একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় কোমল পানীয় ক্যাম্পা কোলা আবার ফিরে আসছে ভারতে
ভারতের একসময়ের জনপ্রিয় কোমল পানীয় ক্যাম্পা কোলা ফের বাজারজাত করা হবে। ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স শিল্পগ্রুপ ৫০ বছরের পুরোনো এ বেভারেজ ব্র্যান্ডটির পানীয় চলতি বছরের গ্রীষ্মেই বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। খবর বিবিসি'র।
ক্যাম্পা কোলার মালিকানা ছিল পিউর ড্রিংকস নামক একটি কোম্পানির অধীনে। গত বছরের আগস্ট মাসে ২২ কোটি রুপিতে ব্র্যান্ডটি কিনে নেয় রিলায়েন্স গ্রুপ। নতুন করে বাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা কোমল পানীয়টি কোলা, লেমন, ও অরেঞ্জ ফ্লেভারে পাওয়া যাবে।
১৯৫০-এর দশকে ভারতের বাজারে কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড হিসেবে কোকা-কোলা প্রবেশ করে। ১৯৭০'র দশক পর্যন্ত এটিই ছিল দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড। কিন্তু ১৯৭৭ সালে ভারত সরকারের নীতিগত পরিবর্তনে ধাক্কা খায় বিশ্ববিখ্যাত এ ব্র্যান্ডটি।
তৎকালীন সরকারের নীতিগত পরিবর্তন অনুসারে কোকা-কোলাকে ভারতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাদের 'গোপন ফর্মুলা' প্রকাশ করতে হতো। কিন্তু এতে রাজি না হয়ে বরং ব্র্যান্ডটি সে সময় ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়।
আর তখন কোকা-কোলা'র এ শুন্যস্থানটিই খুব ভালোভাবে দখল করে নেয় ক্যাম্পা কোলা। অল্প সময়েই ভারতজুড়ে তরুণদের মাঝে কোমল পানীয়টি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ভারত সরকারের মালিকানাধীন কোমল পানীয় 'ডাবল সেভেন' বাজারে আনা হলেও তা জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
তখন ক্যাম্পা কোলা প্রচারণার ক্ষেত্রেও কৌশলী ভূমিকা অবলম্বন করেছিল। একদিকে ব্র্যান্ডটি ভোক্তাদের আকর্ষণে কোকা-কোলার সদৃশ নাম ও লেখার ফন্ট ব্যবহার করে। অন্যদিকে 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান টেস্ট', 'টাইমস অভ ফান', 'টাইমস অভ জয়' ইত্যাদি ট্যাগলাইনে টেলিভিশন ও প্রিন্ট মাধ্যমে আকর্ষণীয় সব বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে এটি। বিজ্ঞাপনগুলোতে ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে তারুণ্য, জাতীয়তাবোধ, একতা ইত্যাদির ধারণা ফুটিয়ে তোলা হয়।
১৯৮৩ সালে ওই সময়ের তরুণ তারকা হিসেবে সালমান খানকে ক্যাম্পা কোলার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে দেখা যায়। তবে কোমল পানীয়টি যে শুধু তরুণদের পছন্দের শীর্ষে ছিল তা নয়। বরং শিশু-কিশোরদের মাঝেও ক্যাম্পা কোলা সে সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। জন্মদিনের অনুষ্ঠান কিংবা পারিবারিক যেকোনো আয়োজনে এ কোমল পানীয়টির ব্যবহার দেখা যেত।
তবে এতসব সাফল্যের মাঝেও কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ডটি নিয়ে সমালোচনাও আছে। বিজ্ঞাপন নির্মাতা আলিক পাদামশ্রী ক্যাম্পা কোলাকে অনুকরণের মাধ্যমে তৈরি করা ব্র্যান্ড হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে কলাম-লেখক সন্তোষ দেশাই মনে করেন, কোকা-কোলার অনুপস্থিতিতে ভোক্তাদের কাছে উপায় না থাকায় বাজারে একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে ক্যাম্পা কোলা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
তবে ক্যাম্পা কোলার এ উত্থান দীর্ঘদিন টেকেনি। ব্র্যান্ডটি বড়সড় ধাক্কা খায় ১৯৯০-এর দশকে, যখন দেশটির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং দেশটিতে মুক্তবাজার অর্থনীতির অধীনে বৈদেশিক কোম্পানিগুলোকে ভারতে অবাধে ব্যবসা করার অনুমতি প্রদান করেন। যার ফলে কোকা-কোলা ভারতের বাজারে ফের প্রবেশের সুযোগ লাভ করে।
একইসঙ্গে যোগ দেয় পেপসির মতো বহুজাতিক আরও কিছু কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড। শেষ পর্যন্ত এসব বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর বিপণন কৌশলের কাছে টিকতে পারেনি ক্যাম্পা কোলা। যার ফলে ধীরে ধীরে ২০০০-এর দশকে ব্র্যান্ডটি কোমল পানীয় উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
এদিকে সম্প্রতি ক্যাম্পা কোলা পুনরায় বাজারজাত করার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়স্ক ভারতীয়রা নিজেদের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের স্মৃতিচারণ করতে শুরু করেছেন। সুকান্ত খুরানা নামক এক ভারতীয় টুইটারে—কোমল পানীয়টি কিনে দেওয়ার জন্য তিনি যে দাদার কাছে বায়না ধরতেন—সেই স্মৃতির কথা লিখেছেন।
খুরানা লিখেন, 'ক্যাম্পা কোলার সঙ্গে শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যদি কোমল পানীয়টির স্বাদ আগের মতোই হয় তবে বহু মানুষের আবেগ জড়িয়ে থাকার কারণে হলেও এটি বিক্রি হবে।'
তবে শুধু আবেগের ওপর ভিত্তি করেই নয়, বরং বাজারে টিকে থাকতে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্র্যান্ডটিকে নতুনভাবে পরিচয় করানোর বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখছে রিলায়েন্স। শিল্পগ্রুপটির এক মুখপাত্র সিএনএনকে বলেন, 'নতুনভাবে ক্যাম্পা কোলা বাজারে আনার মধ্য দিয়ে আমরা সকল প্রজন্মের ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। একই সাথে দেশের বেভারেজ ব্যবসায় আলোড়ন তৈরি করতে চাই।'