পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেপ্তার
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবর দ্য ডনের।
আজ মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে দুটি মামলার শুনানিতে অংশ নিতে এসেছিলেন তিনি, আর তখনই আদালত চত্বরের বাইরে থেকে তাকে আটক করে এলিট ফোর্স- পাকিস্তান রেঞ্জার্স। ইমরানকে তারা হেফাজতে নিয়েছে।
ইমরানকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পিটিআই এর আইনজীবী ফয়সাল চৌধুরী ডনকে জানান, এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের বিচারপতি আমির ফারুক ইসলামাবাদ পুলিশের প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আদালতের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তাদের কাছে এবিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করা হবে।
বিচারপতি ফারুক বলেছেন, 'আদালতে আসুন এবং আমাদের জানান কেন এবং কোন মামলার ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলো'।
বিচারপতি আরো বলেছেন, এই নির্দেশ তিনি 'সংযত' থেকেই দিয়েছেন, তবে ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান আদালতে হাজির নাহলে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হাজির হওয়ার সমন জারি করবেন।
ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হলো যেভাবে
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইমরান ইসলামাবাদ হাইকোর্টের গেট দিয়ে প্রবেশ প্রবেশ করার সময় তাকে অনুসরণ করে আধা-সামরিক বাহিনীর একটি কন্টিনজেন্ট এবং তাদের সাঁজোয়া যান।
সাঁজোয়া যানগুলো মূল ফটকে অবরুদ্ধ করে রাখে, এভাবে নাটকীয়ভাবে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ইমরানকে আটক করা হয় বলেও জানান তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই)-এর বর্তমান এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিলেন ইমরান। এজন্য ইমরানের নিন্দা করে সেনাবাহিনী, বিষয়টি তাকে আদালতে জানানোর চ্যালেঞ্জও দেয়। এরপর আজ মঙ্গলবার দিনের শুরুতে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এই অভিযোগ নিয়ে আবারো সরব হয়েছিলেন ইমরান।
আল কাদির ট্রাস্ট মামলা
ইসলামাবাদ পুলিশের জারি করা এক বিবৃতিতে মহাপরিদর্শক (আইজি) আকবর নাসির খানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, একটি আবাসন কোম্পানির থেকে শত শত কোটি রুপি নেওয়ার অভিযোগ থাকা মামলায় পিটিআই প্রধান ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আল-কাদির ট্রাস্ট কেস নামক এই মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, কোম্পানিটি ৫০ বিলিয়ন রুপি বৈধ করতে এই অর্থ ঘুষ দেয়।
মামলায় ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ন্যাশনাল একাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব)।
ন্যাবের তদন্ত অনুসারে, সাবেক পিটিআই সরকারের সাথে দেশটির এক ধনাঢ্য আবাসন ব্যবসায়ীর গোপন সমঝোতা হয়। এতে জাতীয় কোষাগারের লোকসান হয়েছে প্রায় ১৯০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড সমান অর্থ।
এবিষয়ে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি যে তথ্য দিয়েছে, তার সূত্রে ন্যাবের দাবি- ইমরান ও মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা ওই ব্যবসায়ীর ৫০ বিলিয়ন রুপি সমন্বয় করতে সহায়তা দেন। এছাড়া আল কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ধারিত জমি থেকেও তারা অবৈধভাবে সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, এর আগে কয়েকবার নোটিশ জারির পরও আদালতে হাজির হননি ইমরান। তিনি বলেন, 'জাতীয় কোষাগারের লোকসান করার জন্য ন্যাশনাল একাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব) এই গ্রেপ্তার করেছে।' আটকের পর ইমরানকে কোনোপ্রকার নির্যাতন করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে।
তবে ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান জানান, রাজধানীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শহরে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এটা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন নেওয়া হবে।