গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর প্রথম চীন সফরে যাচ্ছেন পুতিন
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রথম চীন সফরে যেতে রাজি হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন ব্যক্তি জানিয়েছেন, আগামী অক্টোবরে বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে অংশ নেওয়ার জন্য পুতিনের চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্রেমলিন। এই ইভেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন পুতিন।
নেদারল্যান্ডসের হেগের আদালত গত মার্চে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে রাশিয়া ত্যাগ করেননি পুতিন; যদিও তিনি ইউক্রেনের রাশিয়া-অধিকৃত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনেও যোগদান করেননি পুতিন। কারণ সেখানকার সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিল যে, আইসিসিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ মেনে চলতে হবে। এছাড়াও পুতিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন, তিনি আগামী মাসে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনেও অংশ নেবেন না।
এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান চলতি মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন যে তিনি আগস্টে পুতিনকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। কিন্তু এর পরিবর্তে এরদোয়ান নিজেই পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার সোচিতে আসার পরিকল্পনা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেননি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তাদের নিয়মিত কর্মঘণ্টার বাইরে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে পুতিন শুধুমাত্র সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিবেশি দেশগুলোতে এবং ইরানে ভ্রমণ করেছেন; ইরান রাশিয়ান সামরিক বাহিনীকে ড্রোন সরবরাহ করছে।
পুতিন সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীন সফর করেছিলেন- এর তিন সপ্তাহেরও কম সময় পরেই তিনি ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশ দেন। ঐ সময় চীনের বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং দুই নেতা মুখোমুখি সাক্ষাতের পর একটি 'নো-লিমিট' অংশীদারিত্বের ঘোষণা করেন।
চলতি বছরের মার্চে একটি রাষ্ট্রীয় সফরে মস্কোতে গিয়েছিলেন শি জিনপিং। চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই ছিল তার প্রথম বৈদেশিক সফর; এবং জিনপিং তখন বলেছিলেন যে তার প্রত্যাশা, এবছর শেষ হওয়ার আগেই পুতিন চীন সফরে আসবেন।
উপরে উল্লিখিত তিন ব্যক্তির মধ্যে দুজন জানিয়েছেন, পুতিন শুধুমাত্র সেইসব দেশেই যেতে ইচ্ছুক যেখানে তার সিকিউরিটি সার্ভিস তার পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে; আর চীন সেরকমই একটি দেশ।
ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, ফোরামে অংশগ্রহণের জন্য পুতিনের চীন সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস-এর গত মে মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেছেন, চীন রুশ প্রেসিডেন্টকে এই অনুষ্ঠানে 'প্রধান অতিথি' হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই রাশিয়াকে কূটনৈতিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে চীন, যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের অবসানের জন্য যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আহ্বানসহ ১২ দফা প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকে নিজেদেরকে নিরপেক্ষ দাবি করতে চাইছে চীন।
শি জিনপিং গত মাসে বেইজিংয়ে রাশিয়ান ফেডারেশন কাউন্সিলের স্পিকার ভ্যালেন্তিনা ম্যাতভিয়েঙ্কোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি মে মাসে বেইজিংয়ে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং বলেন, উভয় পক্ষেরই উচিত জাতিসংঘ, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন, ব্রিকস এবং জি-২০সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমন্বয় জোরদার করা।