জেনিনে ইসরায়েলি অভিযানের ব্যাপকতায় জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর ‘উদ্বেগ’
পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলের পরিচালিত বড় পরিসরের সামরিক অভিযানে এপর্যন্ত অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চলমান এই অভিযানের ব্যাপকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েল এই অভিযানে বড় সংখ্যায় ড্রোন বিমান ও শত শত সেনাকে নিয়োজিত করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) দ্বিতীয় দিনে পৌঁছায় এই অভিযান। এই প্রেক্ষাপটে জেনিন শরণার্থী শিবিরের কয়েক হাজার অধিবাসীকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তরের একজন মুখপাত্র ভেনেসা হুগোয়েনিন বলেন, 'অধিকৃত পশ্চিম তীরে আকাশ ও স্থলপথে চলা অভিযানের ব্যাপকতা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ঘনবসতিপূর্ণ ওই ক্যাম্পে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে।" হামলায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুকিশোর রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে তাদের বয়স সম্পর্কে কিছু বলেননি।
ভেনেসা বলেন, বিমান হামলার ফলে ক্যাম্পের বেশিরভাগ অংশে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা ৩,০০০ অধিবাসীকে ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নিতে পেরেছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস বলেছে, 'জেনিনে সশস্ত্র সংঘাত তীব্রতা লাভের ঘটনায় আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন'।
অভিযানে হতাহতদের চিকিৎসার সুযোগে বাধা সৃষ্টি নিয়ে আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চিকিৎসা-ভিত্তিক দাতব্য এমএসএফ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমায়ার বলেন, 'স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর ওপর হামলা এবং আহতদের চিকিৎসায় বাধাদানের বিষয়টি খুবই আশঙ্কাজনক'। ইসরায়েলি বাহিনীর আরোপিত বিধিনিষেধের ফলে জরুরি চিকিৎসা সেবাদানকারীরা ক্যাম্পে গুরুতর আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চিকিৎসা-ভিত্তিক দাতব্য এমএসএফ জানিয়েছে, ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তাগুলো সামরিক বুলডোজার দিয়ে ধবংস করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ফলে অ্যাম্বুলেন্স আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
'প্রতিকূল এই অবস্থায়, গুলিবর্ষণ ও ড্রোন হামলার মধ্যেই পায়ে হেঁটে রোগীদের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ফিলিস্তিনি প্যারামেডিকরা' - আরও বলা হয় তাদের বিবৃতিতে।
এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, জেনিন ক্যাম্পে ইরানের সমর্থনে গড়ে ওঠা সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোকে নির্মুল করতে এই অভিযান চালাচ্ছে তারা। এসব গোষ্ঠীই ইসরায়েলিদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে বন্দুক ও বোমা হামলা চালিয়েছে। একইসঙ্গে, ক্যাম্পে রকেট তৈরির প্রাথমিক চেষ্টাও তারা গুঁড়িয়ে দিতে চায়।
জেনেভায় ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিশন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এক বিবৃতিতে জানায়, 'মানবিক সহায়তা যেন পৌঁছানো সম্ভব হয়, তা নিশ্চিত করে ইসরায়েল। তবে যেসব জায়গায় গুলি বিনিময় চলার কারণে চিকিৎসা কর্মীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে, সেখানে প্রবেশ ছাড়া চিকিৎসা কর্মীদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি'।