পশ্চিমা নেতাদের সমর্থনে খুশি ইসরায়েল, আত্মরক্ষার নামে এ সমর্থন
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে গতকাল (রবিবার) ফোনালাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা। আলোচনার পর হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতি দেশগুলো সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং অন্যান্য নেতাদের উল্লেখ করে তেল আবিবের 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার' রয়েছে বলে জানানো হয়। একইসাথে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতির বিষয়টিকেও তুলে ধরেছে বিশ্ব পরাশক্তির এই দেশগুলো।
বিবৃতিতে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানসহ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া কিংবা ক্ষতিকারক সাদা ফসফরাস ব্যবহারের বিষয় নিয়ে কিছু বলা হয়নি। তাই পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের এই সমর্থন ইসরায়েলের নেতাদের জন্য বেশ খুশির ব্যাপার।
বিবৃতিতে অবশ্য হামাস কর্তৃক দুই জিম্মির মুক্তির বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এছাড়াও বাকি সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একইসাথে পশ্চিমা নেতারা গাজায় প্রথম পর্যায়ে পৌঁছানো ত্রাণ সহায়তার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এছাড়াও মানবিক প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবার নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে এই অঞ্চলের অংশীদারদের সাথে সমন্বয় অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।
এদিকে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ফের সতর্ক করা হয়েছে। তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল অবিলম্বে সামরিক হামলা বন্ধ না করলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। গতকাল (রবিবার) তেহরানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, "আমি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগীকে (ইসরায়েল) সতর্ক করে দিচ্ছি যে, তারা গাজায় অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বন্ধ না করলে যে কোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু সম্ভব। আর এতে করে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে'।"
এদিকে চলমান যুদ্ধের মাঝেই নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে আজ (সোমবার) ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আগামীকাল (মঙ্গলবার) ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও সমর্থন প্রদানে দেশটিতে সফর করেছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দুই সপ্তাহ ধরে চলমান এই সহিংসতায় প্রায় ৪,৬৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১,৮৭৩ জন শিশু, ১,১০১ জন নারী ও ১,৬৭৭ জন পুরুষ। আর সবমিলিয়ে আহত হয়েছে প্রায় ১৪,২৪৫ জন।
এদিকে ইরান মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ শুরু করেছে। আমিরআব্দুল্লাহিয়ান বলেন, "গাজায় আমরা যা দেখছি, সেটি ভুয়া ইসরায়েলি শাসকদের শুরু করা প্রক্সি যুদ্ধ, যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।" এ যুদ্ধ নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জাতি ও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমিরআব্দুল্লাহিয়ান আরও বলেন, "যুদ্ধের মধ্যে বাইডেনের ইসরায়েল সফর এবং হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারটা অত্যন্ত 'তিক্ত ও দুর্ভাগ্যজনক'।"