দেশীয় পাখি বাঁচাতে দেশজুড়ে ইঁদুর নির্মূল করছে নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের মিরামার অঞ্চলে এক সকালে হাজির হয়েছে একটি বন্যপ্রাণী প্রেমীদের দল। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, অঞ্চলটি থেকে শিকারি প্রাণী ইঁদুর নির্মূল করা। খবর বিবিসির।
মূলত ওয়েলিংটনের এ অঞ্চলটি থেকে ইঁদুর নির্মূলের মধ্যে দিয়ে দেশীয় পাখি রক্ষা করাই দলটির উদ্দেশ্য। তাই স্বেচ্ছাসেবকেরা বাদাম ও মাখনের সাথে বিষ মিশিয়ে ইঁদুরের জন্য আদর্শ মরণঘাতী খাবার তৈরি করেছে।
একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিষাক্ত খাবার ছড়িয়ে ইঁদুর শিকার করছে স্বেচ্ছাসেবকেরা। এই কাজে দলনেতা ড্যান কপ সকল স্বেচ্ছাসেবকদের শুভকামনা জানাচ্ছেন।
এমনকি পুরো কার্যক্রমটি তদারকি করতে একটি জিপিএস অ্যাপও ব্যবহার করা হয়। স্বেচ্ছাসেবকেরা একের পর এক ফাঁদ তৈরি করেন এবং সে সংক্রান্ত তথ্য অ্যাপটিতে আপডেট করেন।
তেমনি একজন স্বেচ্ছাসেবক একটি মৃত ইঁদুর খুঁজে পাওয়ার পর সেই তথ্য দলটির ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দেয়। সাথে গ্রুপে মৃত ইঁদুরটির ছবিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ খবরে দলনেতা খুশি হলেও ঐ স্বেচ্ছাসেবক এটাকে বেশ ভালো খবর বলে মনে করেন না। কেননা তিনি বলেন, "ডেভ হয়তো আশ্বস্ত হয়েছেন এই ভেবে যে, একটি ইঁদুর ধরা পড়েছে। কিন্তু আমরা এটা ভেবে চিন্তিত যে, অঞ্চলটিতে এখনো আরও ইঁদুর রয়েছে।"
তবে শুধু মিরামার অঞ্চলেই নয়, বরং পুরো নিউজিল্যান্ড জুড়েই ইঁদুর ও অন্যান্য শিকারি প্রাণী নির্মূলে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে সকল অঞ্চল শিকারিমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটির সরকার।
তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এর আগে সবচেয়ে বড় জায়গা জুড়ে ইঁদুর নির্মূল করা হয়েছে সাউথ জর্জিয়ায়। সাউথ আটলান্টিকে অবস্থিত অঞ্চলটি প্রায় ১৭০ কিলোমিটার লম্বা একটি দ্বীপ।
এ বিষয়ে নিউজিল্যান্ডের সংরক্ষণবাদীরা মনে করেন, যুক্তরাজ্যের এই অঞ্চলটির চেয়েও বড় এলাকা জুড়ে ইঁদুর নির্মূল করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে অন্য ব্যবহারিক এবং নৈতিক সমস্যার দিকগুলো বিবেচনায় আনতে হবে।
স্থলভাগে ইঁদুরের মতো শিকারি প্রাণী না থাকলে মাটিতে বাসা তৈরি করা পাখিরা অনেকটা নিরাপদে থাকে। কিন্তু স্থলভাগে শিকারি প্রাণী থাকলে তা পাখির জন্য বেশ বিপজ্জনক।
পাখিসহ অন্য প্রাণীদেরকে বাঁচাতে দেশটিতে শিকারি প্রাণী নির্মূলের এমন উদ্যোগ নতুন নয়। ১৯৬০ এর দশকেও সংরক্ষণবাদীরা ছোট একটি দ্বীপ থেকে ইঁদুর নির্মূল করেছিল। তবে ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত দেশটিতে শিকারী প্রাণী নির্মূলের বিষয়টি সামাজিক প্রচেষ্টা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনি।
এ বিষয়ে অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী জেমস রাসেল বলেন, "শিকারি প্রাণী নির্মূলের ধারণাটি বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে এবং বর্তমানে জাতীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।"
জীববিজ্ঞানী জেমস রাসেল জানান, ইনফ্রারেড ক্যামেরার আবিষ্কার এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। বড় শিকারি প্রাণীর শিকার সম্পর্কে ২০ শতকে মোটাদাগে সকলে জানতেন। কিন্তু ২০০০ এর দশকে বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা দেখাতে সমর্থ হন যে, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরাও দৃষ্টির অগোচরে অনেক ভয়ানক শিকারি।
