সিঙ্গাপুরে গোপন বৈঠকে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা প্রধানরা
গত শুক্রবার সিঙ্গাপুরে শুরু হওয়া তিন দিনের 'সাংগ্রি-লা-ডায়ালগ' নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে বিশ্বের প্রায় দুই ডজন প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একটি গোপন বৈঠক করেছেন। এ বৈঠক সম্পর্কে জানেন এমন পাঁচজন ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য দিয়েছেন।
সূত্র বলছে, কয়েক বছর ধরেই নিরাপত্তা সম্মেলনের পাশাপাশি আলাদা ভেন্যুতে এ ধরনের বৈঠকগুলো আয়োজন করে আসছে সিঙ্গাপুর সরকার। এর আগে এই বৈঠকের খবর প্রকাশ্যে আসেনি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক এভ্রিল হেইনস। তিনি তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান। বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য দেশের মধ্যে ছিল চীন; যদিও বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভারতীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং-এর প্রধান সামন্ত গোয়েলও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সম্পর্কে জ্ঞাত এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন, "আন্তর্জাতিক শ্যাডো এজেন্ডায় এই বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যতগুলো দেশ জড়িত আছে, তাতে বোঝা যায় যে এটা কোনো উৎসব ছিল না, বরং একে অপরের উদ্দেশ্য ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গভীরভাবে বোঝার একটা উপায় ছিল এটি।"
সূত্র আরও বলে, "গোয়েন্দা পরিষেবাগুলোর মধ্যে একটি অলিখিত নিয়ম আছে যে, যখন আনুষ্ঠানিক ও খোলামেলা কূটনৈতিক আলোচনা কঠিন হয়ে ওঠে, তখন তারা একসঙ্গে বসে আলোচনা বা কথা বলতে পারে। উত্তেজনার সময়ে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সিঙ্গাপুরের বৈঠক সেটিকেই এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।"
কিন্তু ঘটনার সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে পাঁচটি সূত্রই নিজেদের পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সাংগ্রি-লা ডায়লগ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সময় সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, "গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ অংশগ্রহণকারীরা তাদের সমমর্যাদার অন্য দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেন এখানে।"
ঐ মুখপাত্র আরও বলেছিলেন, "সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এসব দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনে কিছু সহযোগিতা করতে পারে। নিরাপত্তা সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত এ ধরনের সভাকে উপকারী বলে মনে করেন অংশগ্রহণকারীরা।"
তবে সিঙ্গাপুরে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তাদের কাছে এ বৈঠকের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে চীন ও ভারত সরকারের মন্তব্য জানতে চেয়ে অনুরোধ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কেউই সাড়া দেয়নি।
বিস্তৃত পরিসরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও শেয়ার করার জন্য 'ফাইভ আইস' নামক একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড; এবং তাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও প্রায়ই দেখাসাক্ষাৎ করেন।
কিন্তু গোয়েন্দা কমিউনিটির মধ্যে বড় পরিসরে কোনো বৈঠকের ঘটনা বিরল। আর তেমন বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সেই খবর জনসমক্ষে কখনো প্রচার করা হয় না বললেই চলে।
যদিও সিঙ্গাপুরে কিছু সুনির্দিষ্ট আলোচনার বিষয়ে কিছু বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে; শুক্রবারের আলোচনায় ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলোচনা সম্পর্কে জ্ঞাত সূত্র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা প্রধানরা অনানুষ্ঠানিকভাবেই জড়ো হন।
তবে এই গোপন বৈঠকে রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ইউক্রেনের ডেপুটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভলোদিমির ভি. হাভরিলভ সাংগ্রি-লা ডায়লগ- এ ছিলেন, কিন্তু তিনিও গোপন গোয়েন্দা বৈঠকে যোগ দেননি।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের আলোচনার সুর ছিল সহযোগিতামূলক, দ্বন্দ্বমূলক নয়।
এদিকে প্রধান নিরাপত্তা সম্মেলনে, ৪৯টি দেশের ছয়শোরও বেশি প্রতিনিধি তিন দিনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পাশাপাশি সাংগ্রি-লা হোটেলে রুদ্ধদ্বার দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু এবং ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ মূল বক্তব্য রাখেন।
সাংগ্রি-লা ডায়ালগ-এ যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন এভ্রিল হেইনস। প্রধান বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে একটি আলোচনায় তিনি চীনা সামরিক কর্মকর্তার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন যে দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখা অত্যাবশ্যক।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বাড়াতে গোপন সফরে চীনে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস।