ভারতে ২০০০ রূপির নোট বাতিলের ঘোষণায় স্বর্ণের দোকানে ভিড়
গত শুক্রবার (১৯ মে) রিজার্ভ ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া (আরবিআই) ভারতের বাজার থেকে ২০০০ রূপির নোট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকে দেশটিতে স্বর্ণ ও রূপা কেনার বিষয়ে অনুসন্ধান বেড়ে গিয়েছে। চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বর্ণের গ্রাহক ভারতের স্বর্ণের বাজারে এখন আগের চেয়ে বেশি ক্রেতাসমাগম দেখা যাচ্ছে।
তবে ২০১৬ সালে ৫০০ ও ১০০০ রূপির কাগজি নোট প্রত্যাহারের পর ক্রেতারা যেমন আতঙ্কিত হয়ে এই মহামূল্যবান ধাতুটি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন, সেই পরিস্থিতি এবার দেখা যায়নি বলে রোববার জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিল (জিজেসি)।
বরং ভারতের 'নো ইওর কাস্টমার' (কেওয়াইসি) নীতির কড়াকড়ির ফলে গত দুইদিনে ২০০০ রূপির নোটের বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয়ের পরিমাণ কমই রয়েছে। যদিও কিছু সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এই নিয়মের বাইরে গিয়েও সুযোগ দিচ্ছেন, তবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ প্রিমিয়াম নিচ্ছেন তারা। ফলে প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণের দাম গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৬৬,০০০ রূপিতে। বর্তমানে ভারতে প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণের স্বাভাবিক দাম ৬০,২০০ রূপি।
জিজেসি'র চেয়ারম্যান সাইয়াম মেহরা পিটিআইকে বলেন, "২০০০ রূপির নোট দিয়ে স্বর্ণ বা রূপা কেনার বিষয়ে ক্রেতারা ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করেছেন, নানা প্রশ্ন করছেন। তাই শনিবার বেশ জনসমাগম ছিল। কিন্তু কঠোর কেওয়াইসি নীতির কারণে সত্যিকার অর্থে স্বর্ণ ক্রয়ের পরিমাণ কমই রয়েছে।"
তবে ভারতীয়দের জন্য তাড়াহুড়ো করার কোনো কারণ নেই। ২০০০ রূপির নোট পাল্টে নেওয়া বা ব্যাঙ্কে জমা করার জন্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য ২,০০০ রূপির নোট ব্যবহার করা যেতে পারে।
মেহরা আরও জানান, পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) এবং ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (বিআইএস) হলমার্কের কারণেও এখন চাইলেই প্রচুর সোনা কেনা যাবে না। তাছাড়া এর ফলে ভারতের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা আরও সংগঠিত হয়েছেন এবং এক নিয়মের অধীনে ব্যবসা চালাতে উৎসাহিত করা হয়েছে তাদের।
"বড় অংকের নোট সাধারণত ক্যাশে লেনদেন করতে হয়, যা এখন ভারতের গহনা শিল্পে নগণ্য হয়ে উঠেছে। ভোক্তারা এখন ডিজিটাল ফরম্যাটে বেশি লেনদেন করছেন। ফলে ২০০০ রূপির নোট প্রত্যাহার করে নেওয়া ভারতের স্বর্ণ ও গয়নার ব্যবসায়ে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না", যোগ করেন তিনি।
পিএনজি জুয়েলার্স-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৌরভ গারগিল বলেন, "প্রিমিয়াম হারে স্বর্ণ দেওয়ার পরিবর্তে ২০০০ রূপির নোট নেওয়া শুধুমাত্র অসংগঠিত ক্ষেত্রে হচ্ছে, সুসংগঠিত স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এমন কাজ থেকে অনেক দূরে থাকেন।"
নেমিচাঁদ বামালওয়া অ্যান্ড সনস-এর অংশীদার বাছরাজ বামালওয়া বলেন, "ক্রেতারা কিছু বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন, তবে স্বর্ণ কেনার জন্য এখনই কেউ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন না। আগামীকাল থেকে এটা বাড়তে পারে।"
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কেওয়াইসি নীতি, আয়কর এবং অর্থপাচার-বিরোধী আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখেই স্বর্ণ বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
কমট্রেন্ডজ রিসার্চ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জ্ঞানশেখর থিয়াগারাজন বলেন, বাজার থেকে কোনো মুদ্রা সরিয়ে নিলে মানুষ সবসময়ই স্বর্ণ কেনার দিকে ঝুঁকেছে। তবে এবারে পার্থক্য হলো, এবার অনেক আইন-কানুন মানা হচ্ছে।
২০১৬ সালে ভারতীয় বাজার থেকে ৫০০ ও ১০০০ রূপির নোট প্রত্যাহারের সময়কার তুলনায় এবার ভারতীয়দের হাতে রয়ে যাওয়া ২০০০ রূপির নোটের পরিমাণ কম। কারণ ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকেই এই নোট ছাপা বন্ধ রেখেছে আরবিআই; তাই এই নোটগুলোর প্রচলন কম ছিল।
তবে ২ লাখ রূপির নিচে স্বর্ণ, রূপা বা অন্য কোনো মূল্যবান রত্ন-পাথর ক্রয়ের ক্ষেত্রে কেওয়াইসি ডকুমেন্ট হিসেবে ক্রেতার 'পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বার' (প্যান) বা আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়।