ইনফ্রারেড ক্যামেরায় রাতের বেলা ইঁদুর কর্তৃক অন্য প্রাণীর ডিম এবং বাচ্চা শিকারের দৃশ্য দেখা যায়। তৎকালীন একজন ইকোলজিস্ট দাবি করেন, শিকারি প্রাণীদের ফলে প্রতি বছর ২৬ মিলিয়ন পাখি জীবন হারাচ্ছে।
২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডে বিখ্যাত পদার্থবিদ স্যার পল ক্যালাঘান একটি শিকারি প্রাণী মুক্ত দেশ গড়ার ধারণাটি জনপ্রিয় করেন। এদিকে জীববিজ্ঞানী রাসেল এবং অন্যান্য তরুণ সংরক্ষণবাদীরা মত দেন যে, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং লোকবল নিয়োগ করা হলে এই ধারণাটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডে রাজনীতিবিদেরাও ধারণাটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে দেশটিতে সবচেয়ে ক্ষতিকারক শিকারি প্রাণী নির্মূলে একটি আইন জারি করা হয়। আইনে মোট তিন ধরনের ইঁদুরের প্রজাতিকে সবচেয়ে ক্ষতিকারক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে 'প্রিডেটর ফ্রি ২০৫০ লিমিটেড' নামের একটি সরকারি সংস্থা তৈরি করা হয়। এটি প্রকল্প গ্রহণ করে শিকারি প্রাণী নির্মূলে কৌশল গ্রহণ, স্থানীয় অঞ্চলে সরকারী এবং বেসরকারী অর্থ বিনিয়োগ এবং বিষয়টি সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে থাকে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রজেক্ট হচ্ছে 'প্রিডেটর ফ্রি ওয়েলিংটন'। এ প্রজেক্টের অধীনে ২ লাখ জনসংখ্যার শহরটি থেকে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ নির্মূলের লক্ষ্য রাখা হয়; বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে থাকা ইঁদুর।
ওয়েলিংটনে প্রজেক্টটির অধীনে মোট ৩৬টি দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইঁদুর নির্মূলকারী দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকে পরিণত করা হয়েছে।
প্রজেক্টটিতে ইঁদুর নির্মূলে দলগুলোকে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট বিষ সরবরাহ করা হয়েছে, যা শুধু ফাঁদের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী। এছাড়াও জিপিএস অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি ডিভাইস থেকে রিয়েল টাইম তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
এমনকি ইঁদুর থাকতে পারে এমন হটস্পটগুলোতে ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। এ সম্পর্কে 'প্রিডেটর ফ্রি ওয়েলিংটন' প্রজেক্টের ডিরেক্টর জেমস উইলকক্স জানান, যদি ক্যামেরায় কোনো ইঁদুর দেখা যায়, তখন প্ল্যানিং টিমের পক্ষ থেকে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিষে মারা যাওয়া প্রতিটি ইঁদুরকে আবার ল্যাবে অটোপসি করার জন্য পাঠানো হয়। কেননা অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্টস ধীরে ধীরে ইঁদুরগুলোকে হত্যা করে। এক্ষেত্রে অটোপসির মাধ্যমে বোঝা সম্ভব হয় যে, বিষগুলো ইঁদুরের ক্ষেত্রে ঠিক কতটা কার্যকর প্রভাব রাখতে পেরেছে।
এ বিষয়ে প্রজেক্ট ডিরেক্টর উইলকক্স বলেন, "আমরা ইঁদুরের দেহগুলো কেটে পরীক্ষা করি, এগুলো আসলেই বিষের কারণে মারা গিয়েছে কি-না। আমরা এটাও জানার চেষ্টা করি যে, ইঁদুরটির লিঙ্গ কী ছিল। এছাড়াও এটি সম্প্রতি বাচ্চা প্রসব করেছে কি-না সেটা জানার চেষ্টা করা হয়।"
প্রজেক্টটি মিরামার অঞ্চলের পরিস্থিতির বেশ উন্নতি ঘটিয়েছে। দ্বীপটিতে বর্তমানে ইঁদুর একটি বিরল প্রাণীতে পরিণত হয়েছে এবং দেশীয় পাখির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯৯০ সালে ওয়েলিংটনে 'তুই' পাখির সংখ্যা যেখানে আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছিল, সেখানে এখন অঞ্চলটিতে সচারাচরই পাখিটির বিচরণ দেখা যায়।
