মার্কিন বন্দী বিনিময়ে ৬ বিলিয়ন ডলার স্থানান্তরের অনুমতি পেল ইরান
ইরানে আটক পাঁচ মার্কিন নাগরিকের মুক্তির বিনিময়ে অবশেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় আটকে থাকা তেহরানের ৬ বিলিয়ন ডলারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ওয়াশিংটন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই অর্থ কাতারের ব্যাংকগুলোতে স্থানান্তরের মাধ্যমে হাতে পাবে ইরান।
চুক্তির অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রে আটক পাঁচ ইরানী নাগরিককেও মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
মার্কিন ও ইরানী কর্মকর্তাদের মধ্যে বন্দী বিনিময় সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্তের মাসখানেক পর, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গেল সপ্তাহের শেষের দিকে ইরানী অর্থের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে স্বাক্ষর করেন। গণমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবগত ছিল না কংগ্রেস।
যদিও আগেই, চুক্তির রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ইরানী অর্থের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি আশা করা হচ্ছিল; তবে চুক্তির অংশ হিসাবে পাঁচ ইরানী বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নতুন যোগ হয়েছে। বন্দীদের নাম এখনও জানা যায়নি।
এদিকে, ইরানের জব্দকৃত অর্থ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হওয়ায় বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছে মার্কিন রিপাবলিকান দল। তারা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা ও মিত্র দেশগুলোর জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরান। আর এই চুক্তির মাধ্যমে অর্থ ছাড়া পেলে দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ইরানের জব্দকৃত অর্থের ওপর ওয়েবারের অর্থ হল– দক্ষিণ কোরিয়ায় আটকে থাকা ইরানী অর্থ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কাতারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না তেহরান; তবে এই অর্থ কেবল মানবিক কাজের (হিউম্যানিটারিয়ান গুডস) জন্যই ব্যয় করতে পারবে দেশটি।
চুক্তিতে যে পাঁচ আমেরিকান বন্দীর মুক্তির কথা বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে চারজনকে গত মাসে ইরানের কারাগার থেকে গৃহবন্দী অবস্থায় নেওয়া হয়। বাকি আরেকজন ইতোমধ্যেই গৃহবন্দী ছিলেন।
এই আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আশা, আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকেই আটকদের মুক্তি দেওয়া হবে।
মার্কিন বন্দীদের মধ্যে রয়েছেন– সিয়ামক নামাজি, ২০১৫ সালে তাকে আটকের পর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়; এমাদ শার্ঘি নামের একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টকেও ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং তৃতীয় বন্দী ইরানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান কনজারভেশনিস্ট মুরাদ তাহবাজ, ২০১৮ সালে গ্রেপ্তারের পর তাকেও ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। চতুর্থ ও পঞ্চম বন্দীদের পরিচয় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন জানান, "তাদের মুক্তির সুবিধার্থে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী পাঁচ ইরানী নাগরিককে মুক্তি দিতে এবং (দক্ষিণ কোরিয়া)-তে আটকে থাকা ইরানী তহবিলের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার কাতারে নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা অ্যাকাউন্টগুলোতে স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে; এই তহবিল কেবল মানবিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে।"
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, কাতার এবং সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে।