ইউক্রেনের বন্দরগামী সব জাহাজকে হুমকি রাশিয়ার, বেড়ে গেছে গমের দাম
ইউক্রেনের বন্দরগামী জাহাজকে সম্ভাব্য সামরিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে গণ্য করে জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালানো হবে—রাশিয়ার এই ঘোষণার পরপরই বিশ্ববাজারে গমের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে।
সোমবার কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় মস্কো। এ চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্যের নিরাপত শিপমেন্ট নিশ্চিত করা হতো।
গত তিন রাত ধরে ওডেসাসহ অন্যান্য শহরে ইউক্রেনের শস্য টার্মিনালগুলোতে বোমা হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
মস্কো এ-ও ঘোষণা দিয়েছে যে বৃহস্পতিবার থেকে ইউক্রেনের বন্দরগামী যেকোনো জাহাজকে 'কিয়েভ শাসকের' পক্ষের হিসেবে দেখা হবে।
রাশিয়ার এ ঘোষণায় বুধবার ইউরোপীয় স্টক এক্সচেঞ্জে বুধবার গমের দাম আগের দিনের চেয়ে ৮.২ শতাংশ বেড়ে প্রতি টনের দাম ২৫৩.৭৫ ইউরোতে উঠে যায়। এদিন শস্যের দাম বাড়ে ৫.৪ শতাংশ।
ইউএস হুইট ফিউচারস বেড়েছে ৮.৫ শতাংশ। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর দৈনিক এটাই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।
এর আগের ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, তার দাবি মেনে নেওয়া হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক শস্যচুক্তিতে ফিরবেন।
পুতিনের অন্যতম দাবির মধ্যে রয়েছে: রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং রাশিয়ার কৃষি ব্যাংককে ফের আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া।
এদিকে কৃষ্ণসাগরের উপকূলীয় শহরগুলোতে টানা তিন রাতের মতো বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
গত কয়েকদিন দক্ষিণ ইউক্রেনের বন্দর ও শস্য অবকাঠামোগুলোতে ব্যাপক পরিসরে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অভ ওয়ার বলেছে, রাশিয়ার এ হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে কিয়েভের কৃষিপণ্য রপ্তানির সক্ষমতা খর্ব করা।
ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয় বুধবার বলেছে, রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের ওডেসা বন্দর ও অন্যান্য শহরের ৬০ হাজার টন শস্য ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্ষুধার্ত মানুষকে বিপদে ফেলবে।
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি-প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, রাশিয়ার চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।
ডাচ ঋণদাতা রাবোব্যাংক-এর কৃষিপণ্য মার্কেট-এর প্রধান কার্লোস মেরা সোমবার বলেছিলেন, 'ইউক্রেনকে এখন অধিকাংশ খাদ্যশস্য ও তেলবীজ তার স্থল সীমান্ত দিয়ে পরিবহন করতে হবে। এতে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে, ইউক্রেনীয় কৃষকদের মুনাফার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হবে।'
তিনি বলেন, এর পরোক্ষ প্রভাব হবে এমন: আগামী মৌসুমে হয়তো কৃষকরা কম ফসল ফলাবেন। এতে শস্য সরবরাহের ওপর আরও চাপ তৈরি হবে।
এর ফলে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের নিম্ন আয়ের দেশগুলো শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার গমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন মেরা। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মোট গম রপ্তানির ২০ শতাংশের বেশি করে থাকে রাশিয়া।