অভিবাসীদের নৌকাডুবি; ভূমধ্যসাগরে ৩ দিন টায়ার টিউব ধরে ভাসছিল ১১ বছরের শিশু
অভিবাসনপ্রত্যাশী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর ভূমধ্যসাগরে তিনদিন ভেসে ছিল এক শিশু৷ মূলত বায়ুভর্তি টায়ার টিউব ধরে ১১ বছরের মেয়েটি বেঁচে ছিল।
গত বুধবার এনজিও কম্পাস কালেকটিভের উদ্ধারকারী দল শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করে৷ মেয়েটি উদ্ধারকারীদের জানিয়েছে, তিউনিশিয়ার এসফাকেস থেকে ৪৫ যাত্রী নিয়ে নৌকাটি ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল৷ পথে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের নৌকাটি।
ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী উদ্ধারে সহায়তাকারী সংস্থা কম্পাস কালেক্টিভ বলেছে, ''আমরা ধারণা করছি শিশুটি অভিবাসী নৌকাটির একমাত্র জীবিত যাত্রী। বাকি ৪৪ জন ডুবে গেছেন৷''
কম্পাস কালেক্টিভের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি উদ্ধারকারী জাহাজ অন্য একটি উদ্ধার অভিযানে যাওয়ার সময় গভীর রাতে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনতে পায়। তখন সাগরের মাঝ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়৷
উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব প্রধান করা ম্যাথিয়াস উইডেনলুবার্ট বলেন, "এটি একটি অবিশ্বাস্য কাকতালীয় ঘটনা যে, ইঞ্জিন চালু থাকলেও আমরা শিশুটির কণ্ঠস্বর শুনেছি। এরপর আমরা অবশ্যই অন্যরা বেঁচে থাকতে পারে বলে ঐ স্থানে সন্ধান করেছি। কিন্তু আড়াই মিটারের উঁচু ঢেউসহ দিনব্যাপী ঝড়ের পর তা অনেকটা অসম্ভব ছিল।"
ইতালিয়ান মিডিয়াগুলো শিশুটির নাম ইয়াসমিন বলে প্রচার করেছে। শিশুটি বর্তমানে ইতালির লাম্পেদুসায়ারে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে৷ তবে তার অবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷
একই রাতে উদ্ধারকারী দলটি ৫৩ জন যাত্রী নিয়ে জীবন সংকটে থাকা অন্য একটি নৌকায় লাইফজ্যাকেট দিয়েছেন। এরপর ঐ নৌকাটির অবস্থান সম্পর্কে ইতালীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে নৌকাটিতে থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয়েছে কি-না তা স্পষ্ট নয়।
উদ্ধারকারী দলের সদস্য কাটজা টেম্পেল বলেন, "এমনকি ঝড়ের সময় মানুষ ভূমধ্যসাগর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথ ব্যবহার করছে। শরণার্থীদের জন্য আমাদের নিরাপদ পথ তৈরির পাশাপাশি একটি উন্মুক্ত ইউরোপ দরকার যেখানে মানুষদের স্বাগত জানানো হবে। ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া কোনো বিকল্প নয়।"
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এখন অবধি তিউনিশিয়া থেকে ইইউভুক্ত দেশ ইতালি এবং মাল্টার উদ্দেশ্যে অনিয়মিত সাগর পথে যাত্রা করতে গিয়ে অন্তত ২৪,৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বা তারা হারিয়ে গেছেন৷ চলতি বছর এই সংখ্যা দুই হাজার পঞ্চাশ জনের মতো৷
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান