চীন কেন ব্যাপকহারে যুক্তরাষ্ট্রের তেল কিনছে?
জিরো কোভিড নীতি বাদ দেওয়ার পর চীন পুনরায় তাদের বাণিজ্য কার্যক্রম নতুন উদ্যমে শুরু করতে যাচ্ছে, যার প্রমাণ তাদের অপরিশোধিত তেল কেনার হিড়িক।
ব্লুমবার্গের তথ্যানুযায়ী, গত মঙ্গলবার চীনের সবচেয়ে বড় তেল বাণিজ্যকারী সংস্থা ইউনিপেক এবং দেশটির সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী সংস্থা সাইনোপেক উভয়েই মার্চ মাসের জন্য দশটি করে সুপারট্যাংকার ভাড়া করেছে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে অপরিশোধিত তেল আমদানির কাজে ব্যবহার করা হবে। প্রতি সুপারট্যাংকারে ২ মিলিয়ন ব্যারেল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের [মেক্সিকো] উপসাগরীয় উপকূলের টার্মিনালগুলো থেকে ট্যাংকারগুলোতে তেল নেওয়া হবে।
অপরিশোধিত তেল বাণিজ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করা কেপেলার সংস্থার ভিক্টর কাটোনা জানান, "যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের তেল কেনা এখন এই খাতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।" প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থেকে তেল বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই চীন এই সুযোগ নিয়েছে।
চীন যে পুরোদমে তাদের বাণিজ্য পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছে তার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত মাসে, যখন তারা আবুধাবিতে থাকা আপার জাকুমের কাছ থেকে কমপক্ষে ১৮টি কার্গো জাহাজ ভর্তি অপরিশোধিত তেল কেনার চুক্তি করে।
ডিসেম্বরে কোভিড সংক্রান্ত নীতিমালা বাতিল করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার পর থেকে চীনের তেলের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তেলের বাণিজ্য করা প্রতিষ্ঠানগুলোও চীনের তেলের চাহিদার দিকে তাই আলাদাভাবে নজর রাখছে।
কেপেলারের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, প্রায় ১৪টি বিশালাকারের অপরিহোধিত তেল বহনকারী ক্যারিয়ার জাহাজের প্রস্তুতি চলছে, যেগুলো মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে চীনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন যে পরিমাণ তেল আমদানি করেছে, তার প্রায় দ্বিগুণ এই পরিমাণ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের আরামকোর সিইও আমিন নাসের জানিয়েছেন, চীনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর জেট জ্বালানির চাহিদা বাড়ায় বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা আরো বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। এনার্জি অ্যাসপেক্টের বিশ্লেষক সুন জিয়ানান জানান, গ্যাসোলিন এবং জেট জ্বালানির এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে তরল জ্বালানির চাহিদা যথাক্রমে ৫০% এবং ৩০% বাড়বে। এছাড়াও তার ধারণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে কোভিড-পূর্ববর্তী তেলের চাহিদার ৯০% পূর্ণ হবে। এদিকে বিশ্লেষক মিয়া জেং জানান, শিল্পখাত এবং পরিবহন খাতের অন্যতম প্রধান জ্বালানি ডিজেলের চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়বে, কারণ চীনের সবকিছু পুরোদমে চালু করতে এখনো বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবে।
তবে চীনের এই তেল কেনা কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং আবুধাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওয়েলপ্রাইসের মতে, পেট্রোচায়না এবং সাইনোপেক রাশিয়া থেকেও কম দামে তেল পাওয়ার সুবিধা নিচ্ছে। গত মাসেই ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানিয়েছে যে, "তাদের কার্যক্রম কী পরিমাণে শুরু হবে তা অনিশ্চিত থাকলেও চীন তেলের বাড়তি চাহিদার হারের অর্ধেকের জোগান দিচ্ছে।"
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অবরোধ দিলেও ভারত এবং চীন রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করেনি। ২০২২ সালে চীন রাশিয়া থেকে প্রতিদিন ১.৭২ মিলিয়ন ব্যারেল হারে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। কেপেলারের হিসাব অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে ৫.৬২ মিলিয়ন ব্যারেল হারে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করেছে চীন।
চীন নতুন উদ্যোগে তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে আবারো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানির হার বাড়াতে চাচ্ছে তারা, যেটি কোভিড-চলাকালীন বেশ খানিকটা ব্যাহত হয়েছিল।
ইতিমধ্যেই দুটো নতুন তেল শোধনাগার তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে চীন, যেগুল দিনে ৫,২০,০০০ ব্যারেল তেল পরিশোধন করতে পারবে। এই বছরের মধ্যেই সেগুলো চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ৪ লক্ষ ব্যারেল সক্ষমতার আরো একটি শোধনাগার বছরের শেষদিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে বলে জানিয়েছে শ্যানডং ইউলং পেট্রোকেমিক্যালের এক কর্মকর্তা।
সূত্র: ইয়াহু ফাইন্যান্স, রয়টার্স, আল জাজিরা