‘জরুরি অবস্থার চেয়েও বেশি ভয়ানক’: সাংবাদিকদের বাড়িতে অভিযান প্রসঙ্গে অরুন্ধতী
চীনা অর্থায়নের পরিচালনার অভিযোগে সন্ত্রাস দমন আইনে ভারতের সংবাদ পোর্টাল নিউজক্লিক-এর সম্পাদকসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। এছাড়াও গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওই পোর্টালের প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক ও নিয়মিত লেখকদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।
সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশটির বহু সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল (বুধবার) অনেকেই দিল্লির প্রেসক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভও করেছেন।
এ সম্পর্কে অরুন্ধতী রায় গণমাধ্যম দ্য ওয়্যারকে বলেন, "ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার চেয়েও বেশি ভয়ানক।"
অরুন্ধতী রায় মনে করেন, জরুরি অবস্থা শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আরোপ করা হয়। কিন্তু বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদি মূলত ভারত রিপাবলিকের 'প্রকৃতি' পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। দলটি যদি ফের ক্ষমতায় যায়, তবে তারা সংবিধান ও জনগণের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সবাইকে সতর্ক করে অরুন্ধতী রায় বলেন, "বিজেপি যদি ২০২৪ নির্বাচনে জয়লাভ করে, তবে ভারত আর গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে না।"
বিখ্যাত এ লেখিকা মনে করেন, ভারতের মূলধারার মিডিয়া এখন আর মিডিয়ার মতো নেই। নিউজক্লিক প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর পুরকায়স্থ ও ওয়েব পোর্টালটির এইচআর হেড অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ডিজিটাল স্পেসে থাকা সাংবাদিকেরা সাংবাদিকতায় একটি নতুন ধারা শুরু করেছেন যা সরকারকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে।"
অরুন্ধতী রায় বলেন, "সাংবাদিকতা ও সন্ত্রাসের মধ্যে কোনো সীমারেখা থাকবে না এটা কীভাবে সম্ভব? কোনো রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই পুলিশ সাংবাদিকদের ডিভাইস কীভাবে জব্দ করতে পারে? কোনো এফআইআর দেওয়া হয়নি এবং অভিযোগও উল্লেখ করা হয়নি। কারণ তাদের ওপর কঠোর ইউএপিএ আইন আরোপ করা হয়েছে।"
অরুন্ধতী রায় মনে করেন, সংবাদপত্রের ওপর এ ধরনের আচরণের অর্থ হচ্ছে 'শুধু সরকারের পক্ষে যে সংবাদ, সেটাই জনগণের কাছে পৌঁছানো উচিত' এমন বার্তা দেওয়া। একইসাথে নিউজক্লিক-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে অভিযানই প্রমাণ করে যে, মোদি সরকার বেশ ভয়ে আছে।
অরুন্ধতী রায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "এখন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত (পাঁচটি রাজ্য সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে) এবং পরবর্তী বছরের মে পর্যন্ত (যখন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে) আরও বহু গ্রেফতার করা হবে।"
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ অবশ্য মনে করেন, নিউজক্লিক-এর সাংবাদিক ও লেখকদের বাড়িয়ে অভিযান বেশ কয়েকটি দিক বিবেচনায় অবৈধ। তিনি বলেন, "যদি অভিযোগ এমন হয়ে থাকে যে, নিউজক্লিক চীন থেকে অর্থ পেয়েছে, তাহলে তো ইউএপিএ আইনের অধীনে এটি কোনো অপরাধ নয়। শিশুদের জন্য ভারত সরকারের উদ্যোগ 'পিএম কেয়ারস'-এও তো চীনা কোম্পানির পক্ষ থেকে অর্থ এসেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, আদানিও একইভাবে চীন থেকে অর্থ পেয়ে থাকে।"
নিউজক্লিক-এর সাথে শুধু অনলাইনে যুক্ত আছেন এমন সব সাংবাদিকের ল্যাপটপ জব্দ করাকে পুরোপুরি অবৈধ বলে মনে করেন প্রশান্ত ভূষণ। তিনি বলেন, "এটা স্বাধীন গণমাধ্যমকে হুমকি দেওয়ার একটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। এটা সফল হবে না"
অন্যদিকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়টিকে স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর মোদি সরকারের হস্তক্ষেপের আরেকটি নজির মনে করছে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভীত হয়ে পড়েছেন বলেও দাবি করেছে দলটি।
গত মঙ্গলবার ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির অফিশিয়াল এক্স (অধুনালুপ্ত টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, "প্রধানমন্ত্রী মোদি ভীত ও নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে সেই সব মানুষদের প্রতি যারা তার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিরোধী নেতাই হোক কিংবা সাংবাদিক, সত্য বললেই তাকে হয়রানির শিকার হতে হবে। সাংবাদিকদের বাড়িতে তল্লাশির মাধ্যমে বিষয়টি আজ আবারও প্রমাণিত হলো।"
প্রবীণ সাংবাদিক প্রবীর পুরকায়স্থ ২০০৯ সালে নিউজক্লিক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিউজ ওয়েবসাইটটির প্রধান সম্পাদকও। এটি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনা করার জন্য পরিচিত। তারই ধারাবাহিকতায় নিউজক্লিক বিতর্কিত কৃষি আইন, দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা, চীনের লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশে অনুপ্রবেশ ও মণিপুর ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।