৮ দিনের রিমান্ডে ইমরান, পাকিস্তানজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ, নিহত ৮
তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আধা-সামরিক বাহিনী গ্রেপ্তারের পর থেকেই সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান। বিক্ষোভকারীরা জ্বালিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর হচ্ছে, নিহত হয়েছেন অন্তত আটজন। সিন্ধু প্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করে, এক স্থানে চার জনের বেশি সমবেত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসি, ও দ্য ডনের।
গতকাল ইসলামাবাদ হাইকোর্টে দুই মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে আসছিলেন ইমরান খান, এসময় তাকে আদালত চত্বরের সামনে থেকে আধা-সামরিক বাহিনী পাকিস্তান রেঞ্জার্স আটক করে। পরে তাকে দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা- ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি বা ন্যাব) আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গতকাল থেকেই পিটিআই নেতাকর্মীসহ ইমরান খানের ক্ষুদ্ধ ভক্ত-সমর্থকরা তার মুক্তির দাবিতে নেমে আসেন রাজপথে। এ পর্যন্ত অন্তত আটজন নিহত এবং প্রায় ১,০০০ জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে এমন দাবি করছে পিটিআই।
শুধুমাত্র পাঞ্জাবেই ১,০৫০ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। দাঙ্গা ও সহিংসতার অভিযোগে আরো ১০০ জনকে আটক করা হয়।
বিবিসি জানায়, ইমরানকে পুলিশের একটি গেস্টহাউসে রাখা হয়েছে; নিরাপত্তার কারণে এই গেস্টহাউসকেই বিচারালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজ বুধবার ন্যাবের এই আদালত ন্যাব হেফাজতে ইমরানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
তাকে গ্রেপ্তার ও বিচারের ঘটনা – দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর সাথে – ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধকে চরমে নিয়ে গেছে।
এখন ন্যাব আদালতে তাকে দোষী সাব্যস্ত হলে, আগামী নির্বাচনে আর অংশ নিতে পারবেন না।
জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাতে পেশোয়ার শহরে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণহানির কথা জানা গেছে। পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশেও গুলি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পেশোয়ারের রিডিং হাসপাতাল থেকে পিটিআই চেয়ারম্যানের মুখপাত্র টুইটারে জানান, 'গুলিতে তিনজন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছে ১৮ বছরের এক তরুণ, তার মুখে গুলি লেগেছে'।
এছাড়া দেশজুড়ে আরো অন্তত কয়েক ডজন ব্যক্তির প্রাণহানিসহ শত শত মানুষ বুলেটের আঘাতে আহতে হয়েছে বলেও টুইট পোস্টে উল্লেখ করা হয়।
পাকিস্তানে পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ। রাজনৈতিক এই অস্থিতিশীলতা দেশটির দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতিকে আরো তলিয়ে দেবে এমন আশঙ্কাই করা হচ্ছে। এতে আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়লো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ থেকে ঋণ-সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় আগামী ১১ মে নির্ধারিত সব পরীক্ষা বাতিল করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
রাজধানী ইসলামাবাদের শিল্প এলাকার একটি থানায় বিক্ষুদ্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলেও জানা গেছে। আরও নিরাপত্তা ঝুঁকির শঙ্কা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সেনা মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েছে নগর প্রশাসন।
ডন নিউজের প্রতিবেদক সানাউল্লাহ খান জানান, সংবিধানের ২৪৫ ধারার আওতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় এ সহায়তা চাওয়া হয়েছে।