বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পুরনো সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বের অন্যতম পুরনো সংবাদপত্র 'ভিনার সাইটুং' এর প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রিয়া সরকার। খবর ডয়চে ভেলের।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দৈনিকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্ট্রীয় সরকার এবং সংবাদপত্রটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলে আসছিল।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ফলে সুদীর্ঘ ৩২০ বছর ধরে প্রকাশিত পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
১৭০৩ সালে 'ভিনারিস্খিস ডায়ারিয়াম' নামে সংবাদপত্রটির প্রকাশনা শুরু হয়। ১৭৮০ সালে এর নাম বদলে রাখা হয় 'ভিনার সাইটুং'।
তৎকালীন বেসরকারি পাক্ষিক পত্রিকাটিকে ১৮৫৭ সালে অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রাঞ্জ জোসেফ সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসেন।
নতুন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পার্লামেন্ট সদস্য নরবার্ট হোফার জানান, আগামী ১ জুলাই থেকে প্রাথমিকভাবে সংবাদপত্রটির অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করা হবে। এছাড়া প্রাপ্ত তহবিলের উপর ভিত্তি করে প্রতিবছর পত্রিকাটির ন্যূনতম ১০টি মুদ্রণ প্রকাশ করা হবে।
জাতীয়করণের পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাজেট আকারে সংবাদপত্রটিতে চাকরির বিজ্ঞপ্তি ও অফিসিয়াল নোটিশ ছাপানো হতো। এইসব বিজ্ঞাপন থেকেই পত্রিকাটির বেশিরভাগ আয় হতো। একইসাথে সংবাদও প্রকাশিত হতো।
সংবাদপত্রটি নিয়ে অস্ট্রিয়ার সাবেক চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ ২০২১ সালে বলেন, "একটি দৈনিক সংবাদপত্রকে অর্থায়ন ও পরিচালনা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়।"
একইসাথে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী 'ভিনার সাইটুং'কে দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে নয়, বরং 'প্রশিক্ষণ ও অধিকতর শিক্ষার' অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে পত্রিকাটির রয়েছে প্রায় ২০০ কর্মী, যাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন পেশাদার সাংবাদিক। স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়নের আশঙ্কা, প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব কর্মীরা চাকরি হারাতে পারেন।
ইতোমধ্যেই অস্ট্রিয়ান সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পত্রিকাটির কর্মী ও পাঠকেরা ভিয়েনায় ফেডারেল অ্যাসেম্বলির সামনে প্রতিবাদ করেছেন।
যদিও অনলাইন সংস্করণ প্রকাশের কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তবুও পত্রিকাটির ডেপুটি এডিটর ইন চিফ থমাস সিফার্ট মনে করেন, "সিদ্ধান্তটি শুধু অনলাইন কিংবা প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশ নিয়ে নয়। বরং এর সাথে পত্রিকাটির স্পিরিট জড়িত।"
সাধারণ কর্মদিবসে পত্রিকাটির প্রায় ২০ হাজার প্রিন্ট কপি ছাপানো হতো। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার প্রিন্ট কপি তৈরি ছাপতো।
বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যমতে, 'ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজ পাবলিশার্স' ২০০৪ সালে 'দ্য ভিনার সাইটুং' কে বর্তমানে চলমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকাগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।