প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে এশিয়া, বিশ্বের জন্যও যা সতর্কবার্তা
রীতিমতো অগ্নিস্নাত এক তাপদাহের কবলে রয়েছে এশিয়া মহাদেশ; ২০২৩ সাল এপর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হবে – জলবায়ু বিজ্ঞানীদের এই পূর্বাভাসকেই যেন বাস্তব করতে চলেছে এ ঘটনা। খবর ব্লুমবার্গের।
বিশ্বের উত্তর গোলার্ধে শুরু হতে চলেছে গ্রীষ্ম, তার আগেই অশুভ সংকেত নিয়ে হাজির – এল নিনো আবহাওয়া চক্র। ফলে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ অংশে তাপাঙ্কের পারদ নজিরবিহীন উচ্চতায় উঠতে দেখা যাচ্ছে।
গত সপ্তাহান্তে ভিয়েতনামে রেকর্ড হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৪.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা। বিদ্যুতের চাহিদা এরমধ্যে ব্যাপকভাবে বাড়বে, তাই আগাম বিদ্যুৎ সংকটের সতর্কবার্তা দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেশী লাওসেও তাপাঙ্ক নতুন রেকর্ড করেছে। তাপসারণী 'বিপজ্জনক' অংশে পৌঁছানোয় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় কয়েক ঘণ্টা পেছায় ফিলিপাইন। এসব ঘটনা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় তীব্র তাপের সাথে উচ্চ আদ্রতার সহাবস্থানের মারাত্মক ঘটনাকেও তুলে ধরে।
জীবনধারণ অতিষ্ঠ করে তোলা এমন তাপদাহ – সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বজুড়ে দেখা দেওয়া বিরূপ আবহাওয়ারই প্রতিফলন। এতে বিশ্ব এগিয়ে চলেছে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে। প্রচণ্ড গরম সরকারগুলোর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়েছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিকাজ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো অপরিহার্য খাত – এশিয়ার করোনা মহামারিতে ব্যাপক প্রভাবিত অর্থনীতিগুলোর উত্তরণকে যা ব্যাহত করছে।
এল নিনোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য – প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল অংশ জুড়ে সাগরজলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া – এতে বিশ্বজুড়ে সমুদ্র স্রোত ও আবহাওয়া চক্রে পড়ছে সুদূরপ্রসারী প্রভাব। এল নিনো খরা কবলিত আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশে বৃষ্টিপাতের স্বস্তি আনতে পারে, অন্যদিকে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বড় অংশে দেখা দিতে পারে বৃষ্টিহীন উষ্ণ ও শুস্ক পরিস্থিতি। এতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কফি, চিনি, পাম ও কোকোয়া শস্যের মতো অর্থকরী ফসলের আবাদ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
গত সপ্তাহের বেশিরভাগ সময়টাই থাইল্যান্ডের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি। এতে বিদ্যুৎ চাহিদা পৌঁছায় নতুন উচ্চতায়। ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের একটি গ্রুপ থাই সরকারের প্রতি আসন্ন খরা মোকাবিলার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই খরা তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
মালয়েশিয়ার কিছু এলাকায় ৪০ শতাংশ কম হয়েছে বৃষ্টিপাত; এতে বৃষ্টি-নির্ভর পাম ফলের আবাদ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। মালয়েশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পাম তেল উৎপাদক। পণ্যটির উৎপাদনে ঘাটতির প্রভাব পড়বে বিশ্ববাজারে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো ভোজ্যতেল আমদানিতে অতি-নির্ভর দেশগুলোকে যার ফলে ভুগতে হবে।
উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি বৃষ্টিপাত কমায়, বনে দাবানলের ঘটনা ফিরে আসছে, এতে বায়ুদূষণও বাড়বে। এসব দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০১৫ সালে এল নিনোর প্রভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় দাবানল বেড়েছিল, এতে যে প্রচণ্ড ধোঁয়াশা দেখা দেয় – তাতে এই অঞ্চলের অন্যতম নিকৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হয়।
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে এশিয়ার অন্যপ্রান্তে চীন, ভারত ও বাংলাদেশের কিছু এলাকায় চলেছে তীব্র তাপদাহের তাণ্ডব। চীনে অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের প্রাণকেন্দ্র ইউনান প্রদেশে- গত মাসে এক দশকের মধ্যে চরমতম খরা পরিস্থিতি বিরাজ করে। এপ্রিলে উচ্চ তাপমাত্রার ফলে সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়াবহ তাপদাহের সতর্কবার্তা দিয়েছে ভারত। প্রসঙ্গত, গত মাসে তাপদাহের কারণে দেশটিতে ১১ জনের হিটস্ট্রোকে প্রাণহানির কথা জানা যায়, এসময় অনেক রাজ্যে বিদ্যালয়ও বন্ধ রাখা হয়।