সিরিয়ায় ইরানের অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলা
সম্প্রতি সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ইরানের অস্ত্রগার লক্ষ্য করে বিমান হামলার দাবি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ (শুক্রবার) ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। খবর বিবিসির।
ইরাক সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত সিরিয়ার আবু কামাল শহরে হামলাটি করা হয়েছে বলে জানায় ওয়াশিংটন। জানা যায়, এফ-১৬ ফাইটার জেট ব্যবহার করে হামলাটি চালানো হয়েছিল। তবে মার্কিন এই বিমান হামলায় জানমালের ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
অন্যদিকে মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, সিরিয়ায় তাদের এই বিমান হামলার সাথে ইসরায়েলের কোনো যোগসূত্র নেই। এমনকি হামলার পূর্বে তেল আবিবের সাথে এই সম্পর্কিত কোনোরকম তথ্যও ভাগাভাগি করেনি বাইডেন প্রশাসন।
একইসাথে মার্কিন কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেন যে, সিরিয়ায় বিমান হামলার সাথে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনও এক বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেন, "সিরিয়ায় বিমান হামলার ঘটনা গাজায় যা ঘটছে সেটা থেকে 'পৃথক ও স্বতন্ত্র'। একইসাথে এই সংঘাত নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি।"
সিরিয়ার হামলার মাধ্যমে ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন পেন্টাগনের কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা ইরানের প্রতি মিলিশিয়া বাহিনীদের সাহায্যে করার ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।"
এদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পেছনে ইরানকে দায়ী করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় প্রায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে হামাসের হামলার পর গাজায় ক্রমাগত বিমান হামলা করছে তেল আবিব। এতে করে এখন পর্যন্ত ৭ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছে।
এই বিষয়ে গত রবিবার তেহরানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আমি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগীকে (ইসরায়েল) সতর্ক করে দিচ্ছি যে, তারা গাজায় অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বন্ধ না করলে যে কোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু সম্ভব। আর এতে করে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে'।"
ইরান মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ শুরু করেছে। গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখলে এর ফল খারাপ হবে বলেও দেশটির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আমিরআব্দুল্লাহিয়ান বলেন, "গাজায় আমরা যা দেখছি, সেটি ভুয়া ইসরায়েলি শাসকদের শুরু করা প্রক্সি যুদ্ধ, যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।" এ যুদ্ধ নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জাতি ও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমিরআব্দুল্লাহিয়ান আরও বলেন, "যুদ্ধের মধ্যে বাইডেনের ইসরায়েল সফর এবং হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারটা অত্যন্ত 'তিক্ত ও দুর্ভাগ্যজনক'।"
অন্যদিকে লয়েড অস্টিন গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত চায় না এবং আরও শত্রুতায় জড়িত হওয়ার কোনো প্রবণতা বা ইচ্ছাও নেই। তবে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরান-সমর্থিত হামলা অগ্রহণযোগ্য ও অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
লয়েড অস্টিন আরও বলেন, "ইরান নিজেদের উপস্থিতি লুকিয়ে রাখতে চায় ও আমাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব হামলায় তাদের ভূমিকা অস্বীকার করতে চায়। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না। মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরানের প্রক্সিদের হামলা অব্যাহত থাকলে আমাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবো না।"