ফার্নান্দো বোতেরো: স্থুলকায় ভাস্কর্য ও চিত্রকর্মের জন্য বিখ্যাত শিল্পীর জীবনাবসান
আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত কলম্বিয়ান শিল্পী ফার্নান্দো বোতেরো ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল (শুক্রবার) সাংবাদিক জুলিও সানচেজ ডব্লিও রেডিওতে খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
ফ্রান্সের মোনাকোতে অবস্থিত তার নিজের বাড়িতে বিখ্যাত এই চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বোতেরোর জন্ম ১৯৩২ সালে কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরে। শিল্পের জগতে তিনি নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন। স্থুল স্বাস্থ্যের বিষয়বস্তু তার ভাস্কর্য এবং চিত্রকর্মকে অন্য সবার থেকে পৃথক করেছে।
২০১৯ সালে এল পাইসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোতেরো বলেন, 'আনন্দ ও সুন্দর অনুভূতি তৈরি করাই শিল্পকর্মের কাজ। এক্ষেত্রে আমি চিত্রকর্মে মূলত নাটকীয় জিনিসগুলো ফুটিয়ে তুলতেই বেশি চেষ্টা করেছি। আমার কাজে সবসময় নান্দনিকতার খোঁজ করেছি। আমি হিংসা, অত্যাচার ইত্যাদি নিয়ে এঁকেছি। কেননা এমন নাটকীয় চিত্রকর্মে এক প্রকার আলাদা আনন্দ রয়েছে।"
২০১৯ সালে বোতেরোকে নিয়ে তৈরি করা এক তথ্যচিত্রে তার মেয়ে লিনা বোতেরো বলেন, "আমার বাবার জীবনের গল্পটা বেশ অনুপ্রেরণামূলক। তিনি একেবারে শুন্য থেকে সবকিছু শুরু করেছিলেন। তবে শিল্পের প্রতি তার অনুরাগ ও আবেগ ছিল। এই সবই তাকে শিল্প জগতের প্রথাগত ধারার বিপরীতে যেয়ে আপন শক্তিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
বোতেরো জীবনের দীর্ঘ ৭০ বছর নিজেকে শিল্পচর্চায় নিয়োজিত করেছেন। ভাস্কর্য, তৈলচিত্র, প্যাস্টেল, জলরঙ এবং অঙ্কনসহ শিল্পের নানা শাখায় তার বিচরণ রয়েছে।
বোতেরোর শিল্পজগতের শুরুটা হয়েছিল ১৯৪০ এর দশকে, এল কলম্বিয়ানো নামের একটি পত্রিকার তরুণ চিত্রকার হিসাবে। তবে খুব শীঘ্রই তিনি নিজেকে ইতালীয় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পিয়েরো ডেলা ফ্রান্সেসকার উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই শিল্পকর্মে তার প্রতিভার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে।
বোতেরো সমসাময়িকদের মধ্যে অন্যতম সেরা শিল্পীদের একজন হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকে তার বিশাল ও আইকনিক ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলি বিশ্বের প্রধান প্রধান রাজধানীগুলিতে প্রদর্শিত হতে শুরু করে।
নিজেকে এতবড় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেকটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে বোতেরোকে। ১৯৬০ এর দশকে মাত্র ২০০ ডলার নিয়ে নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭০ এর দশকে বোতেরো নিউ ইয়র্ক ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমান। সেখানেই তার জীবনের সবচেয়ে বিষাদময় ঘটনাটি ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি তার সন্তান পেদ্রোকে হারান।
দুর্ঘটনায় বোতেরোর ডান হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ফলে দীর্ঘ সময় তাকে নিজের কাজ থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল। ওই অবস্থা থেকে সেরে উঠলেও তিনি সন্তান হারানোর শোক ভুলতে পারছিলেন না। স্টুডিওতে দীর্ঘসময় নিজেকে একঘরে করে রেখে ছেলের ছবি আঁকতেন তিনি।
জীবদ্দশায় বোতেরো মেক্সিকো, নিউ ইয়র্ক, মোনাকো ও প্যারিসে বসবাস করেছেন। তবে নিজের শেকড়, নিজের জন্মভূমি কলোম্বিয়াকে তিনি কখনোই ভুলে যাননি। বরং ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে ম্যাডেলিনের কাটানো শৈশবের স্মৃতি তার কাজে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
দেশপ্রেমের নিদর্শনস্বরূপ বোতেরো নিজের কাছে থাকা সকল শিল্পকর্ম কলম্বিয়ায় দান করেছিলেন। যেটিকে অনেকেই তার জীবনের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করে থাকেন।