বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির ঘটনা আগের চেয়েও ‘আরও বেশি উদ্বেগজনক’: গবেষণা
বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়াকে বিজ্ঞানীরা 'উদ্বেগজনক' হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেক আগেই। তবে বিষয়টিকে আগে যতটা উদ্বেগজনক বলে মনে করা হতো, এটি তারচেয়েও 'আরও বেশি উদ্বেগজনক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। সিএনএন অবলম্বনে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক বন্যপ্রজাতি সংখ্যায় খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে।
মানুষ ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক বণ্যপ্রজাতি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে; সেইসঙ্গে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে আরও অনেক প্রজাতিকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে আমরা 'ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তি'-এর দিকে এগিয়ে চলেছি; আর এর জন্য এবার মানুষের কর্মকাণ্ডকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করেছেন তারা৷
মূলত শহরাঞ্চল গড়ে তোলা, রাস্তাঘাট-ভবন তৈরি ও ক্ষেত-খামারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল; এতে কমে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর অবাসস্থল। এছাড়া, বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হিসেবে বিশ্ব উষ্ণায়নও বাড়ছে, এতে বিলুপ্তির মুখে পড়েছে অনেক প্রজাতি।
স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ এবং কীটপতঙ্গ মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ৭০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির ওপর গবেষণা চালিয়েছেন গবেষকরা। সময়ের সাথে সাথে প্রজাতিগুলো সংখ্যায় বাড়ছে, কমছে না-কি একই অবস্থানে রয়েছে, তা বুঝতে চেয়েছেন তারা।
বায়োলজিক্যাল রিভিউ জার্নালে সোমবার (২২ মে) প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়, প্রজাতিগুলো সংখ্যায় ৪৮ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে এবং এদের বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশেরও কম।
কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের গবেষক ও এই গবেষণার একজন লেখক ড্যানিয়েল পিনচেরা-ডোনোসো গবেষণার ফলাফলটিকে একটি 'কঠোর সতর্কতা' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, অন্যান্য গবেষণা অল্প সংখ্যক প্রজাতির ওপর ভিত্তি করে চালানো হয়েছে, প্রজাতি বিলুপ্তির বিষয়টিকে সেখানে অনেকটা সাধারণ উদ্বেগজনক বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই গবেষণা বিস্তৃত প্রজাতিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হওয়ায় এটি বিশ্বব্যাপী একটি 'কঠোর সতর্কবার্তা' প্রদান করে।
গবেষণাটি বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে একটি 'পরিষ্কার ধারণা' দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাতিসংঘের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার' (আইইউসিএন)-এর তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির লাল তালিকা (রেড লিস্ট) প্রায় ২৮ শতাংশ প্রজাতিই এখন বিলুপ্তি হুমকির সম্মুখীন।
পিনচেরা-ডোনোসো বলেন, "প্রজাতিগুলো বিলুপ্তি হুমকির মুখে রয়েছে কি না, সেটি আমাদের গবেষণার মূল বিষয় ছিল না। আমরা বুঝতে চেয়েছি, প্রজাতিগুলো সংখ্যায় বাড়ছে না-কি ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে।"
গবেষণায় দেখা গেছে, আইইউসিএন-এর লাল তালিকায় 'হুমকির সম্মুখীন নয়' এমন প্রজাতিরও ৩৩ শতাংশ সংখ্যায় ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।
পিনচেরা-ডোনোসো জানান, কোনো প্রজাতি সংখ্যায় ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় অর্থ হলো, তা বিলুপ্তির দিকেই এগোচ্ছে।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষণ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রেন্ডন গডলি সাম্প্রতিক এই গবেষণার প্রসংশা করে বলেন, "এটি একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী গবেষণা; এটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সংখ্যক (মেরুদণ্ডী) প্রাণী ও পোকামাকড় নিয়ে বিস্তৃত। এই গবেষণার মাধ্যমে লাল তালিকা তৈরি ও মূল্যায়নের পরিবর্তে, প্রজাতির জনসংখ্যার গতিপথ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।"
"এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, মানবসৃষ্ট কারণে বন্যপ্রাণী কতটা চাপের মধ্যে রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
তবে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত থেকে প্রাণীদের ফিরিয়ে আনার ইতিহাসও রয়েছে বলে জানান তিনি। উদাহরণ হিসেবে তিমি ও সামুদ্রিক কচ্ছপের কথা উল্লেখ করেন।
"গবেষণার এই ফল নিয়ে আমাদের সবার সতর্ক হওয়া উচিত।বন্যপ্রজাতির জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বাসস্থান এবং সুষ্ঠু বাস্তুতন্ত্র ছাড়া আমরা নিজেরাও টিকে থাকতে পারবো না," যোগ করেন অধ্যাপক গডলি।