এ বিষয়ে মিরামারের বাসিন্দা পল হে বলেন, "আমাদের বাড়ির পেছনের বাগানে এখন সবসময়ই তুই পাখিটি উড়তে দেখা যায়। গত পাঁচ বছরে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।"
পাখির অস্তিত্ব রক্ষায় ১৯৯৯ সাথে নিউজিল্যান্ডে 'জিল্যান্ডিয়া' নামের বিশ্বের প্রথম শহুরে অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়। মোট ৮ কিলোমিটারের বেষ্টনী দিয়ে এলাকাটি আটকে দেওয়া হয়। একইসাথে দর্শনার্থীদের তল্লাশি করে অধিক সতর্কতার সাথে সেখানে প্রবেশ করানো হয়।
বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে বেষ্টনী দিয়ে পাখির জন্য আরও কয়েক ডজন অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় 'ব্রুক' অভয়ারণ্য, যা মোট ৭০০ হেক্টরের জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
অভয়ারণ্য থেকে ইঁদুরসহ সকল প্রকার ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ নির্মূল করা হয়েছে। একইসাথে কোনো উপায়ে যাতে এই প্রাণীগুলো ফের উক্ত এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
সমন্বিত এ পদক্ষেপের ইতিবাচক ফলাফলও হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে। ঐ নির্দিষ্ট এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় বাড়ছে দেশীয় পাখির সংখ্যা।
তবে একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে আলাদা করে শিকারি প্রাণীর পুনরায় প্রবেশ রোধ করা বেশ কঠিন পদক্ষেপ। বিশেষ করে একটি দ্বীপের সেটি আরও উদ্বেগের বিষয়।
এমনি একটি বৃহৎ দ্বীপ নিউজিল্যান্ডের রাকিউরা। মূল ভূমি থেকে রাকিউরা আইল্যান্ডের পানিপথের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার।
দ্বীপটিতে গত ২০ বছর ধরে রাকিউরা কমিউনিটি এন্ড এনভায়রনমেন্ট ট্রাস্ট (সিরসেট) নামের এক স্বেচ্ছাসেবী দল ইঁদুর এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ নির্মূলে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সিরসেটের উদ্দেশ্য, শিকারি এ প্রাণীদের দমন করে ভূমিতে বাসা তৈরি করা পাখি মাটনবার্ডসের অস্তিত্ব রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাখির এই প্রজাতিটি ইতোমধ্যেই নিউজিল্যান্ডের মূল ভূমি থেকে বিপন্ন হয়ে গেছে।
একটি ছোট দ্বীপকে ইঁদুরের মতো শিকারি প্রাণী মুক্ত রাখতে খুবই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দরকার হয়। কেননা ইঁদুর গড়ে এক মাইল পর্যন্ত সাঁতার কাটতে পারে। তাই প্রাণীটিকে পাখির অভয়ারণ্য ও বাসস্থান থেকে দূরে রাখতে বহু সংগ্রাম করতে হয়।
তবে ২০৫০ সাল পর্যন্ত গৃহীত পরিকল্পনার অধীনে সরকারি অর্থায়ন এক্ষেত্রে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এর অধীনে 'প্রিডেটর ফ্রি রাকিউরা' প্রজেক্টে অর্থের বিনিময়ে কর্মী ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে এবং নানা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদান করা হয়েছে।
অবশ্য ওয়েলিংটন প্রজেক্টের বাজেটের সাথে তুলনায় রাকিউরাতে প্রদত্ত বাজেটের পরিমাণ বেশ কম। তবুও দেশটির অন্য প্রান্তের তুলনায় দ্বীপটিতে সংরক্ষণবাদীরা স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছে।
২০২০-২১ সালে সিরসেটের পক্ষ হয়ে দ্বীপটির প্রায় ২৬১ জন স্বেচ্ছাসেবক কীটপতঙ্গ ও ইঁদুর দমনে কাজ করেছেন। যেখানে দ্বীপটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ৪৪০ জন।
