আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়ছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী
বিগত দশক দুই ধরে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে উন্নত দেশের পরিবর্তে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর দিকেই ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে বেশি।
সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অন্যান্য উন্নত দেশগুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রধান গন্তব্য হয়ে থাকলেও, বর্তমানে উচ্চশিক্ষা লাভে তুরস্ক, আর্জেন্টিনা এবং অন্যান্য দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোতে যাওয়ার আগ্রহও শিক্ষার্থীদের মাঝে কম নয়। নিক্কেই এশিয়া অবলম্বনে।
২০ বছর বয়সী রিনা লিকা আলবেনিয়ার একজন শিক্ষার্থী। প্রাথমিকভাবে তিনি ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে সব দিক ভেবে শেষ পর্যন্ত তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
"তুরস্কের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই সুনাম রয়েছে। আর তুর্কি সরকার শুধু টিউশন এবং ডরমিটরি ফি নয়, বরং জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্যেও বৃত্তি দিয়ে থাকে," বলেন আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়তে যাওয়া রিনা।
২০২০ সালে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন, যা গত ২০ বছরের তুলনায় দশগুণেরও বেশি। ইউনেস্কোর তথ্য অনুসারে, ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে তিনগুণ। এরমধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বেড়েছে জি-২০ ভুক্ত দ্রুত বর্ধনশীল কয়েকটি দেশে। এই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনাতে বিদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে প্রায় ৩৭ গুণ, মেক্সিকোতে বেড়েছে ১৯ গুণ এবং ভারতে বেড়েছে ৭ গুণ।
তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও শীর্ষে রয়েছে। ২০২১ সালে দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার। সংখ্যার দিক থেকে এর পরেই রয়েছে ইউরোপের যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলো।
উন্নত দেশগুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা বেশি হলেও মধ্যম আয়ের দেশগুলো উচ্চশিক্ষার জন্য ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ার দিক দিয়ে এসব দেশ এগিয়ে রয়েছে। তথ্য অনুসারে, বিগত ২০ বছরে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।
সাধারণত উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীরাই উচ্চশিক্ষা এবং ভালো চাকরির জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। এক্ষেত্রে তাদের বেশিরভাগেরই প্রথম পছন্দ থাকে উন্নত দেশ। তবে সম্প্রতি এই প্রবণতায় পরিবর্তন আসছে। উন্নয়নশীল দেশের অনেক শিক্ষার্থীই এখন উন্নত দেশের পরিবর্তে কাছাকাছি অবস্থিত মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দের তালিকায় রাখছেন। কারণ এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইউরোপ-আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাইতে টিউশন ফি কম এবং চাকরির সুযোগও বেশি।
২০২০ সালে আর্জেন্টিনায় প্রায় ১ লাখ ২০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাড়ি জমিয়েছেন, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। ব্রিটিশ কনসালটেন্সি কোয়াককোয়ারেলি সাইমন্ডস (কিউএস)-এর জরিপ অনুসারে, ২০২৩ সালের সেরা ছাত্রবান্ধব শহরগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের অবস্থান ২৩তম।
যদিও এই র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় বেশিরভাগ শহরই উন্নত দেশের, তবে প্রতিবেদনে আর্জেন্টিনার রাজধানীকে 'আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রমবর্ধমান সুযোগের ক্ষেত্রে গতিশীল শহর' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, জাপানেও বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। টোকিওর সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিরোশি সাতোর মতে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সম্প্রতি তরুণদের মনোভাবের কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। বিশ্বায়নের যুগে জন্ম নেওয়া অনেক তরুণ-তরুণীই এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে পড়াশোনা করতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, বিগত এক দশকে তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪গুণ বেড়ে এখন ১ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছেছে। ২০১২ সাল থেকে দেশটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর পর শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এ বিষয়ে গত ১১ এপ্রিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, "আমরা তুরস্ককে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে স্থান দিতে চাই। আর এ সময়ে তুরস্কে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১ মিলিয়নে উন্নীত হবে।"
এছাড়া, বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশ যেমন- থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত এবং অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য চীনও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।