হামাস কী চায়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কারা তাদের সমর্থন দিচ্ছে?
শনিবার ভোর থেকে ইসরায়েলে অতর্কিত আক্রমণ করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ ভেদ করে এই প্রথম কোনো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এত বড় পরিসরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। ইসরায়েলও প্রতিশোধ হিসেবে গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করছে। চলমান প্রচণ্ড লড়াইয়ে এপর্যন্ত উভয়পক্ষে ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। হতাহত বহু, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় শুধু গাজাতেই আহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে।
দশকের পর দশক ধরে ইসরায়েলের চালানো বর্বরতা ও নৃশংসতার জবাব দিতে হামাস এই লড়াই শুরু করার কথা জানিয়েছে। হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আল জাজিরাকে বলেছেন, 'কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা যে নৃশংসতার মুখোমুখি হয়েছে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চালানো হয়েছে এ আক্রমণ। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে, গাজায়, আমাদের পবিত্র স্থান আল-আকসায় নৃশংসতা বন্ধ করুক। এ যুদ্ধ শুরুর পেছনের কারণ এসবই' – বলেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে হামাসের ইতিহাস, সাংগঠনিক দর্শন, আদর্শ এবং তাদের সংগ্রাম সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক…
হামাসের যাত্রা শুরু যেভাবে
মিশরের ইসলামী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড। দখলদার ইসরায়েলিদের কাছে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি মিশরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্রাদারহুডের আদর্শে দীক্ষা নেন। ১৯৮৭ সালে এমনই দুজন আহমেদ ইয়াসিন ও আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি প্রতিষ্ঠা করেন হামাস। হামাস হচ্ছে- 'হারকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া'- এর সংক্ষেপ, যার অর্থ ইসলামী নবজাগরণের আন্দোলন।
হামাস শব্দের অর্থ – উদ্দীপনা, গভীর দেশপ্রেম। সাংগঠনিক সনদ অনুযায়ী, দখলদার ইসরায়েলি রাষ্ট্রকে উৎখাত করে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করাই হামাসের লক্ষ্য। পরবর্তীতে অবশ্য সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমানায় ফিরে গেলে, অর্থাৎ ওই যুদ্ধের সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভুখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলে এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সেখানে ফিরতে দিলে তারা ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কিন্তু, ইসরায়েল এ প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেয়। দখলদার শক্তিটি ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি ভূমিও ছাড়তে রাজি নয়।
হামাসের সাংগঠনিক কাঠামো, সমর্থন দেয় কারা
হামাসের প্রধান শাখা দুটি। এর একটি সাংস্কৃতিক, যার নাম দাওয়াহ। সামরিক শাখার নাম ইজ্জ আদদ্বীন আল-কাসসাম ব্রিগেডস।
হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান, এবং ইরান সমর্থিত সিরিয়ার সরকার ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। এই জোটের সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির ঘোর-বিরোধী।
গত কালকের আক্রমণ সম্পর্কে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'এ ঘটনা দখলদারিত্বের মুখে ফিলিস্তিনি জনগণের গভীর আস্থার প্রমাণ'।
গাজা ছাড়াও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের সমর্থকরা রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমাদের সমর্থক সরকার থাকলেও, সাধারণ জনগণের কাছে হামাসের গ্রহণযোগ্যতা আছে। ইতোমধ্যেই সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেন হামাসের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে এই আক্রমণকে 'বীরোচিত' ও 'গর্বের' বিষয় বলে অভিহিত করেছে। আরব লীগ ও জর্ডান বর্তমান সংঘাত শুরুর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের চালানো নিষ্ঠুরতাকে দায়ী করেছে। সৌদি আরব, মরক্কো এবং ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ দোসর মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসির সরকার অস্ত্র সম্বরণের আহ্বান জানিয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে আছে– যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মিশর ও জাপান।