গত বছর সিরসেটের পক্ষ থেকে দ্বীপটির স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইঁদুর ধরার ফাঁদ বিতরণ করা হয়। একইসাথে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইঁদুর ধরা কিংবা সবচেয়ে বড় দাঁতওয়ালা ইঁদুর ধরা শিক্ষার্থীর জন্য পুরস্কারের ঘোষণার কথাও বলা হয়।
এ বিষয়ে সিরসেটের চেয়ারপার্সন স্যাংস্টার বলেন, "এই তরুণেরা এমন একটা কমিউনিটিতে বড় হচ্ছে যেখানে শিকারি প্রাণী নির্মূল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে থেকে যেটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে তাদের জন্য সেটা প্রতিদিনের জীবনের অংশ।"
শিকারি প্রাণী ইঁদুর দমনে রাকুউরায় বর্তমানের অগ্রগতি বেশ আশাব্যঞ্জক। কিন্তু আগামী ২৭ বছরের মধ্যে লন্ডনের প্রায় সমান আয়তনের দ্বীপটিকে পুরোপুরিভাবে শিকারি প্রাণী মুক্ত করার সম্ভব হবে কি-না, তা নিয়েই অনেকেই সন্দিহান।
এ প্রসঙ্গে অনেকটা উপমার প্রয়োগ করে সিরসেটের চেয়ারপার্সন স্যাংস্টার বলেন, "তারায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রাখলে হয়তো চাঁদে অবতরণ করা যাবে।"
তবে 'প্রিডেটর ফ্রি ২০৫০ লিমিটেড' সংস্থার অধীনে গৃহীত প্রজেক্টটি বাস্তবতার নিরিখে সফল হওয়া ঠিক কতটুকু সম্ভব, তা নিয়ে অনেক সংরক্ষণবাদী শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ঠিক তেমনি একজন জিল্যান্ডিয়া অভয়ারণ্যের প্রতিষ্ঠাতা জেমস লিঞ্চ। তিনি নিজেও শিকারি প্রাণী সম্পূর্ণভাবে নির্মূলের পরিকল্পনার সাথে একমত। তবে তিনি বলেন, "মূল সমস্যা হচ্ছে এটি বাস্তবায়নের জন্য এই মুহুর্তে আমাদের কাছে কোন একদম কার্যকরী টুলবক্স নেই।"
জেমস লিঞ্চ জানান, বেশিরভাগ দেশীয় পাখির অস্তিত্ব রক্ষায় একদম শিকারি মুক্ত পরিবেশের দরকার নেই। যে অল্প সংখ্যক পাখির জন্য এমন পরিবেশের দরকার, সেগুলো দ্বীপ কিংবা শহরে তৈরি করা অভয়ারণ্যে বেঁচে থাকতে পারবে।
পুরো দেশজুড়ে কীট-পতঙ্গ নির্মূলের চেষ্টা না করে বরং পাখিদের বেঁচে থাকার জন্য বেষ্টনী ঘেরা এলাকার চারপাশের বনভূমিতে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন জেমস। ওয়েলিংটনে এ পদ্ধতি বেশ কাজে লেগেছে এবং সারা দেশজুড়ে উপযুক্ত টুলস আসার আগ পর্যন্ত এ পদ্ধতিটি বেশ কাজে লাগবে বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে পুরো দেশ শিকারি প্রাণী মুক্ত করার পরিকল্পনাকে অনেকেই উচ্চাভিলাষী বলে অভিহিত করেছেন। যেমনটা বলেছেন গবেষক ও সংরক্ষণবাদী ওয়াইন লিংকলেটার।
এ সংরক্ষণবাদী গবেষক বলেন, "গত ১৫০ বছর ধরে খরগোশ, হরিণ এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে করা প্রতিটি প্রচেষ্টায় নিউজিল্যান্ড ব্যর্থ হয়েছে।"
লিংলেটার আরও বলেন, "বুদ্ধিমান ও সংবেদনশীল প্রাণীগুলোর নির্মূল করার এ প্রচেষ্টা কেবল অকার্যকরই নয়, বরং নৈতিকভাবেও অনুচিত।"
লিংলেটারের মতে, স্তন্যপায়ী শিকারীদের মধ্যে মানুষই সবচেয়ে আক্রমণাত্মক এবং পদ্ধতিগতভাবে আবাসস্থল ধ্বংসকারী। ঠিক এই প্রাণীটিই কীভাবে অন্য প্রাণীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে?
পরিশেষে লিংলেটার পরামর্শ দেন পুরো দেশ থেকে শিকারি প্রাণী দমনের মতো অকল্পনীয় কৌশল থেকে সরে আসতে। একইসাথে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে তাদের নিজস্ব জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে লক্ষ্য নির্ধারণে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির কথা জানান তিনি।
উদাহরণ হিসেবে লিংলেটার বলেন, "অকল্যান্ডের বাসিন্দারা ইঁদুর থাকলেও হয়তো ঠিকঠাক বসবাস করতে পারবে। অন্যদিকে রাকিউরা দ্বীপের বাসিন্দারা আবার কিউই এবং মাটনবার্ড পাখি রক্ষায় ইঁদুর নির্মূলের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।"