ভারতের রাষ্ট্রপতিও যোগ দিলেন বিতর্কে: ৫০ বছর পরও কেন জরুরি অবস্থা নিয়ে এত আলোচনা
গত কয়েকদিন ভারতের রাজনীতিতে জরুরি অবস্থা নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল, তাতে এবার যোগ দিলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই হাউজের যৌথ সভায় তিনি বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জারি করা জরুরি অবস্থা ছিল ভারতের সংবিধানের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত এবং একটি দাগ।
এ বছর সাধারণ নির্বাচনে নতুন লোকসভা নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে এটি তার প্রথম ভাষণ। যৌথ অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভার এমপিরা যোগ দেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণকে সরকারি দলের এমপিরা উল্লাসের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানান। তবে বিরোধীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
জরুরি অবস্থা নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেসের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্কের পটভূমিতে পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা কয়েকদিন ধরে যখন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থার ভয়াবহতার ওপর জোর দিচ্ছেন, তখন কংগ্রেস এবং এর মিত্ররা বলছে যে, নরেন্দ্র মোদির সরকার গত ১০ বছরে একটি 'অঘোষিত জরুরি অবস্থা' জারি রেখেছে।
গত ২৫ জুন ছিল ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকী। এ কারণে পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে ওই জরুরি অবস্থা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। ভারতীয় গণমাধ্যমেও এ নিয়ে নানা খবরের পাশাপাশি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরা হচ্ছে।
জরুরি অবস্থার বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে চলতি সপ্তাহে জরুরি অবস্থা তথা কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে স্বভাবতই সরব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশেষ করে লোকসভায় তার শপথের সময় বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী মোদিকে সংবিধান দেখিয়ে সংবিধান মেনে চলার ইঙ্গিত দেখানোর পর তা আরও জোরালো হয়।
এ বাহাস আনুষ্ঠানিক রূপ নেয় অধিবেশন শুরুর পর।
বুধবার লোকসভায় দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকারের দায়িত্ব পেয়ে ওম বিড়লা জরুরি অবস্থার সমালোচনা করে নিন্দা প্রস্তাব পাসের মধ্য দিয়ে সংসদের কার্যবিবরণীতে বিষয়টি নথিবদ্ধ করে রাখেন। এ নিয়ে নতুন লোকসভার প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনই হট্টগোল দেখে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ।
ফিরে দেখা: ভারতের জরুরি অবস্থা
১৯৭৫ সালের ১২ জুন এলাহাবাদ হাইকোর্ট অনিয়মের অভিযোগে রায়বেরিলি থেকে ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচিত হওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। আপিলে সুপ্রিম কোর্ট তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব চালিয়ে যেতে বললেও সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার আদেশ দেন।
এমন প্রেক্ষাপটে ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলী আহমেদ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। সাতাত্তরের ২১ মার্চ পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থায় হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, চরমভাবে লঙ্ঘিত হয় মৌলিক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার।
একে ভারতের ইতিহাসে 'কালো অধ্যায়' হিসেবে দেখা হয়।
ফল হিসেবে পরবর্তী নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস নির্বাচিত হতে পারেনি। রায়বেরিলি থেকে ইন্দিরা গান্ধী নিজেও হেরে যান। তবে ইন্দিারবিরোধী জোট সরকার নিজেদের মধ্যে মতভেদের কারণে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। ১৯৮১ সালে আবারও নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন ইন্দিরা গান্ধী।