সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল কানাডা: অভিযোগ ভারতের
খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা হরদীপ সিং খুনের জেরে ভারত ও কানাডার মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। কূটনৈতিকদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারসহ ইতিমধ্যেই কানাডীয়দের ভিসা প্রদান বন্ধ করেছে নয়াদিল্লি। এরই মাঝে কানাডাকে সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে অভিহিত করেছে ভারত।
গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেওয়া এক শক্ত বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এমন অভিযোগ করেন। একইসাথে কানাডাকে নিজেদের আন্তর্জাতিক খ্যাতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
অরিন্দম বাগচী বলেন, "কোনো দেশের সম্মান কিংবা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়া নিয়ে যদি ভাবতে হয়, তবে সেটি কানাডার করা উচিত। দেশটি সন্ত্রাসী, চরমপন্থী এবং সংগঠিত অপরাধের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে দিন দিন 'খ্যাতি' অর্জন করছে।"
কানাডায় অবস্থানরত ভারতের কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা হুমকির অভিযোগ তুলেছিল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারই পাল্টা জবাব হিসেবে কানাডীয় নাগরিকদের ভিসা আবেদন স্থগিত করে ভারত।
এ প্রসঙ্গে অরিন্দম বাগচী বলেন, "সহিংসতার উসকানি প্রদান, কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা এবং আমাদের হাই কমিশন ও কনস্যুলেটগুলির কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তাই ভিসা প্রদান বা ভিসা পরিষেবা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।"
বিএলএস ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রক্রিয়াগত কারণ উল্লেখ করে ভিসা পরিষেবা স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে ভারতীয় মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, "পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত' ভিসা পরিষেবা (কানাডার নাগরিকদের জন্য) স্থগিত থাকবে।"
চলতি বছরের ১৮ জুন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন কানাডায় বসবাসকারী শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজ্জর। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।
ভারত সরকারের অভিযোগ, হরদিপ সিং সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস-এর কানাডা শাখার নেতা ছিলেন। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করতেন তিনি। এ লক্ষ্যে নিজ্জর ভারতে বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ভারত সরকারের। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন নিজ্জর।
গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হাউজ অব কমন্সের সভায় জানায়, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা নিজ্জরের হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার 'বিশ্বাসযোগ্য' প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে। তবে কানাডা সরকারের এমন অভিযোগকে 'অযৌক্তিক' বলে নাকচ করে দিয়েছে ভারত।
এর জের ধরে ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কারের পরদিন মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পাল্টা জবাব হিসেবে কানাডার এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত সরকার।
এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রুডোর মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
বিবৃতিতে অভিযোগ তোলা হয়েছে, কানাডা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরুপ 'খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের' আশ্রয় দিয়ে আসছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, 'কানাডার মাটিতে চলতে থাকা সব ধরনের ভারতবিরোধী কাযর্কলাপরে বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কানাডা সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।'
ভারতে ১৯৮০'র দশকে খালিস্তান আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং দেশটির শিখ-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাব রাজ্যে সহিংস বিদ্রোহ শুরু করেন এই আন্দোলনের কর্মীরা। এ আন্দোলন দমনের জন্য শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে ভারতের সরকারি বাহিনীর সবচেয়ে রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ঐ বছরের পহেলা জুন অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির চত্বরে সেনা প্রবেশ করে, শুরু হয় অপারেশন ব্লু স্টার।
কিন্তু বলপ্রয়োগ করে দমন করা হলেও কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে প্রবাসী শিখ সম্প্রদায়ের কাছে খালিস্তানের ধারণাটি আজও জনপ্রিয়। পাঞ্জাবের বাইরে কানাডায় শিখদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং খালিস্তানপন্থী বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সেখানে দেখা গিয়েছে। গত জুনে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত কানাডায় তাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে 'আনুষ্ঠানিক অভিযোগ' জানিয়েছে।