আপনার জিভের রঙ কী? জানুন কোনটি স্বাস্থ্যকর আর কোনটা না
চোখকে বলা হয় মনের জানালা। ঠিক তেমনি দেহের অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের চটজলদি আন্দাজ করতে জিভ বেশ কার্যকরী। এক্ষেত্রে অঙ্গটির বাহ্যিক রঙ থেকেই বহু লক্ষণ বোঝা সম্ভব হয়।
জিভের আকারে অনেকটা প্রতিসম আকৃতির। এটি সাধারণত হালকা গোলাপী রঙের হয়ে থাকে। তবে আফ্রিকান, এশিয়ান ও ভূমধ্যসাগরীয় মানুষের জিভ কিছুটা বেগুনি বা বাদামী রঙেরও হতে পারে। একইসাথে এর বাইরের দিকে থাকে অনেকটা সাদা আবরণ।
এ সম্পর্কে হার্ভার্ড স্কুল অফ ডেন্টাল মেডিসিনের ডাঃ তিয়েন জিয়াং বলেন, "জিভের সাদা আবরণটি মূলত কেরাটিন নামক একটি শক্ত প্রোটিন থেকে তৈরি। এটি খাওয়ার সময় আমাদের জিভে আঁচড় থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।"
জিভ প্যাপিলি দ্বারাও আবৃত থাকে। এটি একদিকে তাপমাত্রা, স্পর্শ অনুধাবনে কাজ করে। একইসাথে খাবারের মিষ্টি, নোনতা, টক কিংবা তেতো স্বাদ বুঝতেও সাহায্য করে। এছাড়াও ঘর্ষণের মাধ্যমে ছোট ছোট খাবারের দলা তৈরি করে গিলতে সহায়তা করে।
এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের ফলে জিভের রঙে পরিবর্তন আসতে পারে। কেননা অঙ্গটিতে থাকা প্যাপিলি খাবার ও পানীয়ের রং কিংবা অবশিষ্টাংশ শোষণ করতে পারে। যেমন, চা-কফি পান করলে কিংবা প্রচুর হলুদ দিয়ে রান্না করা তরকারি খেলে সেটির ছাপ জিভে দেখা যেতে পারে।
তবে জিভের এমন বিবর্ণ রঙ সাধারণত অস্থায়ী। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে কিংবা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখলে জিভে লেগে থাকা খাবার কিংবা রঞ্জকগুলি পরিস্কার হয়ে যায়।
তবে স্বাভাবিকের চেয়ে জিভে স্থায়ীভাবে ভিন্ন ধরণের রঙ দেখা দিলে ক্ষেত্রবিশেষে উদ্বেগের কারণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রঙ নির্দিষ্ট কোনো শারীরিক সমস্যাকে নির্দেশ করে।
যেমন, জিভে প্যাপিলি যখন বৃদ্ধি পায় তখন অঙ্গটির রঙ কালো কিংবা বাদামী হয়ে যেতে পারে। এমতবস্থায় প্যাপিলিতে ব্যাকটেরিয়া ও খাবারের রঞ্জক উপাদান বেশি আটকে যায়। মূলত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ, ধূমপান কিংবা খুব বেশি পরিমাণে চা-কফি পানের ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
আবার অনেক সময় জিভে পুরু সাদা ছোপ কিংবা ঘায়ের মতো দেখা যায়। সাধারণত মুখে ইস্টের পরিমাণ বৃদ্ধি গেলে এই অবস্থায় সৃষ্টি হয়। মূলত ডায়াবেটিস, এইচআইভির লক্ষণ হিসেবে এটি দেখা যেতে পারে। এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ, ক্যান্সারের চিকিৎসা, ধূমপান ইত্যাদির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এটি দেখা যেতে পারে। যদিও সম্ভবনা খুবই কম, তবুও ওরাল ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে জিভে সাদা দাগ বা ঘায়ের সৃষ্টি হতে পারে।
আবার জিভের রঙ উজ্জ্বল লাল হলে সেটি ভিটামিন বি-১২ ঘাটতির বা স্কারলেট ফিভার সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করতে পারে। অন্যদিকে অনেক সময় জিভে উজ্জ্বল লাল বর্ণের ছোপ দেখা যায়। এটি ব্যাথা না করলেও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়। এটি মূলত 'জিওগ্রাফিক্যাল টাং' নামের দুরারোগ্য একটি রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
তাই জিভের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে দিনে অন্তত দুইবার ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশের সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য জিভে ঘষা দিতে হবে।
এ সম্পর্কে ডাঃ জিয়াং বলেন, "ব্রাশ করার সময় জিভ বের করে টুথব্রাশ দিয়ে জিভের পেছন থেকে সামনে, মাঝখান থেকে নিচের দিকে, বাম দিকে নিচের দিকে, ডানদিকে নিচের দিকে এমনভাবে সোয়াইপ করতে হবে। এর ফলে প্যাপিলে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ধ্বংসাবশেষ দূর হবে।"
যদি জিভে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তবে হেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ চিকিৎসক কিংবা ডেন্টিস্ট রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে লক্ষণ বিবেচনায় উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করবেন।