অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড না হলে প্রতিদিন পড়া যাবে না এক হাজারের বেশি টুইট!
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে প্রতিদিন ঠিক কতটি টুইট পড়া যাবে, তার একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে একজন ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড না হলে দিনে এক হাজারের বেশি টুইট পড়তে পারবেন না। খবর বিবিসির।
গতকাল (শনিবার) এক টুইটবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও টুইটারের মালিক ইলন মাস্ক। তবে এটি অস্থায়ী সময়ের জন্য করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
একইসাথে এ নিয়ম অনুযায়ী, নতুন খোলা টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০০ এর বেশি টুইট পড়া যাবে না। আর ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো থেকে দিনে ১০ হাজার টুইট পড়া যাবে।
যদিও প্রথমে এ সংখ্যাটি আরও কম ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মাস্ক এটি বাড়ানোর কথা জানান।
টুইটে মাস্ক বলেন, "চরমভাবে 'ডেটা স্ক্র্যাপিং' এবং 'সিস্টেম ম্যানিপুলেশন' নিরুৎসাহিত করতেই মূলত ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন কতগুলো টুইট পড়তে পারবেন, সেই সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে।"
এর আগে গত শুক্রবার এক ঘোষণায় মাস্ক জানান, টুইট দেখতে হলে ব্যবহারকারীদের অবশ্যই টুইটারে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। তবে এটিকেও তিনি 'সাময়িক জরুরি অবস্থা' বলে অভিহিত করেন।
এসময় মাস্ক অভিযোগ করেন, "কয়েকশ প্রতিষ্ঠান টুইটারের ডেটা 'অত্যন্ত আক্রমণাত্মকভাবে' স্ক্র্যাপ করছে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করছে।"
সিস্টেম ম্যানিপুলেশন ও ডেটা স্ক্র্যাপিং বলতে মাস্ক ঠিক কী বুঝিয়েছেন, সেটা অবশ্য তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত (এআই) প্ল্যাটফর্মগুলো (চ্যাটজিপিটি, বার্ড) টুইটারের ডেটা ব্যবহার করে তাদের ভাষার মডেলগুলোর যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সেটিকে বুঝিয়েছেন।
সহজভাবে বলতে গেলে, ডেটা স্ক্র্যাপিং বলতে ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করাকে বুঝায়। বৃহৎ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের উৎকর্ষ সাধনের জন্য মূলত মানুষের কথোপকথনের বহু তথ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করতে হয়।
সেক্ষেত্রে এআই কোম্পানিগুলো উন্নত ধরণের কথোপকথনের ডেটা সংরক্ষণ ও পর্যালোচনা করতে টুইটার ও রেডিটের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ডেটা ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি বুঝতে পেরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিনামূল্যে যাতে এসব তথ্য এআই প্ল্যাটফর্মগুলো সংগ্রহ করতে না পারে, তাই নানামুখী ব্যবস্থা নিচ্ছে টুইটার ও রেডিট।
গত এপ্রিলে রেডিটের প্রধান নির্বাহী স্টিভ হাফম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, এআই কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ডে তিনি বেশ অসন্তুষ্ট।
হাফম্যান বলেন, "রেডিটে থাকা ডেটাগুলো খুবই মূল্যবান। আমরা এই মূল্যবান ডেটাগুলো বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলোকে বিনামূল্যে প্রদান করতে চাই না।"
ইতোমধ্যেই টুইটারের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেজ (এপিআই) এ প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমনকি সুবিধাটি অনেক ক্ষেত্রে এআই কোম্পানি, অন্য থার্ড পার্টি অ্যাপসসহ বহু গবেষক ব্যবহার করছেন।
অন্যদিকে মাস্ক বহুদিন থেকেই টুইটার ব্যবহারকারীদের অর্থের বিনিময়ে 'ব্লু ব্যাজ' নিতে উৎসাহিত করছেন। এখন প্রতি মাসে ৮ ডলার সাবক্রিপশন ফি পরিশোধের মাধ্যমে যে কেউ টুইটার অ্যাকাউন্টে 'ব্লু ব্যাজ' যুক্ত করতে পারেন।
সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে যে, টুইট দেখার পরিমাণ সীমিত করাসহ নানা শর্ত যুক্ত করে ব্যবহারকারীদের মধ্যে অর্থের বিনিময়ে টুইটারের পূর্ণ সেবা প্রাপ্তির একটি মানসিকতা তৈরি করতে চাচ্ছেন মাস্ক।
গত বছর বহু নাটকীয়তার পর ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টুইটার কিনে নেন মাস্ক। প্ল্যাটফর্মটির মালিকানা গ্রহণ করেই এতে বেশকিছু পরিবর্তন আনেন বিশ্বের শীর্ষ এ ধনকুবের।
মাস্ক টুইটার কেনার পর থেকে প্ল্যাটফর্মটির কর্মী সংখ্যা ৮ হাজার থেকে মাত্র দেড় হাজারে কমিয়ে আনা হয়েছে। এমনকি তিনি প্ল্যাটফর্মটি থেকে বহু প্রকৌশলীকেও চাকরীচ্যুত করেছেন যা প্ল্যাটফর্মটির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বহু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।