বিরোধী দলগুলোর বয়কটের মাঝেই নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করলেন মোদি
বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মাঝেই আজ রোববার (২৮ মে) ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। ভবনটি উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণ না জানানোয় এ অনুষ্ঠান বয়কট করেছে কংগ্রেসসহ দেশটির ১৯টি বিরোধী দল। খবর বিবিসির।
সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে সকাল সোয়া ৭টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান মোদি। এ সময়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, দেশটির হিন্দুত্ববাদী আদর্শের রাজনীতিবিদ বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মদিনে উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করায় বিরোধী দলীয় অনেক নেতা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
অবশ্য পাল্টা জবাব হিসেবে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বিরোধী দলের এ বয়কটের সিদ্ধান্তকে 'গণতন্ত্রের প্রতি অসম্মান' বলে আখ্যায়িত করেছে।
একইসাথে পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৭৫ রুপির স্মারক মুদ্রা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
দেশটির নতুন এ পার্লামেন্ট ভবনটি সরকারের উচ্চভিলাসী 'সেন্ট্রাল ভিস্তা পাওয়ার করিডর' প্রকল্পের অধীন। ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় তৈরি পুরনো পার্লামেন্ট ভবনের সামনেই মোট ১১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে।
ত্রিভুজাকৃতির নতুন সংসদ ভবনটি প্রায় ৬৪,৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে। পুরাতন ভবনের চেয়ে এ ভবনে আসন সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংসদ ভবনের তিনটি প্রধান ফটকের নাম যথাক্রমে জ্ঞান দ্বার, শক্তি দ্বার এবং কর্ম দ্বার রাখা হয়েছে। এছাড়াও, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রবেশের জন্য আলাদা দ্বার রয়েছে এই ভবনে।
ভবনটির লোকসভা চেম্বাররের ডিজাইন অনেকটা ময়ূরের মতো, যা দেশটির জাতীয় পাখি। আর রাজ্যসভা চেম্বারের ডিজাইন অনেকটা পদ্মফুলের মতো, যা ভারতের জাতীয় ফুল।
ভবনটি নির্মাণের জন্য সমগ্র ভারত থেকে নানান উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে। নাগপুর থেকে আনা হয়েছে সেগুন কাঠ, লাল ও সাদা বেলেপাথর আনা হয়েছে রাজস্থান থেকে। এছাড়া মির্জাপুরের গালিচা, উদয়পুরের কেশরিয়া সবুজ মার্বেল পাথর ও মুম্বাইয়ের আসবাবপত্র দিয়ে ভবনের ভেতরটি সাজানো হয়েছে।
গত বুধবার (২৪ মে) দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ মোট ১৯ টি বিরোধী দল উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কটের 'সমন্বিত সিদ্ধান্ত' নেয়। কারণ হিসেবে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী জানান, পার্লামেন্ট ভবনের উদ্বোধন প্রেসিডেন্টের করা উচিত। কেননা সংবিধান অনুযায়ী তিনিই দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তি।
অন্যদিকে, কংগ্রেস এমপি জয়রাম রামেশ মূলত বিনায়ক দামোদরের জন্মদিনে ভবনটি উদ্বোধন করায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। কেননা বিনায়ক তার পুরো রাজনৈতিক জীবনে প্রবলভাবে মহাত্মা গান্ধীর বিরোধিতা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধনের সময়ে ঠিক এর বাইরেই বিক্ষোভ করছে দেশটির সেরা সব কুস্তিগীররা। মূলত ভারতীয় রেসলিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিজ ভূষণ সিং এর পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে এ প্রতিবাদ করা হয়েছে।
ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট ব্রিজ ভূষণ বিজেপির প্রভাবশালী একজন রাজনীতিবিদ ও আইনপ্রণেতা। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নারী কুস্তিগীরদের যৌন নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যদিও ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।