয়ার বুকিংয়ে অংশ নেয়। তাদের সাথে আদানি গ্রুপের সম্পর্ক উদঘাটনে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সূত্রগুলো এসব তথ্য জানান, তাদের নাম না প্রকাশের শর্তে। তদন্তের গোপনীয়তার বজায় রাখতেই এমন শর্ত দেন তারা। অর্থাৎ, তারা সেবির কর্মকর্তা হতে পারেন এমন সম্ভাবনাই বেশি।
তারা জানান, ভারতের পুঁজিবাজার ও আর্থিক তথ্য ঘোষণার বিধিমালার আওতায়, কোনো কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বা তারই শিল্পগোষ্ঠীর ভিন্ন প্রতিষ্ঠান অ্যাংকর ইনভেস্টর হিসেবে হিসেবে শেয়ার বুকিংয়ের আবেদন করতে পারে না। ফলে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনোটি আদানি গ্রুপের সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান কিনা– সেটাই হবে তদন্তের মূল বিষয়বস্তু।
গৌতম আদানি বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। কিন্তু, গত ২৪ জানুয়ারি থেকে তার সম্পদের নাটকীয় পতন হয়েছে। এসময়ে ১০০ কোটি ডলারের বেশি শেয়ারমূল্য কমেছে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর। এর মূল কারিগর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। তাদের দাবি, অফশোর কর স্বর্গগুলো ব্যবহার করে আদানি গ্রুপের শেয়ারমূল্যে কারসাজি করা হয়েছে।
আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে পারেনি। এমনকী আদানি গ্রুপের মূল প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের সেকেন্ডারি শেয়ার অফারও সেজন্য বাতিল করতে হয়। এটা ছিল ভারতের সর্ববৃহৎ শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ।
এবিষয়ে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এবং আদানি গ্রুপ– মন্তব্যের জন্য উভয়ের সাথে যোগাযোগ করে রয়টার্স। কিন্তু, এতে তাদের কেউই সাড়া দেয়নি। গ্রেট ইন্টারন্যাশনাল টাস্কার ফান্ড এবং আয়ুশমাত লিমিটেডের কর্ত্রৃপক্ষও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
শেয়ার অফারিং ব্যবস্থাপনায় অংশ নেয় মোট ১০ বিনিয়োগ ব্যাংক, এরমধ্যে দুটি– ইলারা ক্যাপিটাল এবং মোনার্ক নেটওর্থ ক্যাপিটাল– সেবির তদন্তের আওতায় রয়েছে। গত সপ্তাহে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার কথাও জানান ওই কর্মকর্তারা।
তারা বলেছেন, শেয়ার অফার প্রক্রিয়াতে কোনো প্রক্রিয়াবিরুদ্ধ কোনো কাজ হয়েছে কিনা– সেটা যাচাই করতেই ইলোরা ও মোনার্কের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে অভিযোগ রয়েছে যে, মোনার্কে আংশিক মালিকানা ছিল আদানি গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের। এর আগেও মোনার্ক আদানি গ্রুপের শেয়ার বুকের প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। সম্পর্কের এই ঘনিষ্ঠতা বাজার-বিধির পরিপন্থী' বলে অভিযোগ করে নিউইয়র্কের এক্টিভিস্ট শর্ট সেলারটি। তারা আরও জানায়, মরিশাস-ভিত্তিক ইলোরা তাদের মোট বাজারমূল্যের ৯৯ শতাংশই আদানির স্টকে বিনিয়োগ করেছে।
মোদির দপ্তরের সাথে বৈঠক
এদিকে হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিনিয়োগকারীদের বিপুল লোকসানের কথা গতকাল শুক্রবার ভারতের উচ্চ আদালতকে জানিয়েছেন সিক্যিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) সলিসেটর জেনারেল তুষার মেহতা। এসময় তিনি বলেন, 'সেবি এনিয়ে তৎপর রয়েছে'।
ভারত সরকারের দুজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, পুঁজিবাজারে আদানি গ্রুপের বাজারমূল্য ধসের প্রভাব পড়ায় এ ঘটনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তরের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
জাতীয় রাজনীতিতেও চলছে তুলকালাম। পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলো হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আনা অভিযোগগুলো তদন্তের দাবি করেছে।
এই বাস্তবতায় দেশটির কেন্দ্রীয় কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় মোদির দপ্তরের কর্মকর্তাদের তাদের তৎপরতার কথা জানিয়েছেন। তারা সেবির সাথেও যোগাযোগ রাখছেন।