ইতালিগামী নৌকা ডুবে গ্রিস উপকূলে ৭৮ শরণার্থীর মৃত্যু
গ্রিসের দক্ষিণ উপকূলে শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি মাছ ধরার নৌকা ডুবে অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১০০ যাত্রীকে।
বুধবারের (১৪ জুন) এ দুর্ঘটনায় আরও অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
নৌকাটি ইতালির দিকে যাচ্ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব লিবিয়ার টোব্রুক থেকে এটি যাত্রা শুরু করেছিল। যাত্রীদের বেশিরভাগ মিশর, সিরিয়া ও পাকিস্তানের বলে জানিয়েছে গ্রিসের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
গ্রিক কোস্টগার্ড এক বিবৃতিতে জানায়ূ, নৌকাটি পেলোপোনিজ উপকূল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ডুবে যায়। স্থানটি ভূমধ্যসাগরের গভীরতম অঞ্চলগুলোর একটির কাছাকাছি।
কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ১০০ জনকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। এই উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে কোস্টগার্ডের ছয়টি জাহাজ, নৌবাহিনীর একটি ফ্রিগেট, একটি সামরিক নৌযান ও বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার।
জীবিতদের মধ্যে চারজনকে গ্রিসের বন্দর শহর কালামাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া অনেককে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা কর্তৃক স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
কোস্টগার্ড জানিয়েছে, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের কারও কাছে লাইফ জ্যাকেটের মতো নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না।
ডুবে যাওয়া নৌকায় কতজন আটকে আছে বা পানিতে কতজন নিখোঁজ সে তথ্য এখানো জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, কয়েকশ' লোক নৌকায় ছিল।
গ্রিক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে নৌকাটি কোন জায়গা থেকে ছেড়েছে তা নিশ্চিত করেনি। তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, নৌকায় থাকা বেশিরভাগ লোকই মিশর, সিরিয়া এবং পাকিস্তানের।
মঙ্গলবার গ্রিস কর্তৃপক্ষ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্সকে ভুমধ্যসাগরে থাকা নৌকাটি সম্পর্কে প্রথমবারের মতো সতর্ক করা হয়েছিল।
গ্রিক কোস্টগার্ড জানায়, প্রথম সতর্কতার পরে ফ্রন্টেস্কের একটি বিমান এবং দুটি ব্যবসায়িক জাহাজ দ্রুতগতিতে উত্তর দিকে যাওয়া নৌকাটিকে দেখতে পায়। ওই এলাকায় আরও বিমান ও জাহাজ পাঠানো হয়। বারবার সাহায্যের প্রস্তাব দেওয়া হলেও নৌকা থেকে কোন সাড়া আসেনি।
কোস্টগার্ড আরও জানায়, বিকেলে একটি ব্যবসায়িক জাহাজ নৌকার কাছে গিয়ে খাদ্য ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করে। আরও সাহায্যের প্রস্তাব দেওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যান করে যাত্রীরা। দ্বিতীয় আরেকটি বাণিজ্য জাহাজের সাথেও একই আচরণ করা হয়।
কোস্টগার্ডের বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার সন্ধায় তাদের টহল দল নৌকাটির কাছে যায়। এ সময় নৌকায় বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। তখন তারা কোনো সহায়তা নিতে চায়নি এবং ইতালির দিকে যেতে চায় বলে জানায়।
সহায়তা সংস্থা অ্যালার্ম ফোন টুইটারে জানায়, গ্রিক উপকূলে একটি নৌকা দেখতে পেয়ে তারা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে। সেখানে ৭৫০ জন যাত্রী আছে বলে জানা যায়। মধ্যরাতের পর থেকে নৌকাটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
অ্যালার্ম ফোনের উল্লেখ করা নৌকাটিই ডুবে গেছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে বুধবার পৃথক ঘটনায় ৭০ জন যাত্রীসহ একটি ইয়ট উদ্ধার করে ক্রিট দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। ইয়টটি বিপদে পড়ার খবর পেয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল।
ভূমধ্যসাগরে এরকম উদ্ধার তৎপরতা সাধারণ ঘটনা। তবে গত মাসে, সমুদ্র পথে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখে পড়ে গ্রিস সরকার।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) কর্তৃক মঙ্গলবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার মধ্যে এবং সেখান থেকে ইউরোপমুখী অভিবাসন রুটে প্রায় তিন হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে এ সংখ্যাটি সর্বোচ্চ।