ইউক্রেন যুদ্ধের গোপন মার্কিন নথি কারা ফাঁস করেছে, কেন?
সম্প্রতি মার্কিন ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের কয়েক ডজন গোপন নথি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে মানচিত্র, চার্ট ও ছবি। খবর বিবিসি'র।
বিভিন্ন টাইমলাইন ও দুর্বোধ্য সব সামরিক ভাষায় ভরপুর এসব নথির অনেকগুলোর গায়ে 'অতি গোপনীয়' লেবেল রয়েছে। এসব নথিতে ইউক্রেন যুদ্ধের বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে।
দুই পক্ষের সেনাক্ষয়ের সংখ্যা, উভয় দলের সামরিক দুর্বলতা, এবং ইউক্রেন বসন্তে আক্রমণ চালালে দুই পক্ষের তুলনামূলক শক্তির জায়গা কী — ইত্যাদি তথ্যের উল্লেখ রয়েছে ওই নথিগুলোয়।
প্রিন্ট করা নথিগুলোর ভাঁজ খুলে ছবি তুলে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটাই মার্কিন তথ্যের সবচেয়ে বড়মাপের ফাঁস। কিছু কিছু নথি মোটামুটি প্রায় ছয় সপ্তাহ পুরোনো।
পেন্টাগন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ নথিগুলো আসল।
প্রায় ১০০টির মতো নথি ফাঁস হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০টি নথি বিবিসি পরীক্ষা করে দেখেছে। ওসব নথিতে ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
নথি থেকে জানা গেছে, ইউক্রেন এক ডজেনের মতো নতুন ব্রিগেড তৈরি করছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসব ব্রিগেড নতুন আক্রমণ পরিচালনা করতে পারে।
ওসব নথিতে এ ব্রিগেডগুলো কবে নাগাদ প্রস্তুত হবে তার তথ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সব ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, ও আর্টিলারি সরঞ্জামের তালিকা রয়েছে।
একটি মানচিত্রে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ভূমির পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এছাড়া কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা নিয়েও বিশ্লেষণ রয়েছে নথিগুলোতে।
নথিগুলোতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী নিয়ে যেমন তথ্য রয়েছে, তেমনি ওয়াশিংটনের অন্য মিত্রদেশগুলো প্রসঙ্গেও আলোচনা পাওয়া গিয়েছে। ইসরায়েল থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া — নথিপত্রে এসব দেশের ইউক্রেন যুদ্ধ ও অন্যান্য সংবেদনশীল বিষয়ে নিজেদের মধ্যকার বিভিন্ন বিতর্ক ফাঁস হয়েছে।
তবে বিবিসি জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া তথ্যের অনেকাংশই আগে থেকে জানা ছিল।
যেমন, নথি অনুযায়ী ১,৮৯,৫০০ থেকে ২,২৩,০০০ রাশিয়ান সৈন্য মৃত বা আহত হওয়ার অনুমান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ইউক্রেনের জন্য এ সংখ্যা ১,২৪,৫০০ থেকে ১,৩১,০০০। এ সংখ্যাসমূহ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সাংবাদিকদের জানানো আনুমানিক সংখ্যার কাছাকাছি।
তবে নথিপত্রে সৈন্য নিহত ও আহত হওয়ার অংশে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে বেশি সৈন্য হারিয়েছে, এমনটা দেখানোর চেষ্টা ছিল নথি বিকৃত করার মাধ্যমে।
কিন্তু কারা ফাঁস করেছে এসব গোপন নথি? এবং কেন?
মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ডে প্রথমে ফাঁস হয় নথিগুলো। সেখান থেকে ফোরচ্যান ও টেলিগ্রামে ছড়ায়।
তবে এ নথিগুলোর মূল ফাঁসকারী কে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
গত ৪ মার্চ মাইনক্রাফট খেলোয়াড়দের একটি ডিসকর্ড সার্ভারে খেলোয়াড়দের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক হয়। বিতর্কের এক পর্যায়ে একজন ব্যবহারকারী লেখেন, 'এই নাও, কিছু ফাঁস হওয়া নথি দেখ।' এরপরই তিনি ১০টি গোপন নথি প্রকাশ করে দেন।
এ ধরনের ফাঁস পদ্ধতি অস্বাভাবিক হলেও একেবারে স্বতন্ত্র কিছু নয়।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যকার বাণিজ্য বিষয়ক কিছু নথি রেডিট ও ফোরচ্যানসহ অন্যান্য সাইটে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই সময় রেডিট জানিয়েছিল, ওই নথিসমূহ রাশিয়া থেকে ফাঁস করা হয়েছে।
গত বছর অনলাইন গেমারেরা সংবেদনশীল কিছু নথি ফাঁস করেন। ওয়ার থান্ডার নামক একটি গেমের খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জয়লাভ করার জন্য কিছু সামরিক নথি ফাঁস করে দেন।
কিন্তু সর্বশেষ এ ফাঁসটি অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং এর মাধ্যমে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইউক্রেন এতদিন তার 'অপারেশনাল সিকিউরিটি' রক্ষা করে এসেছে। এখন যুদ্ধের এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে এভাবে গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নাখোশ হবে দেশটি।
কিয়েভ কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য রুশ ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইনের দিকে ইঙ্গিত করলেও অনেক সামরিক ব্লগার এ ফাঁসের ঘটনাকে রাশিয়ান কমান্ডারদেরকে বোকা বানানোর জন্য পশ্চিমা চাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে এমন কোনো তথ্য নেই যেখানে ইউক্রেনের বসন্তকালীন আক্রমণের গতিপ্রকